নিজেস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর : করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশের আইনগত বাধ্যবাধকতা এবং কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার গুরুতর অবহেলা নিয়ে মোহাম্মদ ছাত্তার মোল্লা নামের ঢাকা জজ কোর্টের এক আইনজীবি তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে আইনগত পর্যালোচনা করেছেন। ওই আইনজীবি রোববার (১৯ এপ্রিল) বিকেল ৫টার দিকে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাসটি পোষ্ট করেন। পাঠকের সুবিধার্থে স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
‘‘করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশের আইনগত বাধ্যবাধকতা এবং কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার গুরুতর অবহেলা; একটি আইনগত পর্যালোচনা
গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলা বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের আক্রমণে মারাত্মকভাবে ঝুকিপূর্ণ এলাকাসমূহের অন্যতম। কালীগঞ্জ উপজেলায় বিগত ১৮/০৪/২০২০ ইং তারিখ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা মোট ৪৩ জন (রিপোর্টেড)। তাছাড়া আক্রান্ত কিন্তু এখনো নমুনা পরীক্ষার আওতায় আসেনি এমন সংখ্যা নিশ্চয়ই আরো অনেক রয়েছে।
এমতাবস্থায় অতি উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন বা কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যথাযথভাবে কালীগঞ্জ উপজেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করছে না। বিশেষকরে আক্রান্তদের বাসস্থান, গ্রাম/মহল্লা বা এলাকার নাম সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশ করছে না।
একজন আইনজীবী তথা উপজেলায় বসবাসকারী সচেতন নাগরিক হিসেবে আইনের আলোকে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন বা কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার উপরোক্ত কর্মকান্ডের সঠিকতা/বৈধতা যাচাই করতে চাই।
সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ এর ৫(১)(গ) ধারা অনুযায়ী স্বাস্থ্য অধিদপ্তর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা মোকাবেলা এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ঝুঁকি হ্রাসকরণ, সচেতনতা বৃদ্ধি, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। উক্ত একই আইনের ১১(২) ধারা অনুযায়ী মহাপরিচালক বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারীর নিকট যদি প্রতীয়মান হয় যে, যথাযথভাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়া তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সংক্রামক রোগ সীমিত বা নির্মূল করা সম্ভব নহে, তাহা হইলে তিনি সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে বা সংক্রমিত স্থানে অন্য কোনো ব্যক্তির প্রবেশ নিষিদ্ধ, সীমিত বা নিয়ন্ত্রণ করিতে পারিবেন। আরো উল্লেখ্য যে, উক্ত আইনের ৩০ ধারার অর্পিত ক্ষমতাবলে উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষে উক্ত আইনের উদ্দেশ্য এবং কার্যাবলী সুসম্পন্ন করার দায়িত্ব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান/দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকতার উপর বর্তায়।
এমতাবস্থায়, করোনা ভাইরাসের মতো “প্রতিষেধক বিহীন” বৈশ্বিক মহামারী সংক্রামক রোগ সংক্রান্ত উদ্ভুত অবস্থা মোকাবেলা এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ঝুঁকি হ্রাসকরণ, সার্বিক গণসচেতনতা বৃদ্ধি, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ এবং নির্মূলের জন্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের বাসস্থান, গ্রাম/মহল্লা বা এলাকার নাম সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশ করা অতীব জরুরী এবং প্রয়োজনীয় একটি পদক্ষেপ। তাছাড়া যেহেতু তাৎক্ষণিকভাবে করোনা ভাইরাসের সংক্রামণ সীমিত বা নির্মূল করা সম্ভব নহে, তাই সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে বা সংক্রমিত স্থানে অন্য কোনো ব্যক্তির প্রবেশ নিষিদ্ধ, সীমিত বা নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের বাসস্থান, গ্রাম/মহল্লা বা এলাকার নাম সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশ করা অতীব জরুরী এবং প্রয়োজনীয় একটি পদক্ষেপ।
