বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা কমবেশি নিউটনের তৃতীয় সূত্রের সঙ্গে পরিচিত। এর থেকে পাওয়া যায় ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র। সূত্রটির বিবৃতি অনেকটা এ রকম: ‘দুটি বস্তুর মধ্যে ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া ছাড়া অন্য কোনো বল কাজ না করলে কোনো নির্দিষ্ট দিকে তাদের মোট ভরবেগ অপরিবর্তিত থাকে।’
এ নীতির ওপর ভিত্তি করে উৎক্ষেপণ করা হয় সব রকেট। রকেটের নিচের দিকের অংশে থাকা জ্বালানি পুড়িয়ে উৎপন্ন করা হয় প্রচুর পরিমাণ গ্যাস। সেই গ্যাসগুলোকে নির্গত করানো হয় রকেটের নিচের দিক দিয়ে। প্রথমে জ্বালানি ও রকেট—দুটোই স্থির অবস্থায় থাকে। অর্থাৎ এ সময় তাদের ভরবেগের সমষ্টি শূন্য। গ্যাস নির্গত হওয়ার ফলে নির্গমনের দিকে জ্বালানির কিছুটা ভরবেগ তৈরি হয়। সূত্র অনুসারে পুরো সিস্টেমের ভরবেগের সমষ্টি অপরিবর্তিত রাখার জন্য রকেটটির সামনের দিকে জ্বালানির সমপরিমাণ ভরবেগের সৃষ্টি হবে। ফলে রকেটটি সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।
মহাশূন্যে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর জন্য যেসব আধুনিক রকেট ব্যবহার করা হয়, সেগুলোতে সম্পূর্ণ জ্বালানি একসঙ্গে রাখা হয় না। কয়েকটি আলাদা ধাপে রাখা হয়। যাত্রাপথে এক ধাপের জ্বালানি শেষ হয়ে গেলে সেই অংশকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে সংঘর্ষের মাধ্যমে সেই বিচ্ছিন্ন অংশ ভস্মীভূত হয়ে যায়। এক ধাপের জ্বালানি শেষ হলে ব্যবহার করা হয় অন্য ধাপের জ্বালানি। এ রকেটগুলোকে বলা হয় মাল্টিস্টেজ রকেট। এখন প্রশ্ন হলো, কেন আমাদের মাল্টিস্টেজ রকেটের প্রয়োজন পড়ল?
প্রথম সমস্যা ওজন নিয়ে। রকেটের জ্বালানি যে ট্যাংকের ভেতরে রাখা হয়, তার ওজন অনেক বেশি। জ্বালানি পুড়ে যাওয়ার পর এর আর কোনো প্রয়োজনীয়তা থাকে না। যদি সব জ্বালানি একসঙ্গে রাখা হয়, তাহলে যাত্রার শেষ পর্যন্ত ট্যাংকটি শুধু শুধু বহন করে নিয়ে যেতে হয়। ফলে অতিরিক্ত ভর বহনের দরুন অপচয় হয় মূল্যবান জ্বালানি। অন্যদিকে যদি জ্বালানি কয়েক ধাপে রাখা হয়, তাহলে প্রতি ধাপের কাজ শেষে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা যায় সেই খালি ট্যাংক। ফলে দ্বিতীয় ধাপের জ্বালানি ব্যবহার করে বেশি পথ অতিক্রম করা যায়।
দ্বিতীয় সমস্যা রকেট ইঞ্জিনের নজল (ইঞ্জিন থেকে বেরিয়ে আসা পাইপ) নিয়ে। একটু ব্যাখ্যা করা যাক। ইঞ্জিনে জ্বালানির মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটানো হয় এবং এর মাধ্যমে উৎপন্ন গ্যাস একটি নজল দিয়ে বাইরে বের করে দেওয়া হয়। এর ফলে সৃষ্ট ভরবেগ পুঁজি করে সামনের দিকে এগিয়ে যায় রকেট। রকেটের অবস্থান যখন বায়ুমণ্ডলের ভেতরে হয়, তখন নজলের আকার অবশ্যই ছোট হতে হবে। কারণ, বায়ুমণ্ডলের ভেতরে নজল থেকে বের হওয়া গ্যাসের প্রবাহ চারদিকে বেশি দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে দেওয়া খুবই বিপজ্জনক।
ছোট নজলে গ্যাসের প্রবাহ অনেকটা সরলরৈখিক হয়। অন্যদিকে বড় নজল ব্যবহার করা হলে বাতাসের চাপ উপেক্ষা করে নির্গত গ্যাসের প্রবাহ অনেক এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে যেতে পারে। ফলে তৈরি হতে পারে টারবুলেন্স। এর প্রভাবে ক্রমাগত কাঁপতে কাঁপতে একসময় ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে গোটা রকেট। তাই বায়ুমণ্ডলের ভেতরে ছোট নজল ব্যবহারের বিকল্প নেই। তবে ছোট নজলসমেত কেবল একটি ইঞ্জিন দিয়ে মহাশূন্যে যাওয়ার প্রয়োজনীয় ভরবেগ তৈরি করা সম্ভব নয়। তাই ব্যবহার করতে হয় এমন কয়েকটি ইঞ্জিন।
এবার মহাশূন্যে কেমন আকারের নজলের ইঞ্জিন ব্যবহার করা প্রয়োজন, তা জেনে নেওয়া যাক। মহাশূন্যে বাতাসের চাপের অস্তিত্ব নেই। তাই চাইলে ছোট বা বড়—দুই ধরনের নজলের ইঞ্জিন ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে বড় নজলবিশিষ্ট ইঞ্জিন ব্যবহার করলে জ্বালানির আউটপুট বেশি পাওয়া যায়। তাই মহাশূন্যে বড় নজলের ইঞ্জিন ব্যবহার করা যুক্তিযুক্ত। তাহলে দেখা যাচ্ছে, দুই পরিস্থিতিতে আমাদের দুই ধরনের ইঞ্জিন ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ছে। কেবল মাল্টিস্টেজ রকেট হলে এই চাহিদা মেটানো সম্ভব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।