সপ্তম পর্বের শেষে উল্লিখিত হয়েছিল যে রোমান সম্রাট ওসমানের বিরুদ্ধে আন্দ্রেনিকোস দুই হাজার সৈন্যের বিশেষ বাহিনী প্রেরণ করেন। এ বাহিনী ছিল বেশ দক্ষ এবং তাদের নেতৃত্বে ছিলেন রোমান কমান্ডার মুজোলান। এ বাহিনীর একটি বিশেষ দিক ছিল তারা বেশ শক্ত লোহার বর্ম পরে যুদ্ধে এসেছিল।
এ বাহিনীর মধ্যে অর্ধেকই ছিল অ্যালান বাহিনী যারা ছিল রোমান সাম্রাজ্যের ভাড়া করা যোদ্ধা। অ্যালানদের কেউ কেউ ঐতিহাসিক ‘ভাইকিং’-দের উত্তরসূরি বলে থাকেন। বলা বাহুল্য, অ্যালানদের মতো কাতালানদেরকেও ভাড়া করে যুদ্ধে নিয়ে আসত রোমান সাম্রাজ্য। অ্যালান ও কাতালানরা ইউরোপের স্প্যানিশ-ফ্রেঞ্চ ভূমি থেকে আগত।
মূলত, তারা যাযাবরের মতো বনে-জঙ্গলে বাস করত। তাদেরকেই ভাড়া করে নিয়ে আসা হতো ১২-১৩ শতাব্দীর দিকে। এমনকি খ্রিষ্টান তুর্কীদেরকেও রোমান সাম্রাজ্য ভাড়া করে আনাতোলিয়ায় বিভিন্ন আগ্রাসন চালাতো, এ খ্রিষ্টান তুর্কীরা হচ্ছে কিপচাক তুর্কী। যদিও এদের সংখ্যা বেশ কম ছিল তৎকালীন সময়ে।
ওপরে উল্লিখিত, সম্রাট আন্দ্রেনিকোসের পাঠানো দুই হাজার সৈন্যের দক্ষ রোমান বাহিনী ব্যাফিউসের সমুদ্রতীরে ঘাঁটি গড়ে তোলে। ওসমান এ খবর শুনে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। ১৩০২ সনের দিকে ব্যাফিউসের সমুদ্র তীরে ওসমানের অধীনে থাকা হালকা বর্ম পরিহিত ৫ হাজার সৈন্য এবং কমান্ডার মুজোলানের অধীনে থাকা শক্ত বর্ম পরিহিত দক্ষ ২ হাজার সৈন্য মুখোমুখি হয়। ওসমান এ যুদ্ধে মঙ্গোলদের মতো কৌশল ব্যবহার করেন।
প্রথমে ওসমান নিজের সাথে ২ হাজার সৈন্য নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন, কিছুক্ষণ পর ওসমান নিজের এ সৈন্যদের নিয়ে পিছু হটতে থাকলে রোমান সৈন্যরা নিজেদের বিজয় আসন্ন ভেবে সামনে অগ্রসর হতে থাকে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই ওসমানের অধীনে থাকা বে’রা ৩ হাজার সৈন্য নিয়ে আক্রমণ করে। ওসমানও পুনরায় নিজের সৈন্যদের নিয়ে আক্রমণ করে লন্ডভন্ড করে দেয় রোমানদের।
বেশ দক্ষ ও শক্ত বর্ম পরিহিত রোমান সৈন্যরা পরাজিত হয়ে যায়। অধিকাংশ রোমান সৈন্যের মৃত্যু হয়। কমান্ডার মুজোলান ও বেচে থাকা কিছু অ্যালান সৈন্য পালিয়ে যায়। এভাবেই ওসমান ব্যাফিউসের যুদ্ধজয় করে শোরগোল ফেলে দেন। ওসমানের নিজের স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণার পর এই প্রথম তিনি সম্মুখ কোনো যুদ্ধে হাজার সৈন্য নিয়ে বিজয় অর্জন করেন। তাই ওসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রথম বড় যুদ্ধ হিসেবে ‘ব্যাফিউসের যুদ্ধ’কে অভিহিত করা হয়।
ব্যাফিউসের বিজয়ের পরই ওসমান রোমান দুর্গ কয়ুনহিসারে ৫০০ সৈন্য নিয়ে হামলা করেন ও তৎক্ষণাত এ দুর্গ জয় করে নেন। ব্যাফিউসের যুদ্ধে পরাজয় বরণ করায় রোমান সম্রাট বেশ রাগান্বিত হন। তা ছাড়া ওসমানও রোমান শহর বুরসার আশপাশের দুর্গে বেশ হুমকিস্বরূপ হয়ে যান। রোমান সম্রাট এ সময় নতুন পরিকল্পনা করতে থাকেন। তিনি বুরসা শহরের রোমান গভর্নরকে প্রধান করে আরেকটি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে আদেশ দেন। বুরসার গভর্নর তৎক্ষণাৎ কিতে, কেস্টেল, উলুবাত ও আদ্রানোস নামক সীমান্তবর্তী চারটি রোমান দুর্গের জমিদারগণের সঙ্গে পরিকল্পনা সাজাতে থাকেন।
বুরসার গভর্নর ও চারটি দুর্গের জমিদাররা প্রায় ২ হাজার সৈন্য নিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে। তাদেরকে আরও ২ হাজার সৈন্য পাঠিয়ে সাহায্য করেন রোমান সম্রাট। মোট ৪ হাজার রোমান সৈন্য ওসমানের রাষ্ট্রে হানা দিতে অগ্রসর হতে থাকে। ওসমান এ খবর পেয়ে নিজের সাথে ৫ হাজার সৈন্য নিয়ে ডিম্বোসের প্রান্তরে উপস্থিত হন। ওসমানের সঙ্গে কায়ী সৈন্যদের পাশাপাশি তার অধীন বিভিন্ন বসতির সৈন্যরাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ফলে, ১৩০৩ সনের দিকে ডিম্বোসের প্রান্তরে ওসমানের ৫ হাজার সৈন্যের সঙ্গে বেশ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয় ৪ হাজার রোমান সৈন্যের। এ যুদ্ধে প্রথমে ওসমান ও তার বাহিনী বেশ ক্ষয়ক্ষতির শিকার হলেও দ্রুত তা কাটিয়ে উঠে পুনরায় আক্রমণ চালায় ওসমানের বাহিনী। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওসমানের বাহিনী যুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলে। শেষের দিকে রোমান সৈন্যরা পরাজয় আসন্ন দেখে কেউ কেউ পালাতে থাকে।
এ সময় ওসমানের ছেলে ওরহান রোমান সৈন্যদের তাড়াতে শুরু করে ও রোমান সৈন্যরা পিছু হটতে থাকে। অধিকাংশ রোমান সৈন্য এ যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করে। ওসমানেরও বেশ কিছু সৈন্য মৃত্যুবরণ করে। ওসমানের ভাতিজা আয়দোগদু বে এ যুদ্ধে নিহত হন (গুন্দুজ বে এর ছোট ছেলে)। তা ছাড়া কেস্টেল দুর্গের রোমান জমিদারও এ যুদ্ধে নিহত হন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।