গেল সপ্তাহে লন্ডনে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হবার পর সমালোচকদের কাছ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছে বিশ্বের সর্বোচ্চ আয়কারী সিনেমা ‘অ্যাভাটার’ এর সিক্যুয়েল ‘অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অফ ওয়াটার’।
বিবিসি জানিয়েছে, সিনে সমালোচকদের রেটিংয়ে সিনেমাটি এক ও পাঁচ তারকার মধ্যে উঠনামা করছে।
কারও কাছে মনে হয়েছে সিনেমাটি ‘চোখ ধাঁধানো’। কারও কাছে আবার ‘স্যাঁতসেঁতে’, অর্থাৎ উত্তাপহীন। কারও কারও মন্তব্য অনেক বেশি নির্দয়। একজন একে বলেছেন ‘ট্রিলিয়ন-ডলার স্ক্রিনসেভার’!
জেমন ক্যামেরন পরিচালিত মহাকাব্যিক এই কল্পবিজ্ঞান সিনেমার দ্বিতীয় কিস্তি পর্দায় আসছে ১৬ ডিসেম্বর। সারাবিশ্বের সিনেমাপ্রেমীদের অপেক্ষার পালা ঘুঁচতে চলেছে।
এর আগে ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে মুক্তি পেয়েছিল ‘অভ্যাটার’ এর প্রথম পর্ব। সব রেকর্ড ভেঙে বিশ্বের সর্বোচ্চ আয়ের সিনেমা হিসেবে জায়গা করে নেয় এ সিনেমা।
ক্যামেরনের নিজের ভাষায়, তার ‘অ্যাভাটার; দ্যা ওয়ে অব ওয়াটার’ আরও ‘আবেগময়’। কয়েকবার চিত্রনাট্যও বদল করেছেন তিনি।
কাল্পনিক গ্রহ প্যান্ডোরা বিহারে ক্যামেরন প্রযুক্তির ব্যবহার করেছেন আরও তীক্ষ্ণভাবে। সেই গ্রহের বাসিন্দা না’ভি ফের অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি। এবারের পর্বে পানির নিচের দৃশ্য নির্মাণে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, তা সিনেমার জন্যই তৈরি করা হয়েছে।
এবারের সিনেমাটি দেখে দ্য টেলিগ্রাফের চলচ্চিত্র সমালোচক রবি কলিন ৫ এর মধ্যে ১ দিয়েছেন। তবে দর্শকদের সিনেমাটি দেখতে নিরুৎসাহিত করেননি তিনি, বরং দেখারই পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “সিনেমাটি দেখে মনে হল যেন ফিরোজা রঙের সিমেন্টের ওপর ভাসছি। ক্যামেরন কাহিনী লিখেছেন আরও চারজন গল্পকারকে সঙ্গে নিয়ে। এই ফ্রাঞ্চাইজিতে অর্থপূর্ণ তেমন কিছু ঘটেনি। গুরুত্বপূর্ণ কোনো পরিবর্তনও চোখে পড়ে না। সবকিছু যেন ঘুরেফিরে আগের অবস্থাতেই ফিরেছে।“
এম্পায়ারের লেখক নিক ডি সেমলিন অবশ্য ‘অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অফ ওয়াটার’ দেখে উচ্ছ্বসিত। তার ভাষায়, সিনেমাটি ‘বিদ্যুৎ চমকের মতই’ উপভোগ্য। সেজন্য তিনি রেটিং দিয়েছেন ৫ এ ৫।
“ক্যামরেন তার প্রথম নির্মাণ থেকে বেরিয়ে বড় একটি লাফ দিয়েছেন। এটি কল্পনাপ্রসূত এবং এমন একটি স্বপ্নময় চলচ্চিত্র, যেখানে প্রায় প্রতি মুহূর্তে স্ক্রিনে অসম্ভব কিছু ঘটছে।“
অ্যাভাটার ২ এর দৈর্ঘ্য দাঁড়িয়েছে ৩ ঘন্টা ১৫ মিনিটে। এর দৈর্ঘ্য নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস’ এর সিনেমা সমালোচক ড্যানি লেই রসিকতা করে বলেছেন, এতটা সময়ের মধ্যে কেউ চাইলে ভূ-রাজনীতি, ছুটির পরিকল্পনা, গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক এবং মজাদার কোনো রেসিপি নিয়েও আলোচনা সেরে ফেলতে পারবেন।
দ্য গার্ডিয়ানের পিটার ব্র্যাডশ সিনেমাটি নিয়ে উৎসাহী হওয়ার মত কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি এটাকে ‘ট্রিলিয়ন ডলার স্ক্রিনসেভার’ আখ্যা দিয়েছেন। রেটিংয়ে তিনি দিয়েছেন পাঁচে ২।
ব্র্যাডশ বলেন, “গল্পটি ৩০ মিনিটের একটি কার্টুনের ভেতরেই শেষ করা যায়। কিন্তু এমনভাবে টেনে ব্ড় করা হয়েছে যেন কিছু ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ প্রোগ্রামের মাধ্যেম তিন ঘণ্টার মহাকাব্যিক সিনেমায় পরিণত করা হয়েছে।
