সাধারণ মানুষের কাছে আজও ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর এক রহস্যময় বস্তু। এটি আলোর কণাকে নিজের মাঝে টেনে নেয়। ফলে এটা থেকে কোনো বিকিরণ নির্গত হতে পারে না। ১৯৭৫ সালে স্টিফেন হকিং দেখান যে কৃষ্ণগহ্বর আদতে বিকিরণহীন নয়, বরং কোয়ান্টাম মেকানিকসের নিয়ম প্রয়োগ করে তিনি দেখালেন, এটা কৃষ্ণ বস্তুর মতো বিকিরণ করে। তাঁর বের করা এই ফল তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তিকে তুমুলভাবে নাড়িয়ে দেয় এবং আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের দুটি পরীক্ষিত খুঁটি—কোয়ান্টাম মেকানিকস ও সাধারণ আপেক্ষিকতাকে সাংঘর্ষিক অবস্থানে দাঁড় করিয়ে দেয়।
আমরা কৃষ্ণগহ্বরকে এ রকম বিশেষণ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করলেও আসলে কৃষ্ণগহ্বরকে বিজ্ঞানীরা অন্যভাবে বিশেষায়িত করে থাকেন, এটার জন্য সাধারণ আপেক্ষিকতার কিছু ন্যূনতম জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। সবচেয়ে সহজবোধ্য যে কৃষ্ণগহ্বর, তা আইনস্টাইন তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতার ক্ষেত্র সমীকরণগুলো (Field equation) প্রণয়ন করার খুব অল্প দিনের মধ্যেই গণিতবিদ কার্ল শোয়ার্জশিল্ড একটি সমাধান দিলেন, যাকে আমরা বর্তমানে শোয়ার্জশিল্ড কৃষ্ণগহ্বর বলি। কিন্তু সমাধানটি ১৯১৬ সালে দেওয়া হলেও এর মর্মার্থ বুঝতে বিজ্ঞানীদের আরও প্রায় ৫০ বছরের মতো সময় লেগে যায়।
আইনস্টাইনের সমীকরণগুলোর সঙ্গে আমাদের পরিচিত তড়িৎ চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণের বেশ বড় একটা পার্থক্য আছে। ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণগুলো বরং নিউটনের মাধ্যাকর্ষণের সমীকরণের অনেক ধর্মই প্রদর্শন করে। যেমন: দুটো বৈদ্যুতিক চার্জের জন্য বৈদ্যুতিক বলক্ষেত্র বের করতে গেলে আমরা প্রতিটি চার্জের বলক্ষেত্র আলাদা করে বের করে তারপর সেটা উপযুক্ত নিয়মে যোগ করে লব্ধি বলক্ষেত্র বের করি।
এটাকে আমরা উপরিপাতন (Superposition) প্রক্রিয়া বলি। এই প্রক্রিয়া নিউটনীয় মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যায়। কিন্তু আইনস্টাইনের সমীকরণের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য নয়। এ কারণে সমীকরণগুলোর সমাধান করা অত্যন্ত জটিল হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলাফলে শোয়ার্জশিল্ডের প্রাথমিক আবিষ্কারের পরে অন্য প্রকারের কৃষ্ণগহ্বর বের করতে তাত্ত্বিক পদার্থবিদদের প্রায় ৫০ বছরের মতো লেগেছিল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।