কোয়ান্টাম কম্পিউটারের প্রসেসিং পাওয়ার থাকার সম্ভাবনা প্রচলিত কম্পিউটারের চেয়ে অনেক অনেক গুণ বেশি। অর্থাৎ যত বেশি কিউবিট থাকবে, গণনা করার ক্ষমতাও পাওয়া যাবে তত বেশি। আর এই ক্ষমতা বাড়তে থাকে সূচকীয় হারে। তবে প্রসেসিং পাওয়ার সূচকীয় হারে বাড়ানোর জন্য কিউবিটগুলো এনট্যাঙ্গলডও হতে হবে। ভাবছেন, সেটা আবার কী?
সহজ কথায়, কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গলমেন্টে হলো অতিপারমাণবিক কণাগুলোর একটি অবস্থা বা দশা, যেখানে তারা পরস্পর বিজড়িত অবস্থায় থাকে। তাদের মধ্যে একটা সংযোগ থাকে। বলা যায়, পরস্পরের মধ্যে থাকে একটা অদৃশ্য সংযোগ। কণাগুলোর মাঝখানের দূরত্ব যা-ই হোক না কেন, এই যোগাযোগে কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। ব্যাপারটা যত সহজে বলা গেল, প্রক্রিয়াটি আসলে ততটাই জটিল। কাজেই একটা কিউবিট সম্পর্কে তথ্য জানা গেলে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে এনট্যাঙ্গল দশার অন্য কণাটি সম্পর্কে জানা সম্ভব।
ব্যাপারটা সংক্ষেপে এভাবে বলা যায়: ধরা যাক, দুটি ইলেকট্রন পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। তারা একই ঐক্যতানে কাঁপছে। অর্থাৎ একই কম্পাংকে। ধরা যাক, তাদের মোট স্পিনের যোগফল শূন্য। একটি ইলেকট্রন যদি ঘড়ির কাঁটা বরাবর ঘোরে, তাহলে অন্যটা ঘুরবে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে। কারণ তাহলেই মোট স্পিন শূন্য হবে।
এবার ইলেকট্রন দুটিকে যদি আমরা আলাদা করে একটাকে অনেক দূরে পাঠিয়ে দিই (ধরা যাক, মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির অন্য প্রান্তে), তাহলেও তাদের মোট স্পিন শূন্যই থাকবে। কিন্তু পরিমাপ করার আগপর্যন্ত আমরা জানতে পারব না, কোন ইলেকট্রনটি ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং কোনটি ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘুরছে। এখন আমাদের কাছে থাকা ইলেকট্রনটার স্পিন যদি মাপি, তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই বুঝে যাব গ্যালাক্সির অন্য প্রান্তের ইলেকট্রনটার স্পিন কী। পদার্থবিদদের ভাষায় এর মানে দাঁড়াচ্ছে, এই দুই ইলেকট্রনের মধ্যে তথ্যটা বাহিত হচ্ছে তাৎক্ষণিকভাবে। এমনকি এই তথ্যপ্রবাহের গতি আলোর বেগের চেয়েও বেশি। একেই বলে কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গেলমেন্ট বা কোয়ান্টাম বিজড়ন।
এককালে কোয়ান্টাম তত্ত্বের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকতে এই মানস পরীক্ষাটি করেছিলেন স্বয়ং আইনস্টাইন। আইনস্টাইনের যুক্তি ছিল, বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব অনুযায়ী যেহেতু কোনো কিছুই আলোর চেয়ে বেশি বেগে চলতে পারে না, কাজেই কোয়ান্টাম তত্ত্ব ত্রুটিপূর্ণ। একে বলা হয় ইপিআর প্যারাডক্স। ব্যাপারটা নিয়ে আইনস্টাইন ও নীলস বোরের মধ্যে ব্যাপক তর্কবির্তক থাকলেও একেই এখন কোয়ান্টাম কম্পিউটারে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোয়ান্টাম কম্পিউটারের কিউবিটগুলো যদি পরস্পর থেকে অনেক দূরে আলাদা থাকে, তবু তারা পরস্পরের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে। আর এটাই কোয়ান্টাম কম্পিউটারকে দারুণ কম্পিউটেশনাল ক্ষমতা দিতে পারে।
কারণ কোয়ান্টাম কম্পিউটারে যখনই আরেকটা কিউবিট যোগ করা হয়, তখন তা আগের সব কিউবিটের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করবে। ফলে সম্ভাব্য মিথস্ক্রিয়ার সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যায়। তাই কোয়ান্টাম কম্পিউটার সহজাতভাবেই ডিজিটাল কম্পিউটারের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। যেমন বর্তমানে কোয়ান্টাম কম্পিউটারে ১০০ কিউবিটের বেশি থাকতে পারে। তার মানে, সেগুলো এক কিউবিটের সুপার কম্পিউটারের চেয়ে ২১০০ গুণ বেশি শক্তিশালী হওয়া সম্ভব।
বর্তমানে কোয়ান্টাম কম্পিউটার নিয়ে প্রযুক্তি বিশ্বের জায়ান্ট কোম্পানিগুলো গবেষণা করছে। কাজ করার উপযোগী কিছু কোয়ান্টাম কম্পিউটারও তৈরি করা হয়েছে। এদের কম্পিউটেশনাল ক্ষমতা দেখে চোখ বন্ধ করে বলা যায়, কোয়ান্টাম কম্পিউটার ভবিষ্যতে প্রযুক্তি বিশ্বের খোলনলচে বদলে দেবেই দেবে। আজকের বিট তখন হয়ে যাবে সেকেলে ব্যাপার, সবাই কথা বলবে, হিসেব-নিকেষ করবে কিউবিটে—চোখের পলক ফেলার আগেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।