নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার এক নির্মিত সংযোগ সড়ক নিয়ে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ২ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই সড়কে মাত্র সাতদিনের মাথায় কার্পেটিং উঠে যেতে শুরু করেছে। অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প বাস্তবায়নে শুরু থেকেই দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, পৌর এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ওয়াদ্দাদিঘী পূর্ব-দক্ষিণ দিক থেকে মন্ডলবাড়ি হয়ে বরমী-শ্রীপুর আঞ্চলিক সড়কের সংযোগস্থল পর্যন্ত সড়কের মাঝ বরাবর জায়গায় হাত দিয়েই কার্পেটিং উঠিয়ে ফেলা যাচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, এতটাই নরম যে পা দিয়েও খসিয়ে নেওয়া সম্ভব।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কাজ শুরুর পর থেকেই মান নিয়ে প্রশ্ন ছিল। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রানা ট্রেডার্স বরাবরই নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে কাজ করেছে। অভিযোগ উঠেছে, বেজমেন্টে ব্যবহৃত হওয়া কথা ছিল খোয়া মেশানো বালু, কিন্তু দেওয়া হয়েছে কাদামাটিযুক্ত বালু। কার্পেটিংয়ের পুরুত্ব ছিল অনিয়মতান্ত্রিক, বিটুমিনও দেওয়া হয়েছে কম। এতে প্রকল্পের পুরো সড়কটি এখন অনিয়ম-দুর্নীতির নজির হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, জনগণের টাকায় নির্মিত এই সড়ক বাস্তবায়নে পৌরসভা এবং সংশ্লিষ্টদের নজরদারি ছিল অত্যন্ত দুর্বল। ফলে কাজ শেষ হওয়ার মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে সড়ক নরম হয়ে কার্পেটিং উঠে যাওয়া বড় ধরনের অনিয়মের ইঙ্গিত দেয়।
এমন পরিস্থিতির প্রতিবাদ জানিয়ে এলাকাবাসী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিলে বিষয়টি নজরে আসে উপজেলা প্রশাসনের। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিদর্শনেও যান সড়কটি।
অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদার এমদাদ হোসেন বলেন, “কার্পেটিং শক্তভাবেই হয়েছে। বরং কয়েকজন স্থানীয় আমার কাছে ধান্দা ফিটিং (চাঁদা) চেয়েছিল। আমি না দেওয়ায় তারাই কার্পেটিং তুলে ফেলে অপপ্রচার করছে। তবু কোথাও সমস্যা থাকলে আমি ঠিক করে দেব।”
তবে এলাকাবাসী এই দাবিকে পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলছেন। মন্ডল পাড়ার বাসিন্দা আরিফ মিয়া বলেন, “সড়কে পোড়া মবিল মেশানো বিটুমিন, নিম্নমানের খোয়া ও ভেজা কাদা দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। কাজের শুরু থেকেই দুর্নীতি হয়েছে, যার প্রমাণ আজকের উঠে যাওয়া কার্পেটিং। এখন আবার দায় চাপানো হচ্ছে বৃষ্টির ওপর।”
শ্রীপুর পৌরসভার প্রকৌশলী শাহেদ মজুমদার বলেন, “আমি অসুস্থ থাকলেও বিষয়টি জানার পর পরিদর্শন করেছি। কিছু জায়গায় কার্পেটিং উঠে গেছে। বৃষ্টির পরে সেগুলো ঠিক করা হবে। দুর্নীতির কোনো প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে, ঠিকাদার কত টাকা বিল নিয়েছেন, জানতে চাইলে তা জানাননি তিনি।
জানা গেছে, পুরো প্যাকেজের আওতায় আরও দুটি প্রকল্পসহ এই ২ কিমি সড়কের বরাদ্দ ছিল ৩ কোটির কিছু বেশি। এর মধ্যে রানা ট্রেডার্স ইতোমধ্যে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা উত্তোলন করেছে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সরাসরি মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে বলেন, “রাস্তার কাজের বিষয়ে প্রকৌশল বিভাগ কথা বলবে। বিস্তারিত জানতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।