শেষ হলো চিলড্রেন রিসার্চ ফান্ড। শিশু-কিশোরদের বিজ্ঞান গবেষণায় আগ্রহী করতে আয়োজিত হয় এটি। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ২০০-এর বেশি শিক্ষার্থী এ প্রকল্পে গবেষণাপত্র জমা দেয়। সেখান থেকে চূড়ান্তভাবে বাছাই করা হয়েছে পাঁচজনকে।
বিজয়ী শিক্ষার্থীরা হলো হলিক্রস গার্লস হাই স্কুলের প্রত্যাশা রায়, ড. খাস্তগীর গভর্নমেন্ট গার্লস হাইস্কুলের অপূর্বা চৌধুরী, সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের জয়ীতা রায়, সানিডেল স্কুলের আবরার জাহীন সুহাম এবং রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের নাহিয়ান পারিন ইফার।
ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এই উদ্যোগে অংশ নেয়। ফিজিক্যাল সায়েন্স বা ভৌতবিজ্ঞান, প্রাণিবিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও রোবোটিকস, শিক্ষা, কৃষি ও পরিবেশ এবং আবহাওয়াবিষয়ক গবেষণাপত্র জমা দেয় শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয় ৬০ জনকে। বাছাইকৃতরা দুটি কর্মশালায় অংশ নিয়ে গবেষণা প্রস্তাবনা লেখা শেখে। সেখান থেকে চূড়ান্তভাবে বাছাই করা হয় সেরা ৫ জনকে। টানা ৩ মাস তারা গবেষণা করে চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছেছে।
প্রত্যাশা রায়ের গবেষণায় বিষয় ‘ক্যাকটাস লেদার’। সে গবেষণা করে সফলভাবে ক্যাকটাস থেকে চামড়া উৎপাদন করতে পেরেছে। যদিও তা সাধারণ প্রাণিজ চামড়ার মতো টেকসই হয়নি, তবে এ নিয়ে আরও গবেষণা করলে এটি প্রাণিজ চামড়ার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। অপূর্বা চৌধুরী গবেষণা করেছে আয়োডিনের ওপর তাপমাত্রার প্রভাব নিয়ে। বাংলাদেশের ১৩টি ব্র্যান্ডের লবণ নিয়ে সে পরীক্ষা করেছে। পরীক্ষা থেকে পাওয়া গেছে, তাপমাত্রা বাড়লে আয়োডিনের পরিমাণ কমে এবং এর গুণগত মান ঠিক থাকে না। রান্নার পর যে আয়োডিন অবশিষ্ট থাকে, তা শরীরের চাহিদা ভালোভাবে মেটাতে পারে না।
জয়ীতা রায় বুড়িগঙ্গা নদীর পানির গুণগত মান পরীক্ষা করে দেখেছে। বুড়িগঙ্গার তিন জায়গা থেকে পানি নিয়ে পানির মান ও উপাদান নিয়ে গবেষণা করেছে। গবেষণায় পাওয়া গেছে, তিন জায়গার পানিই অতিমাত্রায় দূষিত। বুড়িগঙ্গার পানির অম্লতা ও পিএইচের মান অতিরিক্ত বেশি। তবে ওয়াজঘাট ও হাজারীবাগের পানি পোস্তগোলার পানির তুলনায় কম দূষিত। কারণ, এসব জায়গার পানির অম্লতা এবং পিএইচের মান পোস্তগোলার পানির চেয়ে কম।
কোভিডের পর গণিত নিয়ে শিক্ষার্থীদের যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে, তা নিয়ে গবেষণা করেছে আবরার জাহীন সুহাম। করোনা-পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীরা গণিতকে দেখছে ভয়ের চোখে। স্কুলশিক্ষার্থীদের গণিত সমস্যা সমাধানে নানা সমস্যা দেখা গেছে। তাদের বেসিক বা মূল বিষয়গুলোর ধারণায়ও রয়েছে ঘাটতি। জরিপের মাধ্যমে এ ঘাটতির কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে সে। আবরার দেখিয়েছে, করোনাকালীন সময়ে অনলাইন ক্লাসে মনোযোগের অভাবে এই ঘাটতি রয়ে গেছে।
নাহিয়ান পারিন ইফার গবেষণার বিষয় নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশের সৌরকোষগুলোর কর্মদক্ষতা মূল্যায়ন। সৌরকোষের সাহায্যে সূর্যের আলো বিদ্যুৎ শক্তিতে রুপান্তর করা যায়। সে সাভারে গবেষণা করে এসব সৌরকোষের কর্মদক্ষতা এবং তা দিয়ে কতটুকু নবায়নযোগ্য শক্তি বানানো যাবে, তা বের করেছে।
গত বছরের ধারাবাহিকতায় এ বছরও শুরু হয়েছে চিলড্রেন রিসার্চ ফান্ডের দ্বিতীয় পর্ব। ফান্ডের জন্য শিক্ষার্থীদের একটি গবেষণা প্রস্তাব জমা দিতে হবে নির্ধারিত লিঙ্কে। প্রস্তাবনা জমা দেওয়ার সময় ১৫ জানুয়ারি। প্রয়োজনীয় সব তথ্য পাওয়া যাবে মাকসুদুল আলম গবেষণাগার বা ম্যাসল্যাবের ওয়েবসাইটে। নির্দেশনা ও আবেদনের নিয়মাবলি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে দেখুন: maslab.org/crf। বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি (এসপিএসবি) ও মাকসুদুল আলম বিজ্ঞানাগার (ম্যাসল্যাব) যৌথভাবে এ প্রকল্প আয়োজন করছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।