মো. আবদুল মজিদ মোল্লা: রাসুলুল্লাহ (সা.) অধীনদের প্রতি সদাচরণ ও তাদের অধিকার আদায়ের নির্দেশ প্রদানের পাশাপাশি মানুষের পারিবারিক বিষয় তুলে লজ্জা দেওয়ার নিন্দা করেছেন। বিশেষত কারো মা-বাবার দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা অবশ্যই পরিহারযোগ্য। কেননা তা পারস্পরিক সম্পর্ক ও সামাজিক শৃঙ্খলা নষ্টের অন্যতম কারণ।
মারুর (রহ.) বলেন, ‘আমি একবার রাবাজা নামক স্থানে আবু জার (রা.)-এর সঙ্গে দেখা করলাম। তখন তাঁর পরনে ছিল এক জোড়া কাপড় (লুঙ্গি ও চাদর) আর তাঁর ভৃত্যের পরনেও ছিল ঠিক একই ধরনের এক জোড়া কাপড়। আমি তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, একবার আমি জনৈক ব্যক্তিকে গালি দিয়েছিলাম এবং আমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছিলাম। তখন আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাকে বললেন, আবু জার, তুমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছ? তুমি তো এমন ব্যক্তি, তোমার মধ্যে এখনো অন্ধকার যুগের স্বভাব বিদ্যমান। জেনে রেখো, তোমাদের দাস-দাসী তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ তাআলা তাদের তোমাদের অধীন করেছেন। তাই যার ভাই তার অধীনে থাকবে, সে যেন নিজে যা খায় তাকে তা-ই খাওয়ায় এবং নিজে যা পরিধান করে, তাকেও তা-ই পরায়। তাদের ওপর এমন কাজ চাপিয়ে দিয়ো না, যা তাদের জন্য বেশি কষ্টদায়ক। যদি এমন কষ্টকর কাজ করতে দাও, তাহলে তোমরাও তাদের সে কাজে সহযোগিতা করবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩০)
জাহেলি যুগের স্বভাব : প্রাক ইসলামী যুগের শিরক ও কুফরের অন্ধকার চিন্তা, বিশ্বাস ও সেই অন্ধকার বিশ্বাস লালনকারীদের রীতি-নীতিকে ‘জাহেলিয়া’ বলে। ইসলামের মাধ্যমে আলোর সন্ধান পাওয়া মানুষ জীবনের সব ক্ষেত্রে জাহেলিয়াতের অন্ধকার সম্পর্কে সচেতন থাকবে। আকিদা-বিশ্বাসে তো বটেই, জীবনের সাধারণ কাজ-কর্মেও জাহেলিয়াতের অনুসরণ থেকে বেঁচে থাকবে। তাই ইমাম বুখারি (রহ.)-এর শিরোনাম ‘গুনাহ ও নাফরমানি জাহেলিয়াতের বিষয়’। অর্থাৎ যেসব বিষয় ইসলামে নিষিদ্ধ তবে তা সমাজে প্রচলিত। পবিত্র কোরআনে জাহেলি স্বভাব বর্জনের নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, ‘তোমরা নিজ ঘরে অবস্থান করবে। জাহেলি যুগের মতো নিজেদের প্রদর্শন করে বেড়াবে না।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৩৩)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, আবু জার গিফারি (রা.) তাকে ‘হে কালো মায়ের সন্তান’ বলে সম্বোধন করেছিলেন। লোকটির মা অনারবি ছিল। তবে লোকটি কে ছিল সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না। একজন মানুষের জন্ম-মৃত্যুর ক্ষেত্রে তার কোনো ভূমিকা থাকে না। তাই মা-বাবার ত্রুটি বর্ণনা করে কাউকে লজ্জিত করা উচিত নয়। তা ছাড়া ইসলামে সাদা-কালো, ধনী-দরিদ্র্য, ভাষা, বর্ণ ও আঞ্চলিকতার বিবেচনায় শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয় না। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) ‘হে কালো মায়ের সন্তান’ বলায় আবু জার (রা.)-কে সতর্ক করেছিলেন। আলোচ্য হাদিসের ভাষ্যানুসারে তিনি নিজেকে সংশোধন করেও নিয়েছিলেন। সুনানে আবি দাউদের বর্ণনায় (৫১৫৭) এসেছে, ‘লোকটির মা অনারবি ছিল এবং আমি তাকে তার মায়ের কথা বলে লজ্জিত করি।’।
পরিবার নিয়ে লজ্জা দেওয়া নিন্দনীয় : পরিবারের সঙ্গে মানুষের আবেগ ও আত্মসম্মানের প্রশ্ন জড়িত। কোনো মানুষকে যখন তার পরিবার নিয়ে লজ্জিত করা হয়, তখন সে অনেক বেশি আহত বোধ করে এবং পারিবারিক মর্যাদা রক্ষায় পাল্টা অভিযোগ ও নিন্দা বাক্য ছুড়ে দেয় প্রতিপক্ষের প্রতি। এ জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কবিরা গুনাহগুলোর একটি হলো নিজের মা-বাবাকে অভিশাপ করা।’ জিজ্ঞেস করা হলো, ‘আল্লাহর রাসুল, মানুষ নিজের মা-বাবাকে কিভাবে অভিশাপ করে?’ তিনি বলেন, ‘যখন সে অন্যের বাবাকে গালাগাল করে, তখন সে নিজের বাবাকেও গালাগাল করে থাকে। আর যে অন্যের মাকে গালি দেয়, বিনিময়ে সে তার মাকেও গালি দেয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৯৭৩)
আল্লাহ সবাইকে মন্দ স্বভাব পরিহারের তাওফিক দান করুন। আমিন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।