নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: সারাদেশে গ্রাম পর্যায়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে পড়লেও গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার একটি মাটির রাস্তার চিত্র একেবারেই ভিন্ন। ঘাগুটিয়া ইউনিয়নের খিরাটি পশ্চিম পাড়া সুতিরকান্দার গ্রামের মধ্য দিয়ে চলে যাওয়া এই মাটির রাস্তাটি দেখে মনে হয় এখানে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি বহুকাল।
খিরাটি পশ্চিমপাড়া সুতিরকান্দা গ্রামে ৬ শতাধিক পরিবারের বসবাস। এই গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তা হচ্ছে এটি। এছাড়াও আশপাশের কয়েক গ্রামের লোকজন এবং স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা এই রাস্তা দিয়ে খিরাটি বাজার, স্থানীয় বঙ্গতাজ ডিগ্রি কলেজ, খিরাটি আব্দুল কুদ্দুস উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেন।
সুতিরকান্দার স্লুইসগেট হতে কাপাসিয়া-মনোহরদী আঞ্চলিক সড়কের খিরাটি সুতিরকান্দা উত্তরপাড়া সংযোগ সড়ক পর্যন্ত আনুমানিক ২.৭৫ কি.মি রাস্তা পুরোপুরিই বেহাল দশায়।
এদিকে কাগজে-কলমে ২৫ ফুট রাস্তা থাকলেও দৃশ্যমান মাত্র ১২ থেকে ১৫ ফুট। রাস্তাটির বেহাল দশায় জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুম এলে রাস্তাটি আর মোটেই চলাচলের উপযোগী থাকে না। কাঁচা মাটির এই রাস্তাটির বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় গর্ত এবং ভেঙে থাকার কারণে মানুষকে আতঙ্ক নিয়ে পথ চলতে হয়।
বর্ষার মৌসুমে শিশু ও বয়স্কদের জন্য এ রাস্তা চলাচল করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এই রাস্তা দিয়ে হেঁটে বিদ্যালয়ে যেতে পারে না।
স্থানীয় একজন প্রবীণ বললেন, রাস্তার কারণে এলাকার ছেলে-মেয়েদের বিয়ে-শাদী হয় না। কারণ, সবাই বলে আপনাদের এলাকায় রাস্তা নাই। আপনারা কেমন জায়গায় বসবাস করেন, এমন কাচা রাস্তা আর কোথাও দেখি না।
তিনি বলেন, দেশের আনাচে-কানাচের সড়কও এখন পাকা হয়। আমার বয়স ৮০ বছর হয়ে গেছে এখনো এ রাস্তাটি পাকা হলো না। মারা যাওয়ার আগে পাকা রাস্তা দেখবো কিনা জানিনা। আমাদের কষ্টের শেষ নেই!
রাস্তার বিষয়ে অ্যাড. আ স ম রাকিবুজ্জামান বলেন, আমার বয়স ৩৫ বছর। এই রাস্তাটা আমার দাদার আমলের। বর্ষার সময় মানুষ হাঁটতে পারেনা, চলতে পারেনা, কেউ অসুস্থ হলে একটা অ্যাম্বুলেন্স যে প্রবেশ করবে তারও কোনো ব্যবস্থা নেই। আমরা গ্রামবাসীরা চাঁদা তুলে রাস্তার সংস্কার করি। বহু জনপ্রতিনিধি আসছে আর গেছে, তারা কেবল আশ্বাস দিয়েছে কিন্তু রাস্তার কাজ হয়নি।
স্থানীয় কফিল উদ্দিন নামে একজন বলেন, আমি মোটরসাইকেল নিয়ে এই রাস্তার গর্তে পড়ে গিয়ে ছিটকে কমপক্ষে ১০ ফিট গভীরে পড়ে গিয়ে মেরুদণ্ডে আঘাত পাই। এখনো ঠিকমতো সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারিনা।
এছাড়াও রাতের আঁধারে বাজার থেকে বাড়িতে আসার সময় সাইকেলসহ গর্তে পড়ে গিয়ে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন মো. জসিম উদ্দিন নামে একজন। এতে তার একটি হাত ভেঙে যায়। আবার অটোরিকশাসহ গর্তে পড়ে গিয়ে চানু মিয়া নামে একজন গুরুতর আহত হয়েছেন।
এলাকাবাসীরা জানান, বিগত প্রায় ৫০ বছরে এই রাস্তায় কোনো ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ চোখে পড়েনি। কাঁচা মাটির এ রাস্তাটিতে স্বাধীনতার পর আর উন্নয়নের কোন ছোঁয়া লাগেনি। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এ রাস্তাটির সংস্কারের জন্য বরাদ্দ থাকলেও বরাদ্দের টাকা কোথায় যায় কেউ জানে না। ফলে রাস্তাটির অবস্থা দিনের পর দিন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে।
এলাকাবাসীরা আরো বলেন, নির্বাচন এলেই জনপ্রতিনিধিরা এ রাস্তাটি পাকাকরণের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু নির্বাচনের পর আর কেউ এই রাস্তার খোঁজ রাখেন না।
এ সময় অনেকেই আক্ষেপ করে বলেন, ‘জনপ্রতিনিধি বদলায় কিন্তু বদলায় না এ রাস্তার চিত্র’। শুধুমাত্র রাস্তার কারণেই এখানকার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল বাজারজাতকরণ নিয়েও পড়েন বিপাকে।
এই গ্রামের কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে, দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়েও চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না। অভিযোগ রয়েছে, সন্তান সম্ভবা একজন মহিলা এ রাস্তায় পা পিছলে পড়ে গিয়ে গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এছাড়াও অনেকের হাত-পা ভেঙে গেছে। গর্তে পড়ে গিয়ে মেরুদণ্ডের সমস্যায় ভুগছেন এলাকার অনেকেই।
এই গ্রামের শিক্ষার্থীরা জানান, বর্ষাকালে রাস্তায় কাদা থাকে। এই কারণে স্কুলে যেতেও অনেক কষ্ট হয়। এছাড়া বেশি বৃষ্টি হলে রাস্তায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। এসব গর্তে এই গ্রামের অনেকেই পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছেন। তাই আমাদের বাবা-মা আমাদেরকে বৃষ্টির সিজনে স্কুলে যেতে মানা করেন।
শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, আমাদের একটাই দাবি এই রাস্তাটি যেন দ্রুত সময়ে পাকাকরণ করা হয়।
এলাকার ভুক্তভোগী মানুষের প্রাণের দাবি, শত বছরের পুরনো এই রাস্তাটি পাকাকরণ করে চলাচলের উপযোগী করে দেওয়া হোক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ (হিরণ মোল্লা) জানান, রাস্তার টেন্ডার হয়ে গেছে। খুব শিগগিরই রাস্তার কাজ শুরু হবে বলে আশা করি। এই রাস্তার কাজ হলে এই এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি লাঘব হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।