মো. শামীম হোসেন বাবু, কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধি: নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ অভিযানে ধীরগতি এবং সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান ক্রয়ের অভিযোগ উঠেছে। ফলে ধান উৎপাদনকারী প্রকৃত কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এর পাশাপাশি কৃষকদের জন্য দেয়া সরকারের প্রণোদনা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা।
অপর দিকে ইউপি সদস্য, ধান ব্যবসায়ী, স্থানীয় ও দলীয় নেতাকর্মীরা কৃষকদের মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে তাদের কৃষি কার্ড, ভোটার আইডি কার্ড ও ছবি নিয়ে ব্যংকে জাল স্বাক্ষর দিয়ে একাউন্ট খোলে খাদ্য গুদামে কৃষকের নামে ধান দিয়ে বিল উত্তোলন করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ১৮ হাজার ৭৩০ জন কৃষক ১১ হাজার ২ শত হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করে। এবারে আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে এবং ফলন ভালো হওয়ায় ১১ হাজার ২ শত হেক্টর জমিতে ৫০ হাজার ৭০৯ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়। কিন্তু ফলন অনুযায়ী ধানের বাজার কম থাকার কারণে সরকার ২৬ টাকা কেজি দরে কিশোরগঞ্জ উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ৭২৯ জন কৃষকের (প্রত্যেক কৃষক ৪৮০ কেজি করে) কাছে ৩৫০ মেট্রিক টন এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ১২১৬ জন কৃষকের কাছ থেকে ৫৮৪ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করার জন্য বরাদ্দ দেয়। বরাদ্দ অনুযায়ী প্রথম পর্যায়ে উপজেলা প্রশাসন কৃষি অফিসের মাধ্যমে কৃষকদের তালিকা করে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করে ধান সংগ্রহ শুরু করে। এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে গত ৯ জুলাই উপজেলা পরিষদ হলরুমে লটারির মাধ্যমে ১ হাজার ২১৬ জন কৃষক নির্বাচন করে।
উপজেলা খাদ্য গুদাম সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ মে থেকে কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হলেও ২৩ জুলাই মঙ্গলবার বেলা ১২টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত সর্বমোট ৫৯৭ জন কৃষকের কাছ থেকে ২৮৬ দশমিক ৭২০ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করেছে খাদ্য অধিদপ্তর।
সরজমিন ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৬ জুলাই মাগুড়া ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের উত্তরপাড়া গ্রামের একরামুল হকের ছেলে জাহেদুল হক সোনালী ব্যাংকের একাউন্ট নম্বর ৭৯৪৩ কৃষক পরিচিতি নম্বর ১৩২০ একই ওয়ার্ডের মনজের আলীর ছেলে আওলাদ হোসেন ব্যাংক একাউন্ট নম্বর ৭৯৪২ কৃষক পরিচিতি নম্বর ০৮৬২ তাদের নামে ৪৮০ কেজি করে ধান ক্রয় দেখিয়ে সোনালী ব্যাংক কিশোরগঞ্জ শাখা থেকে বিল উত্তোলন করা হয়েছে। কিন্তু মজার বিষয় হলো কৃষক জানে না তাদের নামে ধান ক্রয় দেখিয়ে বিল উত্তোলনের কথা।
এ বিষয়ে কৃষক জাহেদুল হক ও আওলাদ হোসেন জুমবাংলাকে জানান, আমাদের নামে খাদ্য গুদামে ধান ঢুকানো হয়েছে এই প্রথম আপনার কাছ থেকে জানলাম। তারা অভিযোগ করে বলেন, গত এক মাস আগে আশেদুল ইসলাম নামে আমার এক প্রতিবেশি সরকারি অনুদান দেওয়ার কথা বলে আমাদের কাছ থেকে ভোটার আইডি কার্ড ও কৃষক পরিচিত কার্ড নিয়ে যান।
মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) বেলা ১১টার সময় খাদ্য গুদামে গিয়ে জানা যায়, লটারির মাধ্যমে পুটিমারী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারপাড়া গ্রামের নির্বাচিত কৃষক মজিবর রহমান কৃষি ব্যাংকের একাউন্ট নম্বর ৮৩ কৃষক পরিচিতি নম্বর ০০৩০, সহিদুল হক ব্যাংক একাউন্ট নম্বর ৮৪ কৃষক পরিচিতি নম্বর ০০১৪, জবানুল্লা ব্যাংক একাউন্ট নম্বর ৮১ কৃষক পরিচিতি নম্বর ০০২১ সহ মোট ৮ জন কৃষকের নামে ৪৮০ কেজি করে ধান ক্রয় দেখানো হয়েছে।
এ বিষয়ে কৃষকদের সাথে কথা বললে তারা অভিযোগ করে বলেন, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার রশিদ মিয়া আমাদেরকে সরকারি অনুদান দেওয়ার কথা বলে আমাদের আইডি কার্ড, কৃষি কার্ড ও ছবি নিয়ে গেছে। এ বিষয়ে তিনি কাউকে কোন কিছু বলতে নিষেধ করেছেন। কৃষি ব্যাংকে তাদের নামে একাউন্ট এবং খাদ্য গুদামে ধান ঢুকানোর বিষয়ে তারা কিছু জানেন না।
পুটিমারী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার রশিদ মিয়ার সাথে কথা বললে তিনি সব কিছু স্বীকার করে বলেন, ওই কৃষকরা আগেই তাদের ধান বিক্রি করে দিয়েছে। যাদের ধান ছিল তাদেরটা আমি গুলজার রহমান নামে এক ব্যাক্তির মাধ্যমে ক্রয় করার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন জুমবাংলাকে বলেন, গোলজার রহমান নামে এক ব্যাক্তি ওই আটজন কৃষকের ভোটার আইডি কার্ড, কৃষক পরিচিতি কার্ডসহ ধান নিয়ে খাদ্য গুদামে আসেন, কিন্তু কৃষক না আসায় ওই ধান গুদামে ঢুকাতে চাইনি। বৃষ্টির কারণে ধান ভিজে যাবার আশংকায় ওই ধান গুদামের গলিতে রাখা হয়েছে। এখনো বিল ছাড় দেওয়া হয় নাই।
কিশোরগঞ্জ উপজেলা শাখা কৃষি ব্যাংকের ম্যানেজার আফজালুল হক চৌধুরী জুমবাংলাকে বলেন, কয়েকদিন আগে কৃষক ছাড়া বিল দিতে না চাওয়ায় এক রাজনৈতিক নেতার হাতে লাঞ্চিত হয়েছি। তবে তিনি ওই রাজনৈতিক নেতার নাম বলেননি।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সোহেল আহম্মেদ জুমবাংলাকে বলেন, সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের জন্য লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করা হয়েছে। এখানে অনিয়মের কোনও সুযোগ নেই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল কালাম আজাদ জুমবাংলাকে বলেন, সরকারিভাবে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয়ে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য উপজেলা কৃষি অফিসের কাছ থেকে কৃষকদের তালিকা নিয়ে লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করা হয়েছে। যদি কোনও কৃষকের নাম দিয়ে অন্য কেউ ধান দিয়ে থাকে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।