কালীগঞ্জে শাপলা বিক্রি করে চলছে অর্ধশতাধিক পরিবার

রফিক সরকার, গাজীপুর প্রতিনিধি: শুধু গ্রামেই নয়, শহরেও তরকারি হিসেবে শাপলার জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। গাজীপুরের কালীগঞ্জের প্রায় সর্বত্র, খাল, বিল, পুকুর ও ডোবায় শাপলা পাওয়া যায়। বিলপাড়ের অর্ধশতাধিক পরিবার সবজির চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি শাপলা বিক্রি করে কাটাচ্ছেন নিজেদের সংসারের দৈন দশাও।

প্রতি ১০০ গ্রাম শাপলার লতায় রয়েছে খনিজ পদার্থ ১.৩ গ্রাম, আঁশ ১.১ গ্রাম, ক্যালোরি-প্রোটিন ৩.১ গ্রাম, শর্করা ৩১.৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৭৬ মিলিগ্রাম। শাপলার ফল দিয়ে তৈরি হয় চমৎকার সুস্বাদু খৈইও।

আজ শনিবার (২৪ আগস্ট) উপজেলার বেলাই বিল পাড় ঘুরে এবং স্বাস্থ্য ও কৃষি বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

উপজেলার দুবার্টি গ্রামের ফারুক (৪২), খলিল (৩০), নুরুল ইসলাম (৪০) ও বেলায়েত (৪৫) টিউবয়েল বসানোর কাজ করেন। তারা জানান, বর্ষার ৬ মাস অন্য কোনও কাজ না থাকায় নিজেদের পেশা বদল করে বিলের শাপলা তুলে সংসার চালন তারা। বর্ষা মৌসুম এলে টিউবয়েল বসানোর কাজ মোটামোটি বন্ধই থাকে। কিন্তু তাই বলে কর্মব্যস্ত ওই মানুষগুলো বসে থাকতে নারাজ। বর্ষার সময় তারা তাদের পেশা বদল করে শাপলা উঠানোর কাজ করেন। আর তা স্থানীয় বাজার ও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরগুলোতে বিক্রি করে সংসারের প্রতিদিনের অন্ন জোগান দেন। শুধু তারা নয় বিল পাড়ের প্রায় অর্ধশতাধিক দরিদ্র পরিবারের মানুষ এই শাপলা তোলার কাজে নিয়োজিত। আর তাদের এ কাজে পরম বন্ধুর মতো সহযোগিতা করছে তাল গাছ দিয়ে তৈরি কোন্দা বা কাঠ দিয়ে তৈরি ডিঙ্গি নৌকা। এতে একদিকে নিজেদের সংসারের যাবতীয় চাহিদা মেটাচ্ছেন। অন্যদিকে বিলে জন্ম নিয়ে বিলেই পঁচে যাওয়া জাতীয় ফুল শাপলাকে সবজি হিসেবে করছেন অতি জনপ্রিয়।

পুষ্টি সমৃদ্ধ ফেলনা শাপলা সবজি হিসেবে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখার বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যেও ফেলেছে ইতিবাচক সাড়া। তারা বলছেন, শাপলা বিলে জম্মে বিলেই পঁচে যেত, সে শাপলা সবজি হিসেবে জনপ্রিয় ও দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে ভাবতে ভালই লাগছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ সাদেকুর রহমান আখন্দ জুমবাংলাকে বলেন, শাপলায় রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম। যা আলুর চেয়ে সাত গুণ বেশি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ আবু নাদির সিদ্দিকী জুমবাংলাকে বলেন, প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া আর্শিবাদ বিলের শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে। বিষয়টি ছোটভাবে দেখার সুযোগ নেই।

সবচেয়ে আশার কথা, যে শাপলা বিলে ফুটে বিলেই পঁচে শেষ হয়ে যেত। সেই শাপলা তুলে স্থায়ীয় প্রায় অর্ধশতাধিক দরিদ্র পরিবারে স্বাচ্ছন্দ ফিরেছে। তারাই আবার দেশের অর্থনীতিতে রাখছে অবদান। আর বিল পাড়ের ওই মানুষগুলো ফেলনা শাপলাকে জনপ্রিয় সবজি হিসেবে এগিয়ে নিতে রাখছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তাই দিবানিশি কাজ করে যাওয়া মানুষগুলো ভালো থাক সব সময় এমটাই প্রত্যাশা সর্বমহলের।