বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক: ২০০৭ এ যখন অ্যাপল এর কর্নধার স্টিভ জবস প্রথমবারের মতো আইফোনের ঘোষণা দেন তখন এর এটি মানুষের মনে সাড়া জাগিয়েছিল বটে। নকিয়ার সিম্বিয়ান স্মার্টফোনের জয়জয়কার ছিল তখন। পাশাপাশি এন্ড্রয়েড স্মার্টফোন ও এগিয়ে যেতে থাকে। তখনকার সময়ে আইফোন যুগান্তকারী কিছু ব্যাপার নিয়ে আসলেও এই ২০১৯ এ এসে কিন্তু নতুন উদ্ভাবন শুধুই অ্যাপল এর হাতেই সীমাবদ্ধ নেই।
স্যামসাং, সনি, নকিয়া কিংবা হালের অপো, ভিভো কিংবা শাওমিও নতুন নতুন প্রযুক্তি এনে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু তার পরেও একটা জিনিস নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন যে অন্যান্য কোম্পানি যেখানে বিভিন্ন বাজেটের অসংখ্য ফোন রিলিজ দিচ্ছে সেখানে অ্যাপল মাত্র বছরে তাদের আইফোনের দুই থেকে তিনটি ফোন রিলিজ দিয়েও ফোন বিক্রিতে অনেক এগিয়ে আছে। এর কারণ হলো তাদের কিছু বাঁধা কাস্টমার যারা কিছু নির্দিষ্ট কারণে আইফোনই ব্যবহার করেন এবং অন্য কোন প্লাটফর্ম কিংবা ব্র্যান্ড ব্যবহার করে শান্তি পান না।
তো চলুন দেখে নিই ঠিক কি কি কারণে কিছু মানুষ এত দাম ও সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও শুধুমাত্র আইফোনই ব্যবহার করেন।
১। সেরা অপটিমাইজেশনঃ
অন্যান্য ব্র্যান্ড এর এন্ড্রয়েড ফোন যেখানে ১২ জিবি পর্যন্ত র্যাম নিয়ে এসেছে সেখানে অ্যাপল ফ্ল্যাগশিপ আইফোন টেন এস ম্যাক্স এর র্যাম মাত্র ৪ জিবি। কিন্তু তার পরেও পারফর্মেন্স এর দিক থেকে প্রথম সারিতেই অবস্থান করছে। তো আইফোনের এই গতির রহস্য কি? আর কিছুই নয়, বরং সেই লেভেলের অপটিমাইজেশন। অ্যাপল বছরে মাত্র ২-৩ টি ফোন বানায় আর নিজেরাই এর জন্য সফটওয়্যার তৈরী করে। তাই তারা খুব সহজেই একটি নির্দিষ্ট ডিভাইসের জন্য সফটওয়্যারকে পারফেক্টলি অপ্টিমাইজ করে দেয়। তাই তুলনামূলক কম র্যাম নিয়েও গতির দৌড়ে আইফোনই সেরা।
২। আইওএস এর ছোঁয়াঃ
হ্যাঁ, এটা ঠিক যে অ্যাপলের আইওএস অপারেটিং সিস্টেম এন্ড্রয়েডের মতো এতোটা কাস্টমাইজেবল না। অনেক সিম্পল। কিন্তু এই সিমপ্লিসিটিই এর সবচেয়ে ভালো দিক। অনেকে অ্যাপল এর সফটওয়্যারকেই তাদের সেরা প্রোডাক্ট বলে থাকেন। আইওএস ও এর ব্যতিক্রম নয়। রেগুলার সফটওয়্যার আপডেট থেকে বাগ ফিক্স সবই গরম গরম পেয়ে যাবেন। তার উপরে অ্যাপল নিজেরাই এই সফটওয়্যার ডেভেলপ করে বলে অনেক পুরনো আইফোন ব্যবহার করেও লেটেস্ট ফিচারগুলোওথেকে বঞ্চিত হবেন না। এবং তাও যদি আপনারা কাস্টমাইজেশন ফ্রিক হোন তাহলে জেইলব্রেক অপশন আছে আপনাদের জন্য কিন্তু এতে আপনারা ওয়ার্যান্টি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন।
৩। সহজ সরল ইউআইঃ
এন্ড্রয়েডের মতো আইফোনেও অনেক ফিচার আছে। তবে আইওএস এর ইউজার ইন্টারফেসে কোন অপ্রয়োজনীয় কাস্টমাইজেশন কিংবা ফিচার দিয়ে ভর্তি করা হয় নি। তাছাড়া পুরো ইউজার ইন্টারফেসই অনেকটা “সিম্পলের মধ্যে গর্জিয়াস” টাইপের। সবমিলিয়ে বাচ্চা থেকে বুড়ো সবাই খুব সহজেই এর ইউজার ইন্টারফেসে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।
