জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে যে সাতটি সমঝোতা চুক্তি সই হয়েছে তার একটি হচ্ছে সিলেটের কুশিয়ারা নদীর পানি উত্তোলন সম্পর্কিত। এই চুক্তির অধীনে ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ নদী কুশিয়ারা থেকে ১৫৩ কিউসেক পানি উত্তোলন করবে বাংলাদেশ। এই সমঝোতার মাধ্যমে পানি উত্তোলনের বিষয়টি নিষ্পত্তি হলো।
বাংলাদেশের সাথে ভারতের যে ৫৪টি যৌথ নদী রয়েছে সেগুলোর পানি বণ্টন বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে দীর্ঘ দিনের অমীমাংসিত ইস্যু রয়েছে। সেগুলো নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে।
সাধারণত তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টি ঘুরে ফিরে হলেও প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরে এই একটি নদী কুশিয়ারার পানি বণ্টনের বিষয়টি বাংলাদেশ বেশি গুরুত্ব দিয়েছে।
বাংলাদেশের পক্ষে দিল্লিতে এই সমঝোতা চুক্তিতে সাক্ষর করেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার।
তিনি জানান, যে সাতটি সমঝোতা চুক্তি মঙ্গলবার সই হয়েছে তার মধ্যে প্রথমটিই ছিল কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টন সম্পর্কিত। এর আওতায় বাংলাদেশ সিলেটে কুশিয়ারা নদীর রহিমপুর খাল পয়েন্টে প্রতি সেকেন্ডে ১৫৩ কিউসেক পানি উত্তোলন করবে।
সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের আওতায় মূলত শুকনো মৌসুমে এই পানি উত্তোলন করে তা কৃষি জমিতে সেচের কাজে ব্যাবহার করা হবে। ১৯৯৬ সালে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি হওয়ার এতদিন পর এই প্রথম কোনো অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন বিষয়ে সমঝোতা হলো।
কবির বিন আনোয়ার জানান, সমঝোতার ফলে বাংলাদেশ এখনি চাইলে পানি উত্তোলন করতে পারবে। পাম্প হাউজটি প্রস্তুত করতে দু’ থেকে তিন সপ্তাহ সময় লাগবে।
বাংলাদেশ দীর্ঘ দিন যাবৎ কুশিয়ারার পানি উত্তোলন করতে চাচ্ছে। ২০১১ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ রহিমপুর পয়েন্টে একটি পাম্প-হাউজ ও একটি বাঁধ নির্মাণ করে। সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্প সেটি বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের।
সিলেটে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ জানান, রহিমপুর পয়েন্ট এই জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে ওই জায়গাটি অনেক উঁচু। যার কারণে বর্ষার মৌসুম বাদে উচ্চতার কারণে শীতকালে বা শুষ্ক মৌসুমে, আমন ধান চাষের সময় এমনকি বর্ষার মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলে, পানির লেভেল যখন কমতে থাকে তখন কুশিয়ারা থেকে রহিমপুর খালে আর পানি প্রবেশ করতে পারে না।
তিনি বলেন, যার ফলে আশপাশের সাতটি উপজেলায় সেচের জন্য কোনো পানি পাওয়া যায় না এবং শুষ্ক মৌসুমে পুরো অঞ্চলটিতে কোনো কৃষি কাজ করা যায় না। সেচের পানির অভাবে বছরের বেশিরভাগ সময় ওই পুরো অঞ্চলে কৃষি জমি পুরোপুরি ফসল শূন্য হয়ে থাকে। ওই অঞ্চলে মাটির নিচেও পানির স্তর অনেক নিচে।
কবির বিন আনোয়ার বলেন, বাংলাদেশে চাইছে পাম্প করে উঁচু জায়গাটির অন্য পাশে পানি নিয়ে আসতে। এর ফলে ওই সাতটি উপজেলার ছয় হাজার হেক্টরের মতো জমি সেচের আওতায় আসবে এবং সারা বছর কৃষি কাজ করা সম্ভব হবে।
রহিমপুর খালটি ভারতের সাথে সীমান্তের খুব কাছে। সে কারণে যৌথ নদীটি থেকে পানি উত্তোলন ও খাল খননে এই সমঝোতা দরকার হয়েছে বলে তিনি জানান।
তবে ৫৪টি যৌথ নদীর পানি বণ্টনের বিষয় এলে তিস্তা সবসময় গুরুত্ব পায়। এটি এই দু’দেশের অমীমাংসিত অনেক পুরনো একটি ইস্যু এবং ভারত বহুদিন যাবত তিস্তা ইস্যুতে শুধু আশ্বাসই দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এবার তিস্তা নদীর চাইতে কুশিয়ারাই প্রাধান্য পেয়েছে।
সূত্র : বিবিসি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।