জুমবাংলা ডেস্ক: মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে নাটোরের গুরুদাসপুরে একেবারেই তলানিতে লেবুর বাজার। লেবু বিক্রিতে চাষিদের উৎপাদন খরচ ওঠানোই এখন কষ্টকর। এতে লাভের পরিবর্তে লোকসান গুনতে হচ্ছে লেবু চাষিদের। লোকসানের মুখে পড়ে অনেক কৃষকই লেবু তুলতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এ কারণে বাগানের লেবু বাগানেই নষ্ট হচ্ছে।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মতিয়র রহমার জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৩০ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ হয়েছে। মূলত কাগজী লেবু জায়গাটা দখল করেছে চায়না ৩ জাতের বারো মাসি লেবু। এ লেবুর ফলন বেশি। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে লেবু বেশি পরিমাণে উৎপাদন হয়, চাহিদা থাকে কম। শুষ্ক মৌসুমে ফলন কম চাহিদা বেশি থাকায় দাম বেশি থাকে। আসলে চাহিদা অনুযায়ী বাজার কম বেশি হতে পারে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন বাগান ঘুরে দেখা যায়, পাকা লেবু গাছ থেকে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। অনেক লেবু ফেটে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। লোকসানের ভয়ে অনেক চাষি লেবু তুলছে না। ফলে বাগানেই নষ্ট হচ্ছে চাষির কষ্টার্জিত সম্পদ।
স্থানীয় চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাগান প্রক্রিয়া জাতকরণ, সারসহ খরচ প্রতি বিঘায় ১৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকা। এছাড়া প্রতি বস্তা লেবু তুলতে শ্রমিককে দিতে হয় ১৫০ হতে ২০০ টাকা। পাটের বস্তা, ভাড়া, অন্য খরচ বাবদ চলে যায় আরও ৩০০ টাকা। প্রতি বস্তা লেবু তুলে বিক্রি পর্যন্ত খরচ হচ্ছে ৭শ থেকে ৮শ টাকা। সেই লেবু বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে প্রতি বস্তা ৪শ থেকে ৫শ টাকা দরে। যার কারণে বাগানেই নষ্ট হচ্ছে কৃষকের স্বপ্নের ফসল। তাই লেবু চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা।
লেবু চাষিদের দাবি, কিছু লেবু ব্যবসায়ীর কারসাজিতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের নিকট থেকে কম দামে লেবু কিনে ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে আসা মহাজনদের কাছে অধিক মুনাফায় লেবু বিক্রি করছে। ফলে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে লোকসানে পড়তে হচ্ছে তাদের।
চাপিলা ইউনিয়নের কলাকান্ত নগর গ্রামের চাষি মো. রহমত মন্ডল বলেন, এবার আমার চার বিঘা জমিতে লেবু চাষ করা হয়েছে। রমজানের শুরুতে ভালো দামে বিক্রি হলেও, এখন একদমই বিক্রি হচ্ছে না। পাইকারেরা এখন আর লেবু কিনতে চান না। আমাদের নিজেদের খরচে লেবু তুলে বাজারে বিক্রি করতে হয়। তবে লেবু তুলতে একজন দিনমজুরকে যে পারিশ্রমিক দিতে হয় সেই টাকাই বিক্রি করে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। তাই লেবু তোলা বন্ধ রেখেছি।
চাঁচকেড় বাজারের খুচরা লেবু বিক্রেতা জনাব আলী জানান, বাগান থেকে ৭ টাকা কেজি দরে লেবু কিনে ১০ টাকা কেজি বিক্রি করছি।
লেবু ব্যবসায়ী রাজু বেপারী জানান, বর্ষা মৌসুমে লেবুর দাম এমনিতেই কম থাকে। তাছাড়া মহাজনরাও বাকিতে লেবু কিনে। ঝুঁকি নিয়ে স্থানীয় বাজার থেকে লেবু কিনে মহাজনদের কাছে সামান্য লাভে বিক্রি করা হয়।
ঢাকা থেকে লেবু কিনতে আসা মহাজন রফিকুল ইসলাম জানান, এখন লেবুর মৌসুম না। তাছাড়া ট্রাকের ভাড়া, খাজনা ও লেবার বিল দিয়ে বেচা বিক্রি শেষে সামান্য কিছু লাভ থাকে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশিদ বলেন, বৃষ্টির কারণে স্বল্প সময়ের জন্য বাজার দরটা একটু কমে গেছে। আবহাওয়া ঠিক হলেই লেবু চাষিরা আবার সাবেক দর ফিরে পাবে। তবে এ সময়ে লেবু চাষিরা কলম তৈরি করে বাড়তি আয় করতে পারেন। তবে লেবু চাষিরা বাহিরের বেপারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে লেবু বিক্রি করলে ভালো দাম পেতে পারেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।