ধর্ম ডেস্ক : তাকদির—একটি শব্দ, যা অনেকের মনে ভয় ও আশা দুটোই জাগায়। কিন্তু কোরআনের আলোকে জীবন পরিবর্তন কি শুধুই আল্লাহ্র নির্ধারণ? নাকি মানুষের নিজস্ব কর্ম ও সিদ্ধান্তেরও একটা বড় ভূমিকা রয়েছে? চলুন, কোরআনের আলোকে আমরা অনুসন্ধান করি সেই ৫টি বিষয় যা মানুষের তাকদির পরিবর্তনে মুখ্য ভূমিকা রাখে।
কোরআনের আলোকে জীবন পরিবর্তন: কীভাবে তাকদির বদলায়?
কোরআন একাধিকবার স্পষ্ট করে বলেছে, আল্লাহ্ কাউকে তার অবস্থান পরিবর্তন করে দেন না যতক্ষণ না সে নিজেই নিজের ভেতরের পরিবর্তন আনে (সূরা রা’দ, আয়াত ১১)। এটি প্রমাণ করে, কোরআনের আলোকে জীবন পরিবর্তন মানে কেবল ভাগ্যের উপর নির্ভর না থেকে ব্যক্তিগত পরিবর্তনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া। কোরআনের এই দৃষ্টিকোণ মানুষকে আত্মশুদ্ধির ও আত্মউন্নতির পথে অগ্রসর হতে উৎসাহিত করে।
১. নিয়ত বা অভিপ্রায় পরিবর্তন
যেকোনো কাজের পেছনে ‘নিয়ত’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাদিসে বলা হয়েছে, “সব কাজই নিয়তের উপর নির্ভর করে।” কোরআন বলছে, আল্লাহ্ অন্তরের কথা জানেন (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২৮৪)। সৎ নিয়ত ও দৃঢ় সংকল্প জীবনে আশ্চর্যজনক পরিবর্তন আনতে পারে।
২. দোয়া ও প্রার্থনা
দোয়া তাকদির পরিবর্তনের অন্যতম মাধ্যম। কোরআনে বলা হয়েছে, “তোমাদের প্রভুকে ডাকো বিনয় ও গোপনে; তিনি সীমা লঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।” (সূরা আল-আরাফ, আয়াত ৫৫)। আল্লাহ্ দোয়ার মাধ্যমে বান্দার প্রতি করুণা করেন এবং তার অবস্থা পরিবর্তন করে দেন।
৩. আমল ও সৎকর্ম
কোরআন বহুবার সৎকর্মের গুরুত্ব দিয়েছে। “যে কেউ একটি নেক কাজ করবে, সে তা দশগুণ পাবে।” (সূরা আল-আনআম, আয়াত ১৬০)। নিয়মিত সালাত, দান, সদাচরণ ও নিষ্ঠাবান জীবনযাপন ব্যক্তিকে নৈতিক ও সামাজিকভাবে উন্নীত করে, যা তাকদির বদলের পথ তৈরি করে।
৪. শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জন
কোরআনের প্রথম অবতীর্ণ আয়াতই ছিল “ইকরা”—অর্থাৎ পড়ো। জ্ঞান অর্জন মানুষের চিন্তা-ভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেয়। একটি শিক্ষিত মন ভবিষ্যৎ গঠন করতে পারে, যেটি আল্লাহ্র রহমতের দরজা খুলে দেয়।
৫. ধৈর্য ও শোকর
ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতা—দুইটি গুণই তাকদিরে পরিবর্তন আনতে পারে। “যারা ধৈর্য ধরে, আল্লাহ্ তাদের সীমাহীন প্রতিদান দেবেন।” (সূরা আল-জুমার, আয়াত ১০)। কৃতজ্ঞতা আল্লাহ্র নিয়ামতের পরিমাণ বাড়ায়। (সূরা ইবরাহিম, আয়াত ৭)।
মানবজীবনে কোরআনের দিকনির্দেশনা ও বাস্তব প্রভাব
কোরআনের আলোকে জীবন পরিবর্তন শুধু আধ্যাত্মিক নয়, বাস্তব জীবনের নানা ক্ষেত্রেও তাৎপর্যপূর্ণ। যেমন:
- ব্যক্তিগত উন্নয়ন: আত্মশুদ্ধি ও নৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে জীবন গঠন।
- পারিবারিক শান্তি: ইসলামিক মূল্যবোধে গঠিত পরিবারে থাকে সম্মান ও দায়িত্ববোধ।
- সামাজিক সম্প্রীতি: দয়া, ইনসাফ ও সহানুভূতির ভিত্তিতে গঠিত সমাজ উন্নত হয়।
কোরআনের দিকনির্দেশনায় চললে মানুষের তাকদির—এবং পুরো জাতির ভবিষ্যৎ বদলানো সম্ভব।
জেনে রাখুন-
১. কোরআনের আলোকে জীবন পরিবর্তন কীভাবে সম্ভব?
সৎ নিয়ত, দোয়া, জ্ঞান অর্জন, সৎকর্ম এবং ধৈর্য কোরআনের দৃষ্টিতে জীবনকে নতুন দিশা দেয়।
২. দোয়া কি সত্যিই তাকদির বদলাতে পারে?
হ্যাঁ, কোরআন ও হাদিস অনুযায়ী দোয়া তাকদিরে প্রভাব ফেলতে পারে। আল্লাহ্ দোয়া কবুলের মাধ্যমে অবস্থা পরিবর্তন করেন।
৩. শিক্ষার গুরুত্ব কীভাবে তাকদিরে প্রভাব ফেলে?
শিক্ষা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাচেতনায় পরিবর্তন আনে, যা জীবনের সুযোগ ও সফলতার সম্ভাবনা বাড়ায়।
৪. ধৈর্য ও শোকরের ফলে কী উপকার হয়?
ধৈর্য মানুষের অন্তর্গত শক্তি বৃদ্ধি করে, আর কৃতজ্ঞতা আল্লাহ্র নিয়ামত বাড়ায়, যা তাকদিরে সরাসরি প্রভাব ফেলে।
৫. তাকদির কি একেবারেই অপরিবর্তনীয়?
কোরআন অনুযায়ী, নির্দিষ্ট কিছু ভাগ্য আল্লাহ্র হাতে থাকলেও, মানুষের নিজ উদ্যোগ ও দোয়া তাকদিরে পরিবর্তন আনতে পারে।
মানুষের জীবন কোরআনের আলোকে পরিবর্তন সম্ভব, যদি সে নিজের অভিপ্রায় ও কর্মে সৎ থাকে। কোরআনের নির্দেশনার আলোকে জীবন গঠনের মাধ্যমে তাকদিরও নতুন করে রচিত হতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।