কোরবানির ঈদ বা ঈদুল আযহা ইসলাম ধর্মের একটি প্রধান উৎসব, মুসলমানদের বছরের দুটি বড় ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে একটি। এটি সারাবিশ্বের মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে অত্যন্ত গৌরবময় একটি উৎসব।
ঈদুল আযহার মূল তাৎপর্য হলো ধর্মীয় মাধ্যমে মানুষের একতা, সহযোগিতা, সৌখ্য এবং পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা ও শান্তির বাণী প্রচার করা। ঈদুল আযহা মুসলমানদের জীবনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিক সম্পর্কগুলির পুনরুদ্ধারের জন্য একটি মাধ্যম হিসাবে প্রয়োজনীয়। এটি একটি উদ্ভাবনী অবস্থা যার মাধ্যমে মানুষ ধার্মিক কর্তব্যগুলি পালন করতে এবং ধর্মীয় সংস্কার গ্রহণ করতে পারে। ঈদুল আযহা বাংলা ভাষায় শুধুমাত্র ‘বড় ঈদ’ নামেও পরিচিত, ইসলামিক সমাজের প্রধান উৎসবের মধ্যে অন্যতম। ঈদুল আযহা ইসলামিক ক্যালেন্ডারের জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখে উপস্থাপন করা হয়।
এ দিনটিতে মুসলমানেরা ফযরের নামাযের পর ঈদগাহে গিয়ে দুই রাক্বাত ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করে ও পরে স্ব-স্ব আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ ও উট আল্লাহর নামে কোরবানি করে।
পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদিসের তথ্য অনুসারে পবিত্র ঈদুল আজহার সাথে জড়িয়ে রয়েছে নিগূঢ় ইতিহাস যার সূচনা হয়েছিল হযরত আদম আঃ পুত্ৰ হাবিল ও কাবিলের প্রতিযোগিতা মূলক কুরবানি করার মাধ্যমে তখন থেকে কোরবানির ধারা শুরু হয়েছিল।
এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআন বলছে- ওদেরকে আদমের দুই পুত্রের (হাবীল ও ক্বাবীল ঘটনা ঠিকঠিকভাবে শোনাও; যখন তারা (আল্লাহর উদ্দেশ্যে) একটি করে কোরবানি করেছিল। তাদের একজনের কোরবানি কবুল হল, অন্যজনের হল না। তখন দ্বিতীয়জন (প্রথমজনকে বলল, আমি তোমাকে খুন করে ফেলব।’ প্রথমজন বলল, আল্লাহ তো কেবল মুত্তাকীদের কোরবানি কবুল করেন। ( আল মায়িদাহ:২৭)।
এরই ধারাবাহিকতায় হযরত ইব্রাহিম আঃ পর্যন্ত পৌঁছে। অনন্তর তিনি মহা পরীক্ষার সম্মুখীন হোন। স্বীয় পুত্র ইসমাইল আঃ কে উৎসর্গ করার দৃঢ় মনোবল ও মহান আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার ঈর্ষণীয় ঈমান নিয়ে আত্মোৎসর্গের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে যান। তার আত্মত্যাগে মহান প্রতিপালক এতোই সন্তুষ্ট হয়ে পড়েন যে, পরবর্তী মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর এই কোরবানির বিধান অত্যাবশ্যক করে দেন।
ইব্রাহিম ও ইসমাইল আঃ এর মাঝে ঘটে যাওয়া চমৎকার বর্ণনা পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর যখন সে বাবার সাথে ছুটোছুটি করার বয়সে উপনীত হল তখন (একদিন) ইবরাহীম বলল, ‘বৎস! আমি স্বপ্নে দেখি যে, আমি তোমাকে জবাই (আল্লাহর নামে কোরবানি) করছি। অতএব ভেবে বল, তোমার মত কি?” তিনি (ইসমাইল) বললেন, ‘বাবা! তোমাকে যা করতে বলা হচ্ছে তাই কর। আমাকে তুমি ইনশাআল্লাহ ধৈর্যশীল পাবে।’ (আস সফফাত : ১০২)।
এরপর এই ধারাক্রম যথানিয়মে বিশ্বনবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছে এবং উম্মতে মুহাম্মদীর সামর্থবানের জন্য ঈদুল আজহায় কোরবানি করা ওয়াজিব বা আবশ্যক হিসেবে সাব্যস্ত করে দেয়া হয় ৷
পবিত্র কুরআনে আরো বর্ণিত হয়েছে, ‘অতএব (কৃতজ্ঞতাস্বরূপ) তোমার প্রভুর উদ্দেশ্যে নামায পড় ও কোরবানি কর। (আল কাউছার : ০২) তেমনিভাবে সহিহ বুখারির ‘কোরবানির বিধান। ইবনে উমর রা. বলেছেনঃ কোরবানি সুন্নত এবং স্বীকৃত প্রথা’ পরিচ্ছেদে এসেছে, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের আগে যবাহ করল সে নিজের জন্যই যবাহ করল। আর যে ব্যাক্তি সালাত আদায়ের পর যবাহ করল। তার কুরবানী পূর্ণ হলো এবং সে মুসলিমদের নীতি অনুসরণ করল। [ হাদিস নং ৫১৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন।]
কুরবানির মাধ্যমে ত্যাগ ও উৎসর্গের দ্বারা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করাই কুরবানি দাতার মূল উদ্দেশ্য হওয়া চাই। কে কত টাকা খরচ করে পশু ক্রয় করেছে, কার পশু কত বড়- মহান আল্লাহ সেটা দেখবেন না। এজন্য আল্লাহ কুরআনে বলেন-‘কখনই আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না এগুলোর গোস্ত এবং রক্ত, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া’ (সূরা আল-হাজ্ব)। তাই সকল কুরবানিদাতার এই নিয়্যত হওয়া উচিত, মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তাকওয়ার সাথে কুরবানি করা। – এই প্রত্যাশা করি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।