ওয়াকিল আহমেদ হিরন : উচ্চ আদালতে বিচারাঙ্গনের পরিবেশকে আরও সুন্দর ও সাবলীল করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে ২৩ বছর পর নির্মিত হচ্ছে ১২ তলাবিশিষ্ট সুপ্রিম কোর্ট এনেক্স এক্সটেনশন (বর্ধিত) ভবন। সুপ্রিম কোর্ট এনেক্স ভবনের পশ্চিম পাশে ১৮ হাজার ১৩৪ বর্গমিটার জায়গার ওপর গত বছর ডিসেম্বরে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি ৪৫ বছর পর নির্মিত হচ্ছে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নতুন ভবন। মৎস্য ভবনের পশ্চিম পাশে পুরনো ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। দুটি বেজমেন্টসহ ১৫ তলাবিশিষ্ট আধুনিক নতুন ভবনটির নির্মাণ কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় সুউচ্চ নান্দনিক ও আধুনিক এ দুটি ভবন নির্মাণ শেষ হলে বিচারপ্রার্থী, বিচারক ও আইনজীবীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণের পাশাপাশি দুর্ভোগও লাঘব হবে।
বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে প্রায় ৫ লাখ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। সে তুলনায় বিচারপতির সংখ্যা কম এবং এজলাসসহ অন্যান্য জায়গাও অপ্রতুল। নতুন বর্ধিত ভবন নির্মাণ হলে বিচার ও মামলা নিষ্পত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হবে বলে মনে করেন সংশ্নিষ্টরা।
বর্ধিত ১২ তলা ভবন : দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিচার কাজ সম্পাদনের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রেখে নান্দনিক এনেক্স এক্সটেনশন ভবনটি নির্মাণে মোট ১৩৮ কোটি ৪ লাখ ২২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ভবনটি নির্মাণ হলে ৪০টি ডিভিশন বেঞ্চ, বিচারপতিদের চেম্বার ছাড়াও ২০টি অফিস কক্ষ এবং সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের দাপ্তরিক স্থানের সংস্থান করা হবে। এতে বিচারক, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের জন্য সহায়ক কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে।
গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিম বলেন, বিচার বিভাগকে সত্যিকার অর্থে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর করা বর্তমান সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার। সেটা বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে বিচার বিভাগকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। বিচারকদের বেতনভাতা শতভাগ বৃদ্ধি, আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, সুপ্রিম কোর্টের মর্যাদাকে সমুন্নত রাখাসহ যেসব পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তা বাস্তবায়নের উল্লেখযোগ্য অংশ হলো সর্বোচ্চ আদালতে বর্ধিত ভবন এবং বার কাউন্সিল।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. মো. জাকির হোসেন বলেন, ১২ তলা ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এটি সম্পন্ন হলে উচ্চ আদালতে মামলা পরিচালনা করতে বিচারক, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের স্থান সংকট দূর হবে। তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় আরও একটি ২০ তলা ভবন নির্মাণ করা হবে।
জানা গেছে, সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে কাজটি বাস্তবায়ন করছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। ২০২০ সালের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্নিষ্টরা। ১২ তলা ভবনের মোট আয়তন হবে ১৮ হাজার ১৩৪ দশমিক ১৬ বর্গমিটার। সীমানা প্রাচীর হবে ১৯৩ দশমিক ৬০ বর্গমিটার। এক হাজার ৬০০ কেভিএ ক্ষমতার বিদ্যুতের সাব-স্টেশন নির্মিত হবে একটি। পুরো ভবনে থাকবে চারটি লিফট।
সুপ্রিম কোর্ট দেশের সর্বোচ্চ আদালত। রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার প্রধান বিচারপতি। সংবিধানের ধারা ১০০-এর বিধান অনুযায়ী রাজধানী ঢাকার রমনায় সুপ্রিম কোর্ট অবস্থিত। এটা সচরাচর হাইকোর্ট নামে পরিচিত। কারণ, ১৯৭১ সালের আগে এই ভবনে পূর্ব পাকিস্তানের উচ্চ আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হতো। এরপর ১৯৯৮
সালে পশ্চিম পাশে চারতলাবিশিষ্ট সুপ্রিম কোর্ট এনেক্স ভবন নির্মাণ করা হয়। এখানে হাইকোর্টের ৪০টির মতো ডিভিশন বেঞ্চ রয়েছে। রয়েছে চারতলায় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের অফিস। ২০১৬ সালে সড়ক ভবন সুপ্রিম কোর্টের অনুকূলে আসার পর সেখানে স্থাপন করা হয় সুপ্রিম কোর্ট অডিটরিয়াম, জাজেস কর্নার, জাজেস স্পোর্টস কমপ্লেক্স ভবন। ডেথ রেফারেন্স, সিভিল, ক্রিমিনাল মামলাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন অফিসের পাশাপাশি পুলিশের অফিস, লিগ্যাল অফিস, ফুড কর্নার, সুপ্রিম কোর্ট জাদুঘর, বিউটি পার্লার, স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রভৃতি রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টে ৯৯ জন বিচারপতি কর্মরত আছেন। প্র্যাকটিসরত আইনজীবীর সংখ্যা ১৫ হাজারেরও বেশি। বিচারাধীন মামলার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৫ লাখ। সুপ্রিম কোর্টে পৃথক দুটি ভবনে অর্ধশতাধিক বেঞ্চ রয়েছে। নতুন ভবন নির্মিত হলে সেখানে আরও ৪০টি বেঞ্চ স্থাপন করা হবে। এতে বিচারকরা স্বচ্ছন্দে বিচার কাজ পরিচালনা করতে পারবেন।
বার কাউন্সিল ভবন : ৪৫ বছর পর নির্মিত হচ্ছে নান্দনিক স্থাপত্যে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নতুন ভবন। মৎস্য ভবনের পশ্চিম পাশে পুরনো ভবনটি ভেঙে ১৫ তলাবিশিষ্ট নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। যার বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১১৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। ভবনটিতে বার কাউন্সিলের কাজ ছাড়াও আইনজীবী ও বিচারকদের ব্যক্তিগত নথি সংরক্ষণ এবং অ্যাডভোকেটশিপ সনদ পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হবে। পাশাপাশি পাঁচটি ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার সুযোগ বাড়বে। ফলে আইনজীবী ও বিচারকদের জন্য সহায়ক কর্মপরিবেশ নিশ্চিত হবে।
জানা গেছে, দুটি বেজমেন্টসহ বার কাউন্সিলের নতুন ভবনের মোট আয়তন হবে ১৩ হাজার ৬৪৪ দশমিক ৩৭ বর্গমিটার। সীমানা প্রাচীর হবে ১৯৩ দশমিক ৬০ বর্গমিটার। এক হাজার কেভিএ ক্ষমতার বিদ্যুতের সাব-স্টেশন থাকবে। ভবনে থাকবে তিনটি লিফট। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন সংশ্নিষ্টরা।
বার কাউন্সিল সরকারের