আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কাশ্মীরের সম্পত্তির মালিকানা কাশ্মীরিদের হাতে রাখার বিধান বাতিলের পর সেখানে জমি কেনার হিড়িক পড়েছে। ওই বিধান অনুযায়ী, নাগরিকতা, মৌলিক অধিকার ও সম্পত্তির মালিকানা প্রশ্নে কাশ্মীরিদের বিশেষাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছিল। ফলে বাইরের লোকজন সেখানে জমি কিনতে পারতেন না। এখন এটি বাতিলের পর অঞ্চলটিতে জমি কিনতে দালাল খুঁজতে শুরু করেছেন ভারতীয় নাগরিকরা। এমনকি বুধবার মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকেও সেখানে জমি কেনার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ওই জমিতে তারা পর্যটন রিসোর্ট নির্মাণে আগ্রহী। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ ১৮।
মোদি সরকার বাইরের লোকজনকে কাশ্মীরে জমি কেনার সুযোগ দেওয়ার এক মাসের মাথায় এ সিদ্ধান্ত নিলো মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকার। সমালোচকরা বলছেন, কাশ্মীরের জনসংখ্যার গঠন বদলে দেওয়া, তথা সেখানে মুসলমানদের সংখ্যালঘুতে পরিণত করতেই বাইরের লোকজনকে জমি কেনার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, ভারতের অন্যান্য স্থান থেকে হিন্দুরা যেন কাশ্মীরে জমি কিনে ও বসতি স্থাপন করে সেখানকার জনসংখ্যার গঠন বদলে দিতে পারে।
মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকার জানিয়েছে, দুইটি রিসোর্ট নির্মাণে কাশ্মীরে জমি কেনার পরিকল্পনা করছে সরকার। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রিসোর্টগুলো তৈরি করবে মহারাষ্ট্র ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন। এর একটি হবে কাশ্মীরের পাহালগাম এলাকায়। অন্যটি হবে লাদাখের লেহ এলাকায়। এর ফলে অমরনাথ যাত্রায় অংশগ্রহণ ও বিষ্ণু দেবী মন্দিরে যেতে আগ্রহীরা উপকৃত হবে।
এদিকে স্বায়ত্তশাসন ও বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর কাশ্মীরে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে স্থানীয়দের মারধর ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। সেখানকার কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছেন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক সাংবাদিক। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, তাদেরকে মোটা তার ও লাঠি দিয়ে মারধর এবং বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়েছে। নির্যাতিতরা ওই সাংবাদিককে ক্ষতচিহ্নগুলো দেখিয়েছেন। তবে ভারতীয় সেনাবাহিনী এই অভিযোগগুলোকে ‘ভিত্তিহীন ও প্রমাণসাপেক্ষ নয়’ বলে দাবি করেছে।
২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন ও বিশেষ অধিকার বাতিল করে অঞ্চলটিকে দুটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করে দিল্লি। ওই দিন সকাল থেকে কার্যত অচলাবস্থার মধ্যে নিমজ্জিত হয় পৃথিবীর ভূস্বর্গখ্যাত কাশ্মীর উপত্যকা। সেখানে কারফিউ জারি ও বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। অতিরিক্ত হাজার হাজার সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী ও অ্যাক্টিভিস্টসহ তিন সহস্রাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। কাশ্মীরের কারাগারগুলো ভরে যাওয়ায় অনেককে রাজ্যের বাইরের কারাগারে রাখা হয়েছে।
বিবিসি’র সাংবাদিক সামির হাশমি দক্ষিণ কাশ্মীরের অন্তত ৬টি গ্রামে ঘুরে দেখেছেন। ওই গ্রামগুলোতে গত কয়েক বছরে ভারতবিরোধী সশস্ত্র সংগ্রামের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হত। তিনি বলেন, ‘ওই গ্রামগুলোর সবকটার বাসিন্দাদের কাছ থেকেই নির্যাতনের একই ধরণের বক্তব্য শুনতে পেয়েছি।’ তবে রোগীদের ওই ক্ষতচিহ্নের বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। গ্রামবাসীরা সাংবাদিককে তাদের শরীরের ক্ষত দেখিয়ে দাবি করেছেন, যে নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের হাতেই নির্যাতনের শিকার হয়েছে তারা। আরেকটি গ্রামের বাসিন্দা জানায়, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পরপরই ভারতীয় সেনাবাহিনী বাড়ি তল্লাশি, ধরপাকড়, নির্যাতন শুরু করে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।