জুমবাংলা ডেস্ক : রাজধানী ঢাকা এবং দেশের বিভিন্ন থানার পুলিশ ফাঁড়ি থেকে বেহাত হওয়া অস্ত্র এখন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের হাতে চলে গেছে। এসব অস্ত্র ব্যবহার করে যে কোনো সময় বড় ধরনের অপরাধ, ডাকাতি, হত্যাকাণ্ড এবং অস্থিরতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা। রাজধানীর থানাগুলো থেকে এক হাজারের বেশি আগ্নেয়াস্ত্র দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে, এবং বেশিরভাগই পেশাদার অপরাধীদের কাছে চলে যাচ্ছে। কিছু অস্ত্র সন্ত্রাসীদের কাছে বিক্রির চেষ্টা করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বেহাত হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের জন্য দেশব্যাপী যৌথ অভিযান শুরু করেছে। এই ২০ দিনে মাত্র ২১৬টি অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, এবং ৯২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অথচ থানাগুলো থেকে মোট ৫,৮১৮টি অস্ত্র বেহাত হয়েছে। এর মধ্যে ৩,৯৩৩টি অস্ত্র ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে উদ্ধার বা স্বেচ্ছায় থানায় জমা দেওয়া হয়েছে। ৪ সেপ্টেম্বরের পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে কিছু অস্ত্র উদ্ধার হলেও অধিকাংশ বেহাত অস্ত্র এখনও উদ্ধার হয়নি।
পুলিশের বিশেষ শাখার একজন ডিআইজি জানান, “আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লুণ্ঠিত অস্ত্রের বড় অংশ এখন কিশোর গ্যাংয়ের হাতে। এসব অস্ত্র নিজেদের কাছে রাখার জন্য যারা গ্রেফতার হয়েছেন, তাদের বয়স ১৬ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। ভবিষ্যতে এসব অস্ত্র ব্যবহার করে ডাকাতি, খুনসহ বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।”
“লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার না করা আইনশৃঙ্খলার জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে”
অপরাধ বিশ্লেষক ও সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নূরুল হুদা
কিশোর গ্যাংয়ের হাতে থাকা অস্ত্র উদ্ধারে কার্যক্রম চলমান আছে। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল মুনিম ফেরদৌস বলেন, “আমাদের গোয়েন্দা ইউনিট ও বিভিন্ন ইউনিট লুণ্ঠিত অস্ত্র শনাক্ত ও উদ্ধারে কাজ করছে। আমরা গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করছি।”
সম্প্রতি বিভিন্ন থানার অস্ত্র লুণ্ঠনের ঘটনায় যারা গ্রেফতার হয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই কিশোর। তবে তাদের সংযোগ ও অস্ত্রের মজুত সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এখনও বিশ্লেষণ করা হয়নি।
এছাড়া, ৫ আগস্ট গণভবন থেকে ৩২টি অত্যাধুনিক অস্ত্র বেহাত হয়েছে, যার মধ্যে এসএমজি, অ্যাসল্ট রাইফেল, স্নাইপার রাইফেল ও গ্রেনেড অন্তর্ভুক্ত। এখনও এসব অস্ত্র উদ্ধারের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের সময় দেশের বিভিন্ন থানায় হামলা ও লুটপাট হয়। হামলাকারীদের বেশিরভাগ বয়স ১২ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, এবং তারা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য ছিল।
সম্প্রতি কুমিল্লায় তুহিন আলম (১৯) নামের এক কিশোর গ্রেফতার হয়, যার কাছ থেকে বাড্ডা থানার একটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। অন্যদিকে, নোয়াখালীর সেনবাগ থেকে মনির আহাম্মদ (২০) নামে এক তরুণকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যে থানার অস্ত্র বিক্রির চেষ্টায় ছিল।
পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গত ৫ আগস্টের বিক্ষোভের পর ৫,৮১৮টি অস্ত্র বেহাত হয়েছে। এর মধ্যে ৩,৯৩৩টি উদ্ধার হয়েছে, কিন্তু ১,৮৮৫টি অস্ত্র এখনও উদ্ধার হয়নি।
পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. ময়নুল ইসলাম জানিয়েছেন, খোয়া যাওয়া অস্ত্রের প্রায় অর্ধেক উদ্ধার হয়েছে। তবে বাকিগুলো উদ্ধারে গোয়েন্দা টিম কাজ করছে।
বাংলাদেশে অস্থিরতা, চীনের ওপর নিষেধাজ্ঞা: পাকিস্তানের পোশাক খাতে রপ্তানি ২৬ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ
অপরাধ বিশ্লেষক ও সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নূরুল হুদা জানান, কিশোর গ্যাংয়ের কাছে অস্ত্র থাকা বড় ধরনের হুমকি। তিনি বলেন, “লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার না করা আইনশৃঙ্খলার জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।