কোয়ান্টাম বাস্তবতা ও মাল্টিভার্সঅব বার্সেলোনার একদল তাত্ত্বিক পদার্থবিদ। গত বছরের ৩০ অক্টোবর ফিজিক্যাল রিভিউ লেটার এক্স জার্নালে এ-বিষয়ক গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়। কোয়ান্টাম বলবিদ্যার প্রবাদ পুরুষ অস্ট্রিয়ান পদার্থবিদ আরউইন শ্রোডিঙ্গার। ১৯৩০-এর দশকে অদ্ভুত এক মানস-পরীক্ষার কথা বলেন তিনি।
ধরে নিন, বাক্সের মধ্যে একটা বিড়াল রাখা আছে। আবার বাক্সের মধ্যে এমন এক বিষাক্ত পদার্থ আছে, যা খেলে বিড়ালটি মারা যাবে। কিন্তু বিড়ালটি মারা গিয়েছে কি না, তা বাক্স না খোলা পর্যন্ত বলা সম্ভব নয়। সত্যিকার মানস-পরীক্ষাটি আরেকটু জটিল, আরেকটি বিস্তৃত, তবে সহজে বুঝতে এটুকুই যথেষ্ট। এখানে বাক্স খোলা না হলে বলা সম্ভব নয়, বিড়ালটি জীবিত নাকি মৃত। তার মানে, একই সঙ্গে বিড়ালটি বেঁচে আছে, আবার মরেও গেছে।
কিন্তু বাক্সটি খুলে আপনি যখনই বিড়ালটিকে দেখবেন, তখন যেকোনো এক অবস্থায় পাওয়া যাবে বিড়ালটিকে। এর আগ পর্যন্ত বিড়ালটির অবস্থা নিশ্চিত করে বলার কোনো সুযোগ নেই। প্রশ্ন হলো, তাহলে বাক্স খুললে কেন অনিশ্চিত অবস্থাটা আমরা দেখতে পাব না? বাক্সের ভেতর বিড়ালটি একই সঙ্গে দুটি অবস্থায় থাকলে বাক্স খোলার পর বা দর্শকের উপস্থিতিতে বিড়ালের আরেকটি অবস্থার পরিণতি কী হয়?
সহজ ভাষায় এটাই শ্রোডিঙ্গারের বিড়াল প্যারাডক্স। শ্রোডিঙ্গার এখানে পদার্থের কোয়ান্টাম অবস্থা বোঝাতে বিড়ালের উদাহরণ ব্যবহার করেছিলেন। প্যারাডক্স হলেও শ্রোডিঙ্গারের এ সমস্যা বহু যুগ ধরে ভাবাচ্ছে পদার্থবিজ্ঞানীদের। গত প্রায় ১০০ বছরে অনেকেই নানা তত্ত্ব নিয়ে হাজির হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত হালে পানি পায়নি কোনোটিই। ফলে এখনো অমীমাংসিতই রয়ে গেছে এই হেঁয়ালি।
নতুন এ গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, কোয়ান্টাম সিস্টেমের প্রতিটি সম্ভাবনাই নতুন একটি মহাবিশ্বের জন্ম দেয়। অর্থাৎ মাল্টিভার্স বা বহু মহাবিশ্বের মাধ্যমে শ্রোডিঙ্গারের হেঁয়ালির উত্তর দিয়েছেন তাঁরা। আর তাতেই দর্শকের সামনে কেন কোয়ান্টাম ব্যবস্থার শুধু একটি দশা ধরা পড়ে, তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।
নতুন এ গবেষণায় তাঁরা দেখিয়েছেন, কোয়ান্টাম এন্টেঙ্গেলড কণা বা শ্রোডিঙ্গারের বিড়ালের প্রতিটি অবস্থার আলাদা আলাদা সমীকরণ রয়েছে, যেখান থেকে কণার একাধিক অবস্থা বোঝা সম্ভব। অর্থাৎ বিড়ালটি একই সঙ্গে জীবিত অথবা মৃত থাকবে। একই সঙ্গে দুটি অবস্থায় থাকবে না।
তাঁদের গবেষণা অনুযায়ী, কোয়ান্টাম সিস্টেমে কণার প্রতিটি অবস্থা একই সঙ্গে সঠিক। কণার ভিন্ন ভিন্ন অবস্থা একেকটি আলাদা বা নিজস্ব মহাবিশ্বের প্রতিনিধিত্ব করে। যখন কোনো অবস্থা আমরা পর্যবেক্ষণ করি বা আমাদের সঙ্গে নিজস্ব স্থির বিশাল বাস্তবতা যুক্ত হয়, তখন তা আমাদের কাছে বাস্তব হয়ে ওঠে। কোয়ান্টাম সিস্টেমের বাকি অবস্থাগুলো তখন আর আমাদের কাছে দৃশ্যমান হয় না।
মাল্টিভার্স বা বহুজগতের সংযোগটা ঘটে অতিক্ষুদ্র স্তরে, খুব অল্প সময়ের জন্য। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সব ঘটনা যেহেতু অনেক বড় পরিসরে ঘটে, তাই বহু মহাবিশ্বের বিষয়টি আমাদের কাছে দৃশ্যমান নয়। এভাবেই বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাঁরা।
এতে কি সমস্যার সমাধান হয়ে যায়? একদম না। তাঁরা যে বেশ যৌক্তিক সমাধান দাঁড় করিয়েছেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এ গবেষণায় সাধারণ আপেক্ষিকতার বিষয়গুলো আমলে নেওয়া হয়নি। কোয়ান্টাম অনিশ্চয়তা ঠিক কীভাবে আমাদের বাস্তব জীবনকে প্রভাবিত করে, তাও জানা যায় না এ গবেষণা থেকে।
এ গবেষণাটি গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য ক্ষুদ্র জগতের পাশাপাশি বিশাল বাস্তব জীবনের পদার্থবিজ্ঞানের সঙ্গে তাঁদের ফলাফল মেলানো প্রয়োজন। কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের প্রথমদিকে অনিশ্চয়তা নিয়ে কিছুটা বিরক্ত হয়ে আইনস্টাইন বলেছিলেন, ‘গড ডাজ নট প্লে ডাইস’, অর্থাৎ ‘ঈশ্বর পাশা খেলেন না।’
প্রতিটি বিষয়েরই সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা আছে বলে বিশ্বাস করতেন এই বিজ্ঞানী। আইনস্টাইনের সেই কথার পর প্রায় ১০০ বছর পেরিয়ে গেলেও মেলেনি সব বিষয়ের ব্যাখ্যা। নতুন এ গবেষণা ভাবনার খোরাক জোগালেও চূড়ান্ত ফলাফল দিতে পারছে না এখনই। শ্রোডিঙ্গারের বিড়ালকে সে ক্ষেত্রে আরও কিছু দিন অনিশ্চয়তার মধ্যেই থাকতে হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।