দ্য টাইমসের কেভিন মেহেরও সিনেমাটিকে পাঁচে ২ দিয়েছেন। তার ভাষায়, সিনেমাটি দেখতে চমৎকার হলেও আগের অ্যাভাটারের একটি ‘অপ্রয়োজনীয়’ সিক্যুয়াল ছাড়া এটি আর কিছু হয়নি।
মেহেরের কাছে সিনেমার প্রধান চরিত্র সুলিকে ‘একঘেয়ে’ মনে হয়েছে; ওই চরিত্রের চরিত্রায়নে তিনি পুনারাবৃত্তি খুঁজে পেয়েছেন।
দ্যা ভ্যারাইটির ওয়েন গ্লিবারম্যান বলেছেন, ‘অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটারের’ অনেক দৃশ্য দর্শককে চমকে দেবে, মাথা ঘুরিয়ে দেবে এবং হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেবে। কিন্তু চরিত্রগুলোর মধ্যে কোনো ভিন্ন মাত্রা নেই। ভিন্ন মাত্রা যা আছে, সব ওই ছবিতে।
সিনেমাটি অ্যাকশন, আবেগ এবং রোমাঞ্চকর থ্রিডি ভিজ্যুয়াল দেখিয়েছে মন্তব্য করে হলিউড রিপোর্টারের ডেভিড রনি বলেছেন, সাড়ে তিনশ মিলিয়ন ডলার খরচ করে বানানো সিনেমাটি আগেরটির মতই মৌলিক, তবে কিছু ক্ষেত্রে খানিকটা দুর্বল।
অবশ্য না’ভিদের বৈচিত্র্যময় দুনিয়া পৃথিবীর দর্শকদের মুগ্ধ করবে বলেই মনে করছেন তিনি।
তিন তারকা রেটিং দিয়ে মেট্রোর লারুশকা ইভান জাদেহ বলেন,” প্রচুর অ্যাকশন আছে সিনেমায়। চরিত্রগুলো নিয়ে আরেকটু যুত্ন নেওয়া দরকার ছিল, কিন্তু এ ধরনের সিনেমায় এটা কঠিনও বটে। “
তার মতে, সিনেমাটি যথেষ্ট ‘চমক’ তৈরি করেছে। এ সিনেমা দেখা যেন আনেকটা তিন ঘণ্টার থিম পার্ক রাইডের মত একটা ব্যাপার।
এলএ টাইমস-এর জাস্টিন ল্যাং নির্মাতা ক্যামেরনের প্রশংসা করেছেন; বলেছেন, “তিনি আপনাকে গভীরে টেনে নিয়ে যাবেন, এতটা মুদুভাবে টেনে নেবেন যে, মাঝে মাঝে টেরই পাবেন না আপনি সিনেমা দেখছেন।”
অনলাইন পত্রিকা ‘ইনিডিওয়্যার’ এর সাংবাদিক ডেভিড এহরলিচ সিনেমাটিকে ‘আনন্দময়’ ও ‘আশ্চর্যজনক’ বলেছেন। তার ভাষায়, সিনেমা হলগুলোতে যা কিছু চলছে, তার কোনোটির সাথে এর তুলনা চলে না।
বিনোদন ওয়েবসাইট ডিজিটাল স্পাইয়ের ইয়ান স্যান্ডওয়েল এ সিনেমাকে একটি ‘ভিজ্যুয়াল মাস্টারপিস’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা কিনা দেখতে সুন্দর।
ইভনিং স্ট্যান্ডার্ড-এর শার্লট ও’সুলিভান চারতারকা রেটিং দিয়েছেন। তার মতে গল্প অনুযায়ী সিনেমাটি টিকে গেছে। তবে অতটা খারাপও হয়নি।
ডেইলি মেইলের ব্রায়ান ভিনারও সিনেমাটি নিয়ে আশাবাদী। তার ভাষ্য. এই সিক্যুয়ালটি ‘অসাধারণ’।
অ্যাভাটারের এ পর্বেও গুরুত্ব পেয়েছে সুলি পরিবারের গল্প। এবারও জেক সুলি ও না’ভি নেইতিরির ভূমিকায় আছেন স্যাম ওয়ার্থিংটন ও জো সালদানা।
তাদের চার সন্তান। শিশুকাল থেকেই তাদের দক্ষ না’ভি হিসেবে গড়ে তুলতে চলছে জেকের অবিরাম চেষ্টা। তাদের বসবাস এক খনিজ পর্দাথে পরিপূর্ণ অনিন্দ্য সুন্দর এক দ্বীপে।
সুলির বিপক্ষ দল হিসেবে পর্দায় এসেছে ‘স্কাই পিপল’। যাদের চেষ্টা পৃথিবীর মানুষের যাতে অনুপ্রবেশ ঘটে সেখানে।
মানুষদের আটকাতে জেক ও তার পরিবার ‘মেটকাইনা’ গোষ্ঠীর সঙ্গে জোট বাঁধে। ‘মেটকাইনা’ হল জলজ পরিবেশে বাস করা অ্যাভাটার, যারা দেখতে অনেকটা না’ভিদের মতোই। তারা সমুদ্রের নিচের লম্বা গলার প্রাণীদের বাহন বানিয়ে ঘুরে বেড়ায়।
না’ভি ও ‘মেটকাইনা’র গল্প নিয়ে এগিয়েছে এবারের ‘অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অফ ওয়াটার’ এর গল্প।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।