উক্ত সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ এর ২৪(১) ধারা অনুযায়ী যদি কোনো ব্যক্তি সংক্রামক জীবাণুর বিস্তার ঘটান বা বিস্তার ঘটিতে সহায়তা করেন, বা জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও অপর কোনো ব্যক্তি সংক্রমিত ব্যক্তি বা স্থাপনার সংস্পর্শে আসিবার সময় সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়টি তাহার নিকট গোপন করেন তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ এবং ২৪(২) ধারা অনুযায়ী যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনূর্ধ্ব ৬ (ছয়) মাস কারাদণ্ডে, বা অনূর্ধ্ব ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর প্রধান বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক কালীগঞ্জ উপজেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সুনির্দিষ্ট তথ্য জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও আক্রান্তদের বাসস্থান, গ্রাম/মহল্লা বা এলাকার নাম সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশ না করা বা গোপন করার ফলে অপর কোনো ব্যক্তি সংক্রমিত ব্যক্তি বা স্থাপনার সংস্পর্শে আসিবার অাসংঙ্কা তৈরী হয় যা সংক্রামক জীবাণুর বিস্তার ঘটাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করার অবকাশ/ঝুঁকি সৃষ্টি করে। উল্লেখিত অাইনের ২৪(১) ধারা অনুযায়ী কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর প্রধান বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার উক্ত কার্যক্রমকে অপরাধ হিসেবে ব্যাখ্যা করার পর্যাপ্ত উপাদান রয়েছে বলে আমি মনে করি যা উক্ত আইনের ২৪(২) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এছাড়াও তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ এর ৪ ধারা অনুযায়ী উক্ত আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে প্রত্যেক নাগরিকের তথ্য লাভের অধিকার থাকিবে এবং কোন নাগরিকের অনুরোধের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাহাকে তথ্য সরবরাহ করিতে বাধ্য থাকিবে৷ অধিকন্তু, উক্ত তথ্য অধিকার অাইন, ২০০৯ এর ৬(১) ধারা অনুযায়ী প্রত্যেক কর্তৃপক্ষ উহার গৃহীত সিদ্ধান্ত, কার্যক্রম কিংবা সম্পাদিত বা প্রস্তাবিত কর্মকান্ডের সকল তথ্য নাগরিকগণের নিকট সহজলভ্য হয়, এইরূপে সূচিবদ্ধ করিয়া প্রকাশ ও প্রচার করিবে এবং ৬(২) ধারা অনুযায়ী উপ-ধারা (১) এর অধীন তথ্য প্রকাশ ও প্রচারের ক্ষেত্রে কোন কর্তৃপক্ষ কোন তথ্য গোপন করিতে বা উহার সহজলভ্যতাকে সঙ্কুচিত করিতে পারিবে না।
উল্লেখিত প্রেক্ষাপট, আইন এবং আইনগত ব্যাখ্যার আলোক কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর প্রধান বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে বিনীত নিবেদন এই যে, অনতিবিলম্বে ইতোমধ্যে কালীগঞ্জ উপজেলায় যে সকল লোক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং ভবিষ্যতে যারা আক্রান্ত হবে তাদের বাসস্থান, গ্রাম/মহল্লা বা এলাকার নাম সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশ করার জন্য। অন্যথায় জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও আক্রান্তদের সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ না করা বা গোপন করার ফলে কালীগঞ্জ উপজেলায় করোনা ভাইরাসের মরণঘাতী বিস্তারের ঝুঁকির দায় আইন অনুযায়ী আপনি এড়াতে পারবেন না।
সদয় অবগতি- কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনকে সনিবন্ধ অনুরোধ উল্লেখিত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য’’।
বিনীত –
মোহাম্মদ ছাত্তার মোল্লা
এল.এল.বি. (সন্মান), এল.এল.এম. (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়)
অ্যাডভোকেট, ঢাকা জজ কোর্ট।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।