কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধি: প্রবল বর্ষন ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে চারালকাটা ও ধাইজান নদীতে পানি বাড়তে শুরু করায় কিশোরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। এতে বসতভিটা হারানোর পাশাপাশি ফসলি জমি হারাচ্ছেন নদীর তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেই।
আজ সরেজমিনে দেখা যায়, নদী ভাঙনে উপজেলার ১টি ব্রীজ, ২টি রাস্তা, ১টি এতিমখানা-মাদ্রাসা, ২টি মসজিদসহ প্রায় ৬ শতাধিক বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে আছে।
কিশোরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের কেশবা তেলীপাড়া গ্রামে নদীভাঙনে যেকোন মুহূর্তে বিলীন যেতে পারে এখানকার ৫০টি পরিবারের ঘরবাড়ি ও বসতভিটা। এ গ্রামে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে আরও ১০০টি বাড়ি। পার্শ্ববর্তী গ্রাম জুগিপাড়ায় নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে ৬০টি ঘর বাড়ি। একই ইউনিয়নের রুপালী কেশবা গ্রামে আশরাফুল উলুম মাদ্রাসা-এতিমখানাসহ ৪০টি ঘর বাড়ি নদী ভাঙনের হুমকীতে পড়েছে । কেশবা ময়দানপাড়া গ্রামে ঈদগাহ্ মাঠসহ ১০০টি বাড়িও পড়েছে নদী ভাঙনের কবলে। গদা বজলার মেম্বারের বাড়ির সামনে বড়ভিটা-কিশোরগঞ্জ পাঁকা রাস্তা, সংলগ্ন মসজিদসহ ৪০টি বাড়িও ঝুঁকির মধ্যে আছে।
বড়ভিটা-কিশোরগঞ্জ রাস্তাটি ভেঙ্গে গেলে বড়ভিটা ইউনিয়নের সাথে কিশোরগঞ্জ উপজেলার যোগাযোগ অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
এদিকে চাঁদখানা ইউনিয়নের সরঞ্জাবাড়ী গ্রামে সরঞ্জাবাড়ী পুরাতন জামে মসজিদের কাছাকাছি ভাঙন আসায় মসজিদটিসহ ১০টি বাড়ি নদীগর্ভে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। পার্শ্ববর্তী অবস্থিত সরঞ্জাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও হুমকির মুখে আছে। একই ইউনিয়নের দক্ষিণ চাঁদখানা চাড়ালকাটা নদীর উপরে সারোভাসা ব্রীজের গোড়াসহ রাস্তাটি ভাঙণের হুমকির মুখে পড়েছে। যেকোন মুহূর্তে রাস্তাটি ভেঙ্গে যেতে পারে। নদীগর্ভে ব্রীজের গোড়াসহ রাস্তাটি বিলীন হয়ে গেলে চাঁদখানা ইউনিয়নের কয়েক হাজার লোকের কেল্লাবাড়ী ও তারাগঞ্জের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে। এছাড়া ওই গ্রামের ২০০টি বাড়িও পড়েছে ভাঙনের হুমকীতে।
সরঞ্জাবাড়ী গ্রামে নদীভাঙন মসজিদের কাছাকাছি আসায় এলাকাবাসী নিজেরাই বাঁশ দিয়ে পানির গতিপথ পরিবর্তন করায় ভাঙন সাময়িক বন্ধ করা গেছে। তারা জানান, সরঞ্জাবাড়ী পুরাতন জামে মসজিদ ভয়াবহ হুমকিতে রয়েছে।
কিশোরগঞ্জ সদর ইউপির তেলীপাড়া গ্রামের আব্দুল মজিদ জানান, ‘আমার ১০ শতক জমি ছিল। ইতোমধ্যে ৯ শতক জমি নদীগর্ভে গেছে। অবশিষ্ট ১ শতক জমির উপর বাড়ি আছে। সেটিও নদীতে গেলে আমার বসবাস করার কোনও জায়গায় থাকবে না।’
চাঁদখানা ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজার রহমান হাফি জানান, ‘সারোভাসা ব্রীজের গোড়াসহ চাঁদখানা ইউনিয়েনের সাথে যোগাযোগের রাস্তাটি নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে। ভাঙন ব্রীজের গোড়ার কাছাকাছি চলে এসেছে। এছাড়া এ গ্রামের ২০০টি বাড়ি নদী ভাঙনে নদীগর্ভে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।’
নদীভাঙন এলাকাগুলো ইতোমধ্যে পরিদর্শন করেছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ্ আবুল কালাম বারী পাইলট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল কালাম আজাদ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল কালাম আজাদ জানান, ‘নদীভাঙনের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসডি মোফাখ্খারুল সাহেব আমাদের সাথে সব এলাকা দেখেছেন। তাদেরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে।’
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ্ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ নদীভাঙন থেকে রাস্তা, ব্রীজ, প্রতিষ্ঠান, মসজিদসহ ঝুঁকিপূর্ণ ঘর-বাড়ি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হয়েছে।’
সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসডি মোফাখখারুল ইসলাম নদী ভাঙনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘নদী ভাঙন এলাকাগুলো পরিদর্শন করে ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
খুব শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।