জুমবাংলা ডেস্ক: প্রতিবছর আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এর ঘর ‘বাইতুল্লাহ’ বা ‘কাবাঘর’কে মোড়ানো হয় নতুন গিলাফ বা কিসওয়া দিয়ে। আরবদের কাছে কিসওয়া নামে পরিচিত এই গিলাফ মূলত বিশেষ কালো কাপড়। যার ওপর নকশা করা হয় পবিত্র কোরআনুল কারিমের বিভিন্ন আয়াত। ফুটিয়ে তোলা হয় অন্যান্য নকশাও।
উল্লেখ্য, প্রতিবছর ৯ জিলহজ আরাফাতের খুতবার দিন গিলাফ পরিবর্তন করা হলেও এবার দীর্ঘদিনের সেই রেওয়াজ ভেঙে হিজরি বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ পহেলা মহররম গিলাফ পরানোর দিন ধার্য করেছে সৌদি প্রশাসন।
ইতিহাসের পর্যালোচনায় দেখা যায়, ইসলাম পূর্ব সময়ে ইয়েমেনের বাদশাহ তুব্বা আবি কারব আসাদ সর্বপ্রথম কাবা শরিফকে গিলাফ দিয়ে ঢাকেন। এজন্য তিনি ইয়েমেনের কাপড় ব্যবহার করেছেন। পরবর্তীতে মক্কা বিজয় হলে বিশ্ব নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাবাকে লাল ও সাদা কাপড়ে ঢেকে দেন।
এরপর বিভিন্ন সময়ে সাদা রংয়ের গিলাফ, লাল গিলাফ, হলুদ গিলাফ ও সবুজ গিলাফ ব্যবহার করা হয়েছে। আর এখন ব্যবহৃত হচ্ছে কালো গিলাফ।
এ বছর এই গিলাফ বা কিসওয়া তৈরিতে প্রতি মিটারে ১০ ধাপে ব্যবহৃত হয় ৯ হাজার ৯০০ রেশমি সুতা। প্রথম ধাপে রেশমি সুতাকে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পানি দিয়ে ধুয়ে নেয়া হয়। পরের ধাপে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পানি দিয়ে ধোয়া হয় যাতে তাতে থাকা মোমজাতীয় বস্তু সরে যায়। তৃতীয় ধাপে সুতার রঙিনের মান যাচাই করা হয়। পরের ধাপে প্রতি মিটারের বুনায় ৯ হাজার ৯০০ সুতা ব্যবহৃত হয়। পঞ্চম ধাপে পবিত্র কুরআনের আয়াতের ছাপ দেওয়া হয়। এর পর হাতের এমব্রয়ডারির মাধ্যমে ওই গিলাপে আয়াত তুলে আনা হয়।
সপ্তম ধাপে কোরআনের আয়াত ও ইসলামিক বাণীগুলো সোনায় মোড়ানো সিলভার সুতা দিয়ে বোনা হয়। এর পর তাদের মান যাচাই করা হয়। নবম ধাপে গিলাফের কাপড়গুলোকে সমন্বয় করা হয়। শেষ এবং দশম ধাপে পুরোনো গিলাফটি সরিয়ে নতুন গিলাফে আবৃত করা হয় কাবা শরিফকে। পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ হয় কাবার শরিফের প্রবেশ দরজায় পর্দা লাগানোর মধ্যে দিয়ে। খবর খালিজ টাইমস।
কাবা শরিফের গিলাফের বাইরের কালো কাপড়ে স্বর্ণমণ্ডিত রেশম সুতা দিয়ে দক্ষ কারিগর দিয়ে ক্যালিগ্রাফি করা হয়। এরপর ঝারনিখ কালি দিয়ে প্রথমে কাপড়ে ক্যালিগ্রাফির আউটলাইন দেওয়া হয়, তারপর কারিগররা হরফের ভেতর রেশম সুতার মোটা লাইন বসিয়ে স্বর্ণের সুতা দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে হরফ ফুটিয়ে তোলেন। গিলাফের কালো জমিনে স্বর্ণের সুতার ঢেউ খেলানো বুননের ক্যালিওগ্রাফির সোনালি আভা এক জান্নাতি আবেশ ছড়িয়ে দেয়। হজরে আসওয়াদের ওপর অংশে আল্লাহু আকবর ক্যালিগ্রাফিসহ বর্তমানে গিলাফের অধিকাংশ ক্যালিগ্রাফি মুখতার শোকদারের হস্তলিখিত।
কাবা শরিফের গিলাফ নির্মাণে যেসব জিনিসপত্র প্রয়োজন সেগুলো তৈরির বিশেষ কারখানা মক্কার উম্মুল জুদ এলাকায় অবস্থিত। নতুন গিলাফ তৈরি করতে দরকার হয় ১২০ কেজি সোনার সুতা, ৭০০ কেজি রেশম সুতা ও ২৫ কেজি রুপার সুতা। গিলাফটির দৈর্ঘ্য ১৪ মিটার এবং প্রস্থ ৪৪ মিটার। গিলাফের সেলাই কাজে অংশগ্রহণ করেন দেড় শতাধিক অভিজ্ঞ দরজি। গিলাফ তৈরিতে ব্যবহার করা হয় বিশেষ মেশিন। কালো সিল্কের কাপড়ের ওপর কোরআনুল কারিমের আয়াত অঙ্কনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় সোনা ও রুপার তৈরি সুতা। কাবা শরিফের গিলাফ তৈরির পর তা বিশেষ বৈদ্যুতিক প্রক্রিয়ায় তাপ দেওয়া হয়। যাতে তা প্রচণ্ড রোদ ও তাপেও অবিকৃত থাকে।
পবিত্র কাবা শরিফের গিলাফ একটি বস্ত্রখণ্ড যা দ্বারা কাবাঘরকে মোড়ানো হয়। বর্তমানে গিলাফ কালো রেশমী কাপড় নির্মিত, যার ওপর স্বর্ণ দিয়ে লেখা থাকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলাল্লাহ’, ‘আল্লাহু জাল্লে জালালুহু’, ‘সুবহানাল্লাহু ওয়া বেহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আযিম’ এবং ‘ইয়া হান্নান, ইয়া মান্নান’।
গোটা গিলাফ, বেল্ট ও অভ্যন্তরীণ পর্দার ১৬টি টুকরায় সোনার আয়াত খচিত আছে। সে ১৬টি টুকরার দৈর্ঘ্য ৪৭ মিটার, প্রস্থ ৯৫ সেন্টিমিটার। কারখানায় গিলাফ তৈরির পর তা কাবা শরিফের চাবির রক্ষক বনি শায়বা গোত্রের মনোনীত সেবকের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে সবার সহযোগিতায় গিলাফ লাগানো হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।