বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বে যারা উঠে এসেছেন, তাদের মধ্যে আশিক চৌধুরী একটি ব্যতিক্রমধর্মী নাম। একজন আন্তর্জাতিক ব্যাংকার, পেশাদার স্কাইডাইভার এবং এখন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান – আশিক চৌধুরীর জীবনের প্রতিটি পর্ব যেন একটি অনুপ্রেরণার গল্প। তাঁর এই বহুমাত্রিক পরিচয় ও অবিশ্বাস্য যাত্রা আজ আমাদের দেশের তরুণদের জন্য এক নতুন দৃষ্টান্ত।
আশিক চৌধুরী: ব্যতিক্রমী নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি
আশিক চৌধুরী নামটি শুধুই একজন কর্মকর্তা বা আমলাতান্ত্রিক পরিচয় বহন করে না; বরং তা এক সাহসী ও উদ্ভাবনী নেতৃত্বের প্রতীক। চাঁদপুরে জন্ম নিয়ে যশোরে বেড়ে ওঠা এই গুণী ব্যক্তিত্বের শিক্ষা জীবনের সূচনা হয় সিলেট ক্যাডেট কলেজে। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং তারপরে লন্ডন বিজনেস স্কুল থেকে ফাইন্যান্সে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এছাড়া তিনি একজন চার্টার্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্ট (CFA)।
Table of Contents
তাঁর পেশাগত জীবনের শুরু হয় ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোতে, এরপর স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, আমেরিকান এয়ারলাইন্স, এবং এইচএসবিসির মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে। ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিনি সিঙ্গাপুরে এইচএসবিসির ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিং বিভাগে সহযোগী পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
তার নেতৃত্বগুণ এবং আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে সরকার তাঁকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়। এর মাধ্যমে তিনি লোকমান হোসেন মিয়ার স্থলাভিষিক্ত হন।
একজন স্কাইডাইভারের অবিশ্বাস্য কীর্তি
ব্যাংকার হিসেবে যেমন তাঁর পেশাগত অর্জন বিস্ময়কর, তেমনি ব্যক্তি আশিক চৌধুরীর আরও একটি বিস্ময়কর পরিচয় রয়েছে – তিনি একজন লাইসেন্সপ্রাপ্ত স্কাইডাইভার। থাইল্যান্ডে দীর্ঘ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তিনি স্কাইডাইভিংয়ে দক্ষতা অর্জন করেন এবং ২০২৪ সালের ২৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের মেমফিসে ৪১,৭৯৫ ফুট উচ্চতা থেকে বাংলাদেশের পতাকা হাতে লাফ দিয়ে গড়ে তোলেন একটি গিনেস বিশ্ব রেকর্ড।
এই রেকর্ড ‘গ্রেটেস্ট ডিস্টেন্স ফ্রি ফল উইথ এ ব্যানার বা ফ্ল্যাগ’ বিভাগে স্বীকৃত হয়। এই অসাধারণ কীর্তির পেছনে ছিল ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (UCB) এর আর্থিক সহায়তা এবং প্রথম আলোসহ আরও কিছু গণমাধ্যমের অংশগ্রহণ।
এই রকম দুঃসাহসিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি শুধু দেশের প্রতিনিধিত্বই করেননি, বরং তরুণদের মনে সাহস ও সৃজনশীলতা জাগিয়ে তুলেছেন।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (BIDA) বর্তমানে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা তৈরির অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আশিক চৌধুরীর মতো একজন আন্তর্জাতিক মানের পেশাজীবী আসা নিঃসন্দেহে এক নতুন যুগের সূচনা করে।
বিডার চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি প্রযুক্তিনির্ভর, দক্ষ এবং স্বচ্ছতানির্ভর একটি সেবা ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছেন। একইসাথে তিনি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (BEZA) নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
৭ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে তাকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হয়, যা তার নেতৃত্বের মূল্যায়ন এবং অঙ্গীকারকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়।
পেশাগত ব্যস্ততা ও স্কাইডাইভিংয়ের রোমাঞ্চকর জীবনযাপনের বাইরে আশিক একজন পারিবারিক মানুষ। তার স্ত্রী নাবিলা, যিনি ঢাবির আইবিএর স্নাতক, এবং তাঁদের এক পুত্র ও কন্যা – এই পরিবারই আশিকের জীবনের পরিপূর্ণতা এনে দিয়েছে।
আশিক চৌধুরীর বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা
আশিকের অভিজ্ঞতার ভাণ্ডারে শুধু কর্পোরেট বিশ্বেই নয়, রয়েছে শিক্ষাক্ষেত্র ও নীতিনির্ধারণী স্তরেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
এই বৈচিত্র্যময় পটভূমি তাকে একজন হোলিস্টিক লিডার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে, যিনি কেবল প্রশাসনিক দক্ষতাই নয়, বরং মানবিক মূল্যবোধ, সামাজিক দায়িত্ববোধ ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগেও পারদর্শী।
FAQs
আশিক চৌধুরী কে?
আশিক চৌধুরী একজন বাংলাদেশি ব্যাংকার, স্কাইডাইভার এবং বর্তমানে বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান।
তিনি কিভাবে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন?
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে সরকার তাঁকে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়, তার আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে।
তাঁর শিক্ষা ও পেশাগত পটভূমি কেমন?
তিনি সিলেট ক্যাডেট কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ এবং লন্ডন বিজনেস স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। পেশাগতভাবে HSBC, American Airlines, এবং Standard Chartered এ কাজ করেছেন।
আশিক চৌধুরীর স্কাইডাইভিং রেকর্ড কী?
২০২৪ সালের মে মাসে মেমফিসে তিনি ৪১,৭৯৫ ফুট উচ্চতা থেকে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে স্কাইডাইভ করেন এবং গিনেস রেকর্ড অর্জন করেন।
তিনি বর্তমানে আর কী দায়িত্বে রয়েছেন?
বিডার পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এর নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
তাঁর পারিবারিক জীবন কেমন?
তিনি নাবিলার সাথে বিবাহিত এবং তাদের একটি মেয়ে ও একটি ছেলে রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।