জুমবাংলা ডেস্ক: কে ওই নারী? নিরাপত্তার চাদর ভেদ করে প্রধান ফটক পেরিয়ে কিভাবে কারাগারের ভেতরে ঢুকে পড়লেন তিনি? কারাগারের দায়িত্বে থাকা শীর্ষ কর্মকর্তাদের সামনেই প্রকাশ্যে কীভাবে একজন কয়েদির সঙ্গে আলিঙ্গনে মেতে উঠলেন মুখে মাস্ক পরিহিত ওই নারী?
করোনার এই সময় কারা কর্তৃপক্ষের কঠোর বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে হলমার্ক কেলেঙ্কারির অন্যতম নায়ক প্রতিষ্ঠানটির জিএম কারাবন্দি তুষার আহমেদ কীভাবে ওই নারীকে তার কাছে নিলেন? এমন প্রশ্ন এখন মানুষের মুখে মুখে।
গত ৬ জানুয়ারি গাজীপুরের কাশিমপুর কারগার-১ এর ভেতরে প্রধান ফটকে ঘটে যাওয়া ঘটনরা আংশিক ধরা পড়েছে সিসি ক্যামেরায়। বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলে সেটা প্রচারের পর তা ভাইরাল হয়ে যায়, শুরু হয় তোলপাড়।
কারাগারের দায়িত্বশীল একটি সূত্র বলছে, গত ৬ জানুয়ারি বেলা ১২টার দিকে ওই নারী কারাগারের ভেতর ঢোকেন। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বেরিয়ে যান। সিসি ক্যামেরায় পুরো সময়টা ধরা পড়েনি। এর মধ্যে রহস্য লুকিয়ে রয়েছে। একটি অ্যাম্বুলেন্সে চড়ে তিনি কারাফটকে আসার পর ডেপুটি জেলার গোলাম সাকলাইন ও সিনিয়র জেল সুপার রত্মা রায় ওই নারীকে অন্যান্য কর্মচারীদের সামনেই গ্রহণ করেন। এর জন্য মোটা অংকের টাকা লেনদেন হয়েছে বলেও সূত্রটি জানিয়েছে।
হলমার্ক কলেঙ্কারির মূলহোতা তানভীর মাহমুদের ভায়রা ও ওই মামলার আসামি কাশিমপুর কারাগার-১ এ বন্দি তুষার আহমেদের সঙ্গে অপরিচত ওই নারী বেশ কিছু সময় কাটান কারাফটকের ভেতরে। এ ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ার পরপরই কারা কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এছাড়া জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল কালামকে প্রধান করে পৃথক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন গত ১২ জানুয়ারি। ইতোমধ্যে সেই ডেপুটি জেলার গোলাম সাকলাইন ও সার্জেন্ট প্রশিক্ষক আবদুল বারীসহ ৩ জনকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
কয়েদি তুষার আহমেদ ও ওই নারীর সামনে থাকা সিনিয়র জেল সুপার রত্মা রায়ের সঙ্গে পুরো বিষয়টি নিয়ে বারবার কথা বলার চেষ্টা করলেও তিনি মুখ খুলেননি। রত্মা রায় সমকালকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে যেহেতু উচ্চ পর্যায়ের দু’টি তদন্ত চলছে, সুতরাং এই মুহূর্তে তিনি এ সম্পর্কে কিছু বলতে পারবেন না। ’
জেলা প্রশাসকের গঠন করা তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল কালাম বলেন, এ সপ্তাহেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। প্রাথমিকভাবে এটুকু বলা যায়, কয়েদির সঙ্গে একজন নারী দেখা করেছেন। সেটা সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে।
ভাইরাল হওয়া সিসি ক্যামেরার ওই ভিডিওতে দেখা যায়, অন্য দু’জন যুবকের সঙ্গে ওই নারী করাফটক পেরিয়ে অফিস কক্ষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। সময় তখন বেলা ১২টা ৫৬ মিনিট। এরপর কাশিমপুর কারাগার ১ এর ডেপুটি জেলার গোলাম সাকলাইন ও সিনিয়ির জেল সুপার রত্মা রায় ওই নারীকে গ্রহণ করছেন। ওই নারীর গায়ে বেগুনী রঙের সালোয়ার কামিজ ও মুখে মাস্ক। এসময় কালো টি-শার্ট ও কালো রঙের প্যান্ট পরা তুষার কারাগার থেকে ফটকের কাছে বাম পাশের একটি কক্ষে ঢুকে পড়েন।
ভিডিওতে দেখা যায়, ওই নারীও ঢুকেন পড়েন পাশের কক্ষে। এসময় বেরিয়ে যান সাকলায়েন। আট মিনিট পর ফেরেন তুষারকে নিয়ে। ১০ মিনিট পর অফিস ছাড়েন, বেরিয়ে যান সিনিয়র জেল সুপার রত্মা রায়। কিছু সময় তারা দু’জন ওই কক্ষে কাটানোর পর বেরিয়ে আসেন। কারাগারের কর্মচারি ও নিরাপত্তা কর্মীদেরকে সেখানে দেখা যায় । দু’জন হেঁটে বের হওয়ার সময় তুষার ওই নারীকে একবার প্রকাশ্যে জড়িয়েও ধরেন। এরপর আবার ওই কক্ষে ঢুকে পড়েন দু’জন। কড়া নিরাপত্তা বাইরে। সময় কটান পৌনে এক ঘণ্টা।
কারাগারের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, এটা সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েনি। শুধু এ অংশই নয়, অনেক কিছুই ধরা পড়েনি। সাড়ে ১২ টার দিকে ওই নারী ঢুকেন করাগারে, বেরিয়ে যান সাড়ে ৫টার দিকে- এমন তথ্য দিয়েছেন করাগারের একাধিক কর্তা।
তারা জানান, মোটা অংকের টাকা বিনিময় ছাড়া সম্ভব হয়নি এটা। দোষী যেই হোক তারই শাস্তি চান তারা।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর দোষী কর্মকতাদের শাস্তির জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে সুপারিশ করা হবে। ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, তদন্ত কমিটির সদস্যরা দফায় দফায় কারাগার পরিদর্শন করেছেন, কথা বলেছেন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সে সময় দায়িত্বে থাকা ৩ জনকে কারা কর্তৃপক্ষ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। সূত্র: সমকাল
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।