ঈদুল আজহা সকল মুসলিমদের জন্য ত্যাগ ও আনন্দের দিন। ইসলাম আনন্দ-উৎসবের এ দিনকে ইবাদত-বন্দেগি দ্বারা মাহাত্ম্যপূর্ণ করেছে। এ দিনে আমাদের জন্য রয়েছে বেশ কিছু করণীয় ও বর্জনীয়। এসব বিষয় মেনে চললে আমাদের সকলের জন্য শৃঙ্খলা বজায় রেখে ঈদের দিন অতিবাহিত করা সহজ হয়।
ঈদের দিনে বর্জনীয় বিষয়সমূহ :
১. ঈদের দিনে সিয়াম নিষিদ্ধ : সহিহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনে রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন। সুতরাং ঈদের দিন সিয়াম বা রোজা পালন করা যাবে না।
২. বিজাতীয় আচরণ হারাম : ঈদ নামক পবিত্র একটি ইবাদতকে আকাশ সংস্কৃতি ও বিজাতীয় আচরণের মাধ্যমে মুসলিম সমাজে অপসংস্কৃতি ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। পোশাক-পরিচ্ছদে, চাল-চলনে, শুভেচ্ছা বিনিময়ে অমুসলিমদের অন্ধ অনুকরণে লিপ্ত হয়ে পড়েছে মুসলমানদের অনেকেই। হাদিসে এসেছে- আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাথে সাদৃশ্যতা রাখবে সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে (আবু দাউদ : ৪০৩৩)।
৩. পুরুষ নারীর বেশ ও নারী পুরুষের বেশ ধারণ : পোশাক-পরিচ্ছদ, চাল-চলন ও সাজ-সজ্জার ক্ষেত্রে পুরুষের নারীর বেশ ধারণ ও নারীর পুরুষের বেশ ধারণ হারাম। ঈদের দিনে এ কাজটি অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়। হাদিসে এসেছে- ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত: রাসূলে করিম (সা.) পুরুষের বেশ ধারণকারী নারী ও নারীর বেশ ধারণকারী পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন (আবু দাউদ : ৪০৯৯)।
৪. নারীদের রাস্তাঘাটে বের হওয়া : ঈদের দিনে নারীদের বেপর্দায় রাস্তা-ঘাটে বের হওয়া যাবে না । এ বিষয়ে কুরআনে বলা হয়েছে,‘আর তোমরা নিজ ঘরে অবস্থান করবে এবং প্রাচীন মূর্খতার যুগের মতো নিজেদের প্রদর্শন করে বেড়াবে না।’ (সূরা আহযাব : ৩৩) নারীগণ পর্দা পালন করে বের হবে।
৫. অশ্লীল গান-বাজনা, সিনেমা ও নাটক দেখা : ঈদ উপলে বিশেষ নাটক, সিনেমা ও বিভিন্ন গান বাজনা-যা ইসলাম অনুমোদন করে না, তা থেকে বিরত থাকতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আমার উম্মতের মাঝে এমন একটা দল পাওয়া যাবে যারা ব্যভিচার, রেশমি পোশাক, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল (বৈধ) মনে করবে (সহিহ বুখারী : ৫৫৯০)।
৬. ঈদুল আজহায় পশুর রক্ত, আবর্জনা ও হাড় থেকে যেন পরিবেশ দূষিত না হয়, সেদিকে প্রত্যেক মুসলমানের সতর্ক হওয়া উচিত। কোরবানি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্ত, আবর্জনা ও হাড় নিরাপদ দূরত্বে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলে দিতে হবে। বেশির ভাগ লোকই নিজস্ব জায়গায় পশু জবাই করে। এতে অলিগলিতে বর্জ্য যেমন পড়ে, তেমনি রক্ত পড়ে দূষিত হয় পরিবেশ, চলাচলের অনুপযোগী হয় রাস্তাঘাট।
ঈদে করণীয় বিষয়সমূহ :
১. ঈদের দিন ভোরে ঘুম থেকে জাগা ও ফজরের নামাজ জামায়াতে আদায় করা : মনে রাখা দরকার ঈদের নামাজের চেয়েও ফজরের নামাজের গুরুত্ব বেশি। অথচ আমাদের দেশে অনেকেই ফজরের নামাজ আদায় করে না। ঈদের জমায়াতের জন্য ফজরের নামাজ জামায়াতে পড়ার গুরুত্বও দেয়না।
২. তাকবীর পাঠ করা : তাকবীর পাঠ করার মাধ্যমে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করা হয়। কুরআনে এসছে, আল্লাহ তোমাদের সহজ চান, কঠিন চাননা, আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ করতে পারো এবং তিনি তোমাদের যে, হিদায়াত দিয়েছেন তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব প্রকাশ কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর। [সূরা বাকারা-১৮৫]। তাকবীর হলো ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ’ বাক্যটি উচ্চস্বরে পড়া।
৩. ঈদের দিন গোসল করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা : ঈদের দিন গোসল করার মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা একান্ত প্রয়োজন। কেননা এ দিনে সকল মানুষ সালাত আদায়ের জন্য মিলিত হয়। ইবনে উমার (রা.) থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত যে তিনি ঈদের দিনে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন। (সুনান বায়হাকী : ৫৯২০)।
৪. নতুন ও সাধ্যমত পোশাক পরিধান করা : ঈদে উত্তম জামা-কাপড় পরিধান করে ঈদ উদযাপন করা। ইবনে উমার (রা.) থেকে সহি সনদে বর্ণিত যে তিনি দু’ঈদের দিনে সর্বোত্তম পোশাক পরিধান করতেন। (সুনান বায়হাকি) । আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার বান্দার উপর তার প্রদত্ত নেয়ামতের প্রকাশ দেখতে পছন্দ করেন’ (সহিহ আল-জামে : ১৮৮৭)।
৫. পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া : আর ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া হলো সুন্নাহ এর অন্তর্ভুক্ত। আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : সুন্নত হলো ইদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া (সুনান আত তিরমিযী : ৫৩৩)।
৬. ঈদের সালাত আদায় করা : ঈদের সালাত আদায় করা ওয়াজিব। ঈদের সালাতে মহিলাদেরকে শামিল করানোর বিষয়ে হাদিসে এসেছে, ‘উম্মে আতিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সা.) আদেশ করেছেন আমরা যেন মহিলাদের ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহাতে সালাতের জন্য বের করে দেই ; পরিণত বয়স্কা, ঋতুবতী ও গৃহবাসিনীসহ সকলকেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।