৪। সেরা সব অ্যাপঃ
প্রায় সব কিছুর মোবাইল অ্যাপই আইওএস ও এন্ড্রয়েড উভয় প্লাটফর্মের জন্যই আছে। কিন্তু আইওএস ব্যবহারকারীরা উপরি পাওনা হিসেবে কিছু অ্যাপ পায় যেগুলো এন্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের জন্য নেই। আসলে অ্যাপল এর ডেভেলপমেন্ট এনভাইরনমেন্ট খুবই ব্যবহারবান্ধব হওয়াতে বাইরের ডেভেলপাররা আইওএস এর জন্য অ্যাপ বানাতেই বেশি পছন্দ করেন। তাছাড়া আইওএস এ অ্যাপ স্টোর ছাড়া সহজে অ্যাপ সাইডলোড করা যায় না বলে পেইড অ্যাপগুলো ক্র্যাক করে ব্যবহার করার সুযোগ নেই। তাই আইফোনের জন্য অ্যাপ বানিয়ে ডেভেলপারদের লাভও বেশি। খেয়াল করে দেখেছেন নিশ্চয়ই যে ফেসবুক কিংবা ইন্সটাগ্রাম এর মতো অ্যাপগুলোর নতুন সব ফিচার আইফোন ব্যবহারকারীরাই আগে পায়।
৫। সিকিউরিটিঃ
আইফোন ব্যবহারকারীদের সিকিউরিটির ব্যাপারে অ্যাপল বরাবরই সতর্ক। আইফোনগুলোর খুব ভালোভাবে এনক্রিপ্ট করে রাখতে পারবেন। যার ফলে চোর ফোন নিয়ে গেলে ফোন রিসেট দিয়েও শত চেষ্টা করেও আর অনলাইনে ব্যবহার করতে পারবে না। এন্ড্রয়েডে অনেক কাস্টমাইজেশন ও ফ্লেক্সিবিলিটি থাকায় ভাইরাস ও ম্যালওয়ার সহজেই আক্রমণ করে। কিন্তু আইফোনে সিস্টেম লেভেলে অনেক রেস্ট্রিকশন থাকাতে ম্যালওয়ার প্রবেশ অনেকটা অসম্ভবের কাতারেই পড়ে।
৬। অ্যাপল ইকোসিস্টেমঃ
যারা অ্যাপলপ্রেমী তারা দেখা যায় একসাথে অ্যাপল এর অনেক প্রোডাক্ট ব্যবহার করেন। ম্যাকবুক, অ্যাপল ওয়াচ, আইপ্যাড কিংবা অ্যাপল টিভি ইত্যাদি যে কোন ডিভাইসগুলো একে অপরের সাথে খুব ভালোভাবে সমন্বয় সাধন করে আপনাকে খুব ভালো একটি এক্সপেরিয়েন্স দিবে। ইউরোপ-আমেরিকা তে অ্যাপল এর গ্যাজেট সহজলভ্য হওয়াতে এই ব্যাপারটা বেশি দেখা যায়। তাই অনেকে এই অ্যাপল ইকোসিস্টেমের চক্র থেকে বের না হতে পারার কারণে অন্যান্য ব্র্যান্ডের দিকে আর তাকাতেই চান না। অ্যাপল ডিভাইসগুলোর এই ইকোসিস্টেম প্রফেশনালদের প্রোডাক্টিভিটি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। স্যামস্যাং, হুয়াওয়ের মতো কোম্পানিগুলো নিজেদের এরকম ইকোসিস্টেম ডেভেলপ করতে কাজ করছে কিন্তু অ্যাপল এদিক থেকে অনেক এগিয়ে।
৭। বিক্রয়োত্তর সেবাঃ
প্রায় সব মোবাইল ফোন কোম্পানিই ওয়ারেন্টি দেয়, কিন্তু অ্যাপল এর বিক্রয়োত্তর সেবা অন্য লেভেলের। হার্ডওয়ার কিংবা সফটওয়ার রিলেটেড যেকোন সমস্যার সমাধান আপনি খুব সহজেই অ্যাপল থেকে পাবেন। এমনকি আপনার পুরাতন আইফোন নিয়ে কিছু টাকার বিনিময়ে তারা আপনাকে লেটেস্ট আইফোন নেয়ার সুযোগও দিবে। তাছাড়া সারা পৃথিবীজুড়ে আইফোন এর মডেল লিমিটেড কিন্তু ব্যবহারকারী অসংখ্য হওয়াতে অনলাইন কম্যুনিটি থেকেও ভালো সাপোর্ট পাবেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।