নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : দুর্নীতি, অনিয়ম, প্রশাসনিক অদক্ষতা, প্রকল্পের কাজ ভাগাভাগি নিয়ে মারামারি, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিধন নিয়ে নগরবাসির সীমাহীন ব্যর্থতার কারণে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এমনিতেই রুগ্ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তার উপর তিন মাস ধরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ‘অভিভাবকহীন’ অবস্থায়।
শপথের পর রুগ্ন চট্টগ্রাম সিটির মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা চিকিৎসক শাহাদাত হোসেন আগামীকাল (মঙ্গলবার) দায়িত্ব নিচ্ছেন। নতুন নগর পিতাকে বরণের জন্য প্রস্তুত নগর ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এ উপলক্ষে নগরীর বাদশা মিয়া রোডস্থ বাসার আশপাশেও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। রাস্তা নতুনভাবে পিচঢালা করা হয়েছে। দলীয় কর্মীরা লাগিয়েছেন ব্যানার, ফেস্টুন। একজন মেয়রের অভাব ঘুচতে যাচ্ছে শাহাদাতের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে।
এদিকে নতুন মেয়রকে বরণে সবপ্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। নগর ভবন জুড়ে তৈরি হয়েছে অনেকটা উৎসবের আমেজ।
সোমবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে নগরীর টাইগারপাসে চসিকের অস্থায়ী কার্যালয়ে দেখা যায়, কার্যালয়ের প্রবেশ পথে চসিকের পক্ষ থেকে মেয়র শাহাদাত হোসেনকে স্বাগত জানিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে তোরণ। এর আশেপাশে দলীয় নেতাকর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন লাগিয়েছেন। ভেতরে ঢুকতেই কার্যালয়ের ফটকের পাশে নতুন মেয়রকে শুভেচ্ছা জানিয়ে চসিকের কর্মচারীদের পক্ষ থেকে টাঙানো হয়েছে ডিজিটাল ব্যানার।
কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় চসিক মেয়রের রুম। রুমের পাশে ফলকে লেখা হয়েছে শাহাদাত হোসেনের নাম। রুমের মেঝেতে বিছানো হয়েছে নতুন ফ্লোরমেট। মেয়রের জন্য বসানো হয়েছে নতুন চেয়ার। বার্নিশ করে আসবাবপত্রগুলো করা হয়েছে ঝকঝকে। টেবিলের ওপর নতুন কম্পিউটার শোভা পাচ্ছে। মেয়রের অনার বোর্ডেও যুক্ত করা হয়েছে শাহাদাত হোসেনের নাম। নতুন মেয়রের আগমন উপলক্ষ্যে পুরো নগর ভবনেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে উদ্দীপনা দেখা গেছে।
এ বিষয়ে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম জানান, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে নতুন মেয়রকে গ্রহণ করতে সবাই উম্মুখ হয়ে আছেন। ‘কিছুদিন আমরা অভিভাবহীন ছিলাম। প্রশাসক ( চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ) থাকলেও তিনি ছিলেন অস্থায়ী। এখন আমরা স্থায়ীভাবে একজন অভিভাবক পাচ্ছি। এতে করপোরেশনের সার্বিক কর্মকান্ডে গতি ফিরে আসবে।
রবিবার (৩ নভেম্বর) চসিকের মেয়র হিসেবে শাহাদাত হোসেনকে শপথবাক্য পাঠ করান অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ। এরপর তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। মঙ্গলবার তিনি চট্টগ্রামে ফিরছেন। চসিকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সকালে ঢাকা থেকে ট্রেনে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওয়ানা দেবেন ডা. শাহাদাত হোসেন। বেলা ১২টার দিকে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে সংবর্ধনা দেবেন। সেখানে তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেবেন। দিনের বাকী সময় নানা ব্যস্ততার মধ্যে কাটাবেন বলে জানান তার ব্যক্তিগত সহকারি মোহাম্মদ মারুফুল হক।
তথ্যমতে, ২০২১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রেজাউল করিম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ষষ্ঠ নির্বাচিত পরিষদের প্রথম সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আইন অনুযায়ী, প্রথম সভার তারিখ থেকে পাঁচ বছর নির্বাচিত পরিষদের মেয়াদ। সে হিসেবে ২০২৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ওঠা এক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীকে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোটে বিজয়ী দেখিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করা হয়েছিল। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেনের প্রাপ্ত ভোট দেখানো হয়েছিল ৫২ হাজার ৪৮৯।
নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে ওই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে রেজাউল করিমসহ নয় জনকে বিবাদী করে মামলা করেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির তৎকালীন আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন। মামলা চলমান থাকা অবস্থায় মেয়রের দায়িত্ব পালন করছিলেন রেজাউল করিম চৌধুরী। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। অন্তর্বর্তী সরকার ১৯ আগস্ট দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের মেয়র অপসারণ করে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এর মধ্যে, গত ১ অক্টোবর শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে রায় দেন চট্টগ্রামের একটি আদালত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।