কীভাবে আবিষ্কার হলো এই স্টেইনলেস স্টিল? আধুনিক স্টেইনলেস স্টিলের জন্ম ১৯১২ সালে। ইংরেজ ধাতুবিদ হেনরি বেয়ারলি বন্দুকের নলের ক্ষয়রোধ করার উপায় নিয়ে গবেষণা করছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় লোহা, কার্বন, ক্রোমিয়াম এবং নিকেল থেকে একধরনের নতুন সংকর ধাতু তৈরি করেন তিনি।
সমস্যা হলো, একে কোনোভাবে বন্দুকের নল বানানোর কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছিল না। ফলে রাগে দুঃখে নতুন ধাতুটি তিনি ময়লায় ঝুড়িতে ফেলে দেন। এরই মধ্যে কেটে যায় কয়েক সপ্তাহ। কাজের চাপে ময়লার মধ্যে থাকা ধাতব খণ্ডের প্রতি নজর দেওয়া হয়নি। হঠাৎ একদিন কাজের ফাঁকে সেদিকে তাকাতেই দেখেন অবাক কাণ্ড। এতদিন খোলা বাতাসে পড়ে থাকার পরেও এর গায়ে একরত্তি মরিচা ধরেনি।
দিব্বি যেন চকচকে শরীর নিয়ে হাসছে। হেনরি বুঝতে পারলেন, নিজের অজান্তেই তিনি এমন এক ধাতু তৈরি করেছেন, যা ইস্পাত ও লোহার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা থেকে মুক্ত। নিজের এই আবিষ্কারকে বাণিজ্যিক রূপ দেওয়ার জন্য পুরোদমে কাজ শুরু করলেন। ১৯১৫ সালে পৃথিবীবাসীর সঙ্গে পরিচয় ঘটল নতুন এই সংকর ধাতুর।
এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি স্টেইনলেস স্টিলকে। বস্তুবিদ টম কলিন্সের মতে, বর্তমানে পৃথিবীতে ব্যবহৃত মোট স্টিলের ৪ শতাংশই মরিচারোধী স্টেইনলেস স্টিল। প্রতিবছর প্রায় ২০০ কোটি টন স্টেইনলেস স্টিল উৎপাদিত হয় পৃথিবীজুড়ে। সব ভালোরই কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকে। স্টেইনলেস স্টিলও তার ব্যতিক্রম নয়। মরিচারোধী চকচকে এ ধাতু তৈরির প্রক্রিয়া বেশ জটিল ও ব্যয়বহুল। স্টেইনলেস স্টিল উৎপাদনে সাধারণ ইস্পাতের তুলনায় ৩-৫ গুণ বেশি ব্যয় হয়। এ ছাড়া একে বিশেষ পরিবেশের জন্য উপযোগী করে তুলতে চাইলে খরচ আরও বাড়ে। যেমন পানির নিচে ব্যবহারের জন্য মলিবডেনাম ধাতু মেশাতে হয়।
এ কারণে বেশির ভাগ কাজকর্মে এখনও কার্বনমিশ্রিত ইস্পাত ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে যেখানে মরিচা ধরার আশঙ্কা কম কিংবা যেখানে স্টিলের ওপর রং বা অন্য কোনো প্রলেপ ব্যবহারের সুযোগ থাকে, সেখানে স্টেইনলেস স্টিলের পরিবর্তে সাধারণ ইস্পাত ব্যবহার করা হয়। তবে বর্তমানে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে স্টেইনলেস স্টিলের ব্যবহার বেড়েছে। খাদ্য প্রস্তুত শিল্পে এর ব্যাপক ব্যবহার সহজেই চোখে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্যবিজ্ঞানী কান্তা শেল বলেন, ‘অন্যান্য বিকল্পের তুলনায় স্টেইনলেস স্টিলের অনেক সুবিধা আছে। অ্যালুমিনিয়াম বা তামার বাসনকোসন সহজে খাবারের অ্যাসিডের কারণে ক্ষয় হয়। মানব স্বাস্থ্যে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। এর বিপরীতে স্টেইনলেস স্টিলে খাবার খেলে অ্যাসিডের প্রভাবমুক্ত থাকে। সর্বোপরি রাসায়নিকভাবে নিষ্ক্রিয় হওয়ায় এটা খাবারকে দূষিতও করে না।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।