আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর গোটা ভারত জুড়েই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কাশ্মীরে ভয়ঙ্কর পরিবেশ সৃষ্টির সঙ্গে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে বসবাসকারী কাশ্মীরিদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসির সাংবাদিক অমিতাভ ভট্টশালী কলকাতায় অবস্থানরত কাশ্মীরিদের সাক্ষাৎকার নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন করেছেন। তার প্রতিবেদনটি সময় নিউজের পাঠকের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো:
ভারত শাসিত কাশ্মীর চতুর্থ দিনের মতো বাকি বিশ্ব থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। ভারতের পার্লামেন্টে জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা প্রত্যাহার করে নেওয়ার আগের দিন থেকেই সবরকম টেলিযোগাযোগ, ইন্টারনেট, কেবল টেলিভিশন – সব বন্ধ। কলকাতায় ব্যবসা বা পড়াশোনা করতে এসেছেন যেসব কাশ্মীরী, তাদের অনেকেই বলছেন এর আগে অনেক খারাপ পরিস্থিতি, অনেক সহিংসতা দেখেছেন তারা।
কিন্তু এরকম অবস্থা অভূতপূর্ব – কোনও যোগাযোগ নেই পরিবারের সঙ্গে, তারা কেমন আছেন, নিজের শহরে কী হচ্ছে – কিছুই জানতে পারছেন না দূর দেশে বসে।
‘অনেক কিছুই দেখেছি আমরা এতগুলো বছরে। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি একেবারে আলাদা। ভবিষ্যৎ যে কী হবে ভেবে কলিজা কেঁপে উঠছে আমার,’ বলছিলেন কলকাতার নিউ মার্কেট চত্বরের এক কাশ্মীরী শাল ব্যবসায়ী জাভেদ।
পদবীও যেমন বলতে চাইলেন না তিনি, তেমনই ছবি তুললে যদি কোনও ক্ষতি হয়, তাই তাতেও নিষেধ করলেন তিনি।
জাভেদের কথায়, ‘শেষবার যখন বাড়িতে কথা হয়েছিল, তখন কারফিউ জারি হয় নি। তবে সেদিনও সবাই একটা আশঙ্কার মধ্যে ছিল যে কিছু একটা হতে চলেছে। তারপর তো এই ঘটনা। শুধুই ফোনের দিকে তাকাচ্ছি, যদি যোগাযোগ করা যায় বাড়ির সঙ্গে। যদিও ভাল করেই জানি যে আপাতত ফোন আসবে না।’
ওই অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বেশ কিছু কাশ্মীরী শালের দোকান।
সেরকমই একটা দোকানে মোবাইল ফোনের দিকে তাকিয়ে শুকনো মুখে বসেছিলেন এক ব্যক্তি।
সাংবাদিক শুনে কথাই বলতে চাইলেন না।
শুধু এটুকুই বললেন, ‘বুঝতেই তো পারছেন পরিস্থিতি। কী হবে আর কথা বলে!’
একের পর এক কাশ্মীরী শালের দোকানে গিয়ে শুনতে হয়েছে প্রায় একই কথা।
ওই চত্বরেই আরেকটি কাশ্মীরী শালের দোকান মালিক তো নিজের নামটুকুও বলতে চাইলেন না।
তবে তিনি বললেন, ‘আমার বাড়ি শ্রীনগরে। সেখানে বাবা, মা, স্ত্রী — গোটা পরিবারই রয়েছে। শেষবার তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে রবিবার রাত সাড়ে এগারোটার দিকে। তখনই পরিবার জানিয়েছিল যে ফোন বোধহয় বন্ধ হয়ে যাবে। এরপরে কবে তারা আবার যোগাযোগ করতে পারবেন, তা অনিশ্চিত।’
তার পরিবার জানিয়েছিল যে ততক্ষণে প্রতিটা গলিতে, মহল্লায় নিরাপত্তা বাহিনীর পাহারা বসে গেছে। তারপর যে কতবার ফোন করার চেষ্টা করেছেন এই ব্যবসায়ী, তা গুনে শেষ করা যাবে না।
এই ব্যবসায়ীরা ছাড়াও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েতেও পড়তে এসেছেন বেশ কিছু কাশ্মীরী ছাত্র।
তাদেরও কোনও যোগাযোগ নেই বাড়ির সঙ্গে।
বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল ফারদীন খুরশিদ ভাটের সঙ্গে।
ভাটের কথায়, ‘যা পরিস্থিতি, তাতে সামাজিক মাধ্যমে খোলাখুলি কোনও কথা বলতে গেলেই ট্রল্ড হতে হবে। আরও অনেক কিছুই হতে পারে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে নিজের রাজ্য, নিজের মানুষদের পক্ষ নিয়ে মুখ খোলাটাই সব থেকে সহজ কাজ, যেটা আমরা করতে পারি।’
‘এখনও যদি মুখ না খুলি, তাহলে কাশ্মীরিদের হয়ে কে কথা বলবে? এতবড় একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তো কাশ্মীরের মানুষের সঙ্গে কথা বলা হলো না! কাউকে তো বলতে হবে আমার নিজের রাজ্যের মানুষের কথা!’
তিনিও যেমনটা বলছিলেন, ভবিষ্যৎ বেশ অন্ধকার। কী হবে কেউ জানে না। একদিকে রয়েছে ভয়, অন্যদিকে দুশ্চিন্তা যে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।