প্রোডাক্টটিভিটি বা উৎপাদনশীলতা একজন মানুষের কর্মময় জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আপনি কোনো ইন্ডাস্ট্রিতে গেলে মালিকদের কাছে অভিযোগ শুনবেন যে, তাদের কর্মীরা ততটা প্রডাক্টিভ নয়। আপনার যদি মনে হয় প্রোডাক্টিভিটির ব্যাপারটি আপনার সাথে ঠিকঠাক মতোই এগুচ্ছে, তাহলে অভিবাদন জানানো যায়। কিন্তু পরিশ্রম করেও নিজের মধ্যে যদি প্রোডাক্টিভিটির দেখা না যায়, তবে আমার মনে হয় প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানোর কিছু মৌলিক ধারণার ঘাটতি রয়েছে।
১৮৪৮ সালে জন্মগ্রহণ করা ইতালির ভিলফ্রেডো ফেডেরিকো দামাসো পারেটো টাইম ম্যানেজম্যান্ট আর প্রোডাক্টিভিটির এক অসাধারণ নিয়ম রেখে গিয়েছেন, যার নাম হচ্ছে ৮০/২০ রুল বা পারেটো প্রিন্সিপাল। পারেটো প্রিন্সিপাল বলছে যে, শতকরা ৮০ ভাগ ফলাফল আসে শতকরা ২০ ভাগ কাজের জন্য।
আরও সহজভাবে বললে তোমার দৈনন্দিন জীবনের ২০ শতাংশ কাজই তোমাকে ৮০ শতাংশ ফলাফল এনে দেবে। আর এই ব্যাপারটিও মাথায় রেখো- কম কাজ করা মানেই কিন্তু আলসেমি নয়।
৮০/২০ রুল অনুসরণ করার জন্য প্রথমে তুমি প্রতিদিন কী কী কাজ করো তার একটা লিস্ট বানিয়ে ফেলো। এবার খেয়াল করো যে তোমার জীবনের লক্ষ্য পূরণে প্রতিদিনকার কোন কাজগুলো তোমাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করছে। এবারে তোমার প্রতিদিনকার প্রোডাক্টিভ আওয়ারের জন্য এই কাজগুলো বরাদ্দ রাখো। পারলে সেই কাজগুলোই আগে সেরে ফেলো। এভাবে ৮০/২০ রুল ফলো করলে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই নিজের মধ্যে তুমি প্রোডাক্টিভিটি খুঁজে পাবে।
তুমি প্রতিদিন যেই কাজটি করছো সেটি অবশ্যই তোমার লক্ষ্যের সহায়ক হতে হবে। তোমার অবস্থা যাতে Master of all but jack of none- এই রকমের না হয়ে যায়, প্রোডাক্টিভিটি বাড়াতে হলে এই দিকটায় লক্ষ রাখতে হবে। কাজেই একসাথে অনেকগুলো কাজ করা আজকে থেকেই থামিয়ে দাও। এতে কাজের কাজ কিছুইতো হয় না উল্টো সময় নষ্ট হয়। একটা তথ্য দেই। তুমি দিনে প্রায় ১০ বারের মতো টাস্ক পরিবর্তন করলে তোমার এভারেজ আই কিউ কমে প্রায় ১০ পয়েন্ট এর মতো।
তাই কম টার্গেট রেখে সেই কাজ গুলোভাবে করতে পারলে তোমার কাঙ্ক্ষিত কাজে দক্ষতা বাড়বে, সেই সাথে প্রোডাক্টিভিটি বাড়লে তোমার কাজ করার স্পৃহা শত গুণে বেড়ে যাবে। আমি মাল্টিটাস্কিংকে না বলছি না, “অযথা” এক সময় অনেক গুলো কাজ একসাথে করার ব্যাপারটিকে না বলছি কেননা এক্ষেত্রে কম প্রোডাক্টিভিটির সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ।
রিসার্চ অনুযায়ি মানুষ ঘুম থেকে উঠার পরের দুই থেকে তিন ঘন্টা হচ্ছে সবচাইতে প্রোডাক্টিভ সময়। এছাড়াও দিনের শুরু থেকেই কিছুটা আচ করা যায় আজ দিনটা কেমন যাবে। তাই সকাল বেলাকে আমাদের সব সময় বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত। ঘুম থেকে উঠেই আমাদের উচিত হবে সবচাইতে গুরুত্ব পুর্ন কাজটা করা। ডিস্ট্রাকটিভ মেটেরিয়ালগুলোকে যতটা সম্ভব দূরে রাখা। রাতে ঘুমানোর আগেই আমাদের একটা প্লান করে ফেলা উচিত কাল সারাদিন কি করবো। বিশেষ করে সকাল বেলার কাজটার একটা প্লান রাতেই তৈরি করে রাখা জরুরি।
প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানোর জন্য এমন কিছু করা দরকার যা প্রফেশনাল কাজের চেয়ে একটু আলাদা। যেমন যিনি সারাদিন হাটাহাটি করেন তার জন্য একটু ঘুম টনিকের মত কাজ করে। আবার যারা সারাদিন বসে বসে কাজ করেন তার জন্য একটু হাটাহাটি, বাইরে ঘোরাঘুরি কার্যকরি ভুমিকা পালন করে। যে কোন ধরনের ফিজিক্যাল এক্টিভিটি (ব্যায়াম, খেলাধুলা) কিছু সময় মস্তিস্ককে কাজ থেকে সম্পুর্ন দূরে রাখতে পারে। আর এই বিরতির পরে যখন আবার প্রফেশনাল কাজ শূরু করা হয় তখন নতুন করে শুরু করার মত কিছুটা বেশি এনার্জি এবং মনযোগ পাওয়া যায়। এমনকি আত্মবিশ্বাস বাড়াতেও সাহায্য করে থাকে। আমি নিয়মিত অফিস আওয়ারের পর টেবিল টেনিস খেলছি অথবা আড্ডা দিয়েছি এবং এটা আমাকে আগের চাইতে বেশি প্রোডাক্টিভ করেছে।
টু ডু লিস্ট একটা ডাইরিতে লিখুন। আপনি যখন একটা কাজ শেষ করবেন, তখন ওইটা কাটুন। এক নম্বর কাজ শেষ হলে ওটা কেটে দিন, দুই নম্বর কাজ শেষ হলে ওটা কেটে দিন, তিন নম্বর কাজ শেষ হলে, ওটা কেটে দিন। দেখবেন যে, আপনি মনের মধ্যে একটা আনন্দ অনুভব করছেন এবং দিনটাকে খুব মূল্যবান মনে হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।