আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিজ্ঞানীরা একটি নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করেছেন। নতুন অ্যান্টিবায়োটিকটি মারাত্মক প্রজাতির সুপারবাগকে মেরে ফেলতে পারে বলে জানা গেছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গবেষকরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে হাজার হাজার সম্ভাব্য কার্যকর রাসায়নিক থেকে মুষ্টিমেয় কয়েকটি বেছে নেন এবং সেগুলো পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করেন।
এই অ্যান্টিবায়োটিকটির নাম দেওয়া হয়েছে অ্যাবাউসিন।
তবে এটি ব্যবহারের আগে আরো পরীক্ষার প্রয়োজন। কানাডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা বলছেন, নতুন ওষুধের আবিষ্কারকে ব্যাপকভাবে ত্বরান্বিত করার ক্ষমতা এআই-এর রয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সরঞ্জামগুলো কিভাবে বিজ্ঞান এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটি বিপ্লবী শক্তি হতে পারে তার সর্বশেষ উদাহরণ এটি।
সুপারবাগ প্রতিরোধ
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে।
কয়েক দশক ধরে নতুন ওষুধের অভাবে ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে চিকিৎসা কঠিন হয়ে পড়েছে, কারণ ব্যাকটেরিয়া এসব ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি-প্রতিরোধ গড়ে তোলার কারণে বছরে এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষ এমন সংক্রমণে মারা যায়।
গবেষকরা সবচেয়ে মারাত্মক ব্যাকটেরিয়াগুলোর ওপর নজর দিয়েছেন। যেমন জটিলতা সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার প্রজাতি ‘অ্যাসিনেটোব্যাক্টর বাউমানি’ নিয়ে কাজ করেছেন।
এটি ক্ষতস্থানে মারাত্মক সংক্রমণ এবং নিউমোনিয়া সৃষ্টি করতে পারে। আপনি এর নাম শুনে না থাকলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে তিনটি সুপারবাগকে ব্যাপক হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে তার মধ্যে এটি একটি।
এটির বিরুদ্ধে একাধিক অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। বিশেষ করে হাসপাতাল এবং কেয়ার হোমে এটি একটি মারাত্মক সমস্যা। এই ব্যাকটেরিয়া সেখানের যেকোনো পৃষ্ঠ এবং চিকিৎসা সরঞ্জামে বেঁচে থাকতে পারে।
ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটির ডক্টর জোনাথন স্টোকস এই সুপারবাগটিকে ‘মানুষের এক নম্বর শত্রু’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কারণ এটি ‘প্রায় প্রতিটি অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।’ এমন একটি সুপারবাগের বিরুদ্ধে কাজ করে এমন একটি ওষুধ খুঁজে পাওয়া সত্যিই অসাধারণ একটি ঘটনা হবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেভাবে কাজ করেছে
একটি নতুন অ্যান্টিবায়োটিক খুঁজে পেতে প্রথমে গবেষকদের এআইকে প্রশিক্ষণ দিতে হয়েছিল। তারা হাজার হাজার ওষুধ নিয়েছিল, যেখানে সুনির্দিষ্ট রাসায়নিক গঠন তাদের জানা ছিল এবং নিজেরা ম্যানুয়ালি অ্যাসিনেটোব্যাক্টর বাউমানিতে পরীক্ষা করে দেখেন কোনটি এটিকে ধীর ধীরে মেরে ফেলতে পারে। এরপর তারা সেইসব তথ্য এআই-তে প্রবেশ করান, যাতে এটি ওষুধের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যগুলো শিখতে পারে এবং সমস্যাযুক্ত ব্যাকটেরিয়াকে আক্রমণ করতে পারে।
এআই তখন ছয় হাজার ৬৮০টি যৌগের তালিকা প্রকাশ করেছিল, যার কার্যকারিতা অজানা ছিল। এ জন্য এআই মাত্র দেড় ঘণ্টা সময় নিয়েছিল এবং এর ফলাফল ‘নেচার কেমিক্যাল বায়োলজিতে’ প্রকাশিত হয়। গবেষকরা পরীক্ষাগারে ২৪০টি পরীক্ষা করেছেন এবং ৯টি সম্ভাব্য অ্যান্টিবায়োটিক খুঁজে পেয়েছেন। তাদের মধ্যে একটি ছিল অবিশ্বাস্যভাবে শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক অ্যাবাউসিন।
ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় দেখা গেছে, এটি ইঁদুরের সংক্রমিত ক্ষতগুলোর চিকিৎসা করতে পারে। যাই হোক, ডা. স্টোকস বলেছেন, এটির কাজ মাত্র শুরু। পরবর্তী ধাপ হলো পরীক্ষাগারে ওষুধটি নিখুঁত করা এবং তারপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করা। তিনি আশা করেন, প্রথম এআই-এর অ্যান্টিবায়োটিকগুলো ২০৩০ সাল নাগাদ সময় নিতে পারে।
আশ্চর্যজনকভাবে, এই পরীক্ষামূলক অ্যান্টিবায়োটিকটি ব্যাকটেরিয়ার অন্যান্য প্রজাতির ওপর একেবারেই কাজ করে না। শুধু অ্যাসিনেটোব্যাক্টর বাউমানির ওপর এটি কার্যকর। অনেক অ্যান্টিবায়োটিক নির্বিচারে ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে। গবেষকরা ধারণা করছেন, অ্যাবাউসিনের নির্ভুলতা ওষুধ-প্রতিরোধের সক্ষমতা অর্জন করা কঠিন করে তুলবে এবং কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখাবে।
সূত্র : বিবিসি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।