কুবি প্রতিনিধি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) স্থাপন করা দ্রুতগতির ইন্টারনেট (ওয়াই ফাই) এর মান নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষ প্রকাশ করছে শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) এর প্রজেক্টের অর্থায়নে বাংলাদেশ রিসার্চ এন্ড এডুকেশন নেটওয়ার্ক (বিডিরেন) সম্প্রতি কুবি ক্যাম্পাসকে ওয়াইফাই এর আওতায় আনার কাজ শেষ করেছে। কিন্তু দ্রুতগতির এই ইন্টারনেটের স্পিড এবং মান নিয়ে সন্তুষ্ট নয় শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, তিনটি একাডেমিক ভবন, শিক্ষকদের দুইটি ডরমেটরি, শিক্ষার্থীদের চারটি হল এবং ক্যাফেটেরিয়াকে ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। কিন্তু এই ওয়াইফাই এর মান নিয়ে শিক্ষার্থীদের রয়েছে নানা অভিযোগ।
ওয়াইফাই এর স্পিড নিয়ে বঙ্গবন্ধু হলের শিক্ষার্থী শাহাবুদ্দিন বলেন, “বারবার আশা জাগিয়ে অনেক দেড়িতে দ্রুতগতির ইন্টারনেট বলে যে ওয়াইফাই সংযোগ দেওয়া হয়েছে তার স্পীড খুবই কম। আর আমি মনে করি এটার পরিকল্পিনা ছিল অপর্যাপ্ত। ওয়াশরুম ও মসজিদকে কেন্দ্র করে একটা রাউটার দেয়া হয়েছে। অথচ দুইটা-তিনটা রুম পরেও কোনো রাউটার নেই। যাদের রুমের সামনে রাউটার তারাই স্পীড পায় না, তাহলে যেগুলো রুম দূরে সেগুলোতে কীভাবে স্পীড পাবে? আমাদের রুমের সামনে ও পাশের কোনো রুমের সামনে রাউটার নেই। তাই আমরা রুম থেকে তো স্পীড পাই না এবং বারান্দা থেকেও পাই না।
এনিয়ে শিক্ষকদের মাঝেও রয়েছে অভিযোগ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক বলেন, শিক্ষকদের আবাসিক ডরমেটরিতে ইন্টারনেট সংযোগ খুবই দুর্বল। স্পিড না থাকার পাশাপশি প্রায়শ নেটওয়ার্ক যাওয়া আসার মাঝে থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ মোট ১৯ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউজিসির এই প্রকল্প পাস হয়৷ কিন্তু, নানা প্রতিবন্ধকতায় কুবিতে প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। ‘কাগজে-কলমে’ কাজ শেষ হলেও এখনো ওয়াইফাই চালু হয়নি পুরোপুরি, চলছে পরীক্ষামূলকভাবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এই প্রজেক্টের দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি উপদেষ্টা ও কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হাছান বলেন, “দাপ্তরিকভাবে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর এই প্রকল্পের নেটওয়ার্ক বসানোর কাজ শেষ৷ তবে এখনো কিছু জায়গায় উন্নয়ন বাকি। নেটওয়ার্ক শুধু বসালেই চলে না এর সক্ষমতা পর্যবেক্ষণ করে বিতরণ করতে হয়। তাই প্রকল্পটি এখনো পুরোপুরি চালু করিনি।পরীক্ষামূলকভাবে চালিয়ে যে যে জায়গায় উন্নয়ন প্রয়োজন সেগুলো ঠিক করা হচ্ছে।”
ওয়াই ফাই এর স্পিড নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের কর্মকর্তা সাইদুর রশীদ সাদী বলেন, “এই প্রকল্পে পুরো ক্যাম্পাসে ৪০০ এমবিপিএস ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শুধু হলগুলোতেই প্রায় হাজারের উপর শিক্ষার্থীরা থাকেন, ক্যাম্পাসে মোট শিক্ষার্থী প্রায় ছয় হাজার, তারপর শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আছেন সবার মাঝে যখন এই ব্যান্ডউইথ ভাগ হয় তখন স্বাভাবিকভাবেই স্পীড কম আসে। এক রাউটারে যুক্ত হয়ে কেউ যখন ডাউনলোড করে দেখা যায় তখন তার ডিভাইস একাই অনেক ব্যান্ডউইথ টেনে নেয় ফলে ঐ রাউটারে যুক্ত অন্যরা স্পীড পাননা।”
২০১৫ সালের প্রজেক্ট কেন ২০১৮ তে শুরু হলো এবং এখন পর্যন্ত কেন পুরোপুরি চালু করা যায়নি এমন প্রশ্নের জবাবে আইটি উপদেষ্টা মাহমুদুল হাছান বলেন, “দেরির জন্য শুধু বিশ্ববিদ্যালয় একা দায়ী নয়। দেরিটা সংশ্লিষ্ট সব পর্যায় থেকেই হয়েছে। ইউজিসি থেকে শুরু করে দাপ্তরিক সকল জায়গাতেই দেরী হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “প্রকল্পটির সব ডিজাইন ২০১৫ সালে করা কিন্তু ২০১৮ সালে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ভবনেই পরিবর্তন এসেছে। আয়তন বেড়েছে। কিন্তু ইউজিসির অনুমোদন একই রয়ে গেছে। ফলে চাইলেও বেশি রাউটার বা অন্যান্য সামগ্রী দেয়া যাচ্ছেনা। তবে আমরা উপাচার্য স্যারের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে এই খাতে আরো কিছু উন্নায়ন করার প্রস্তাব দেয়ার ব্যাপারে ভাবছি।”
কবে নাগাদ ওয়াইফাই পুরোপুরিভাবে চালু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটি এখনি বলা যাচ্ছেনা। আমরা এখনো পর্যবেক্ষণ করছি। ইন্টারনেটটি সব জায়গায় একইভাবে স্থিতিশীল হলে পুরোপুরি চালু করা যাবে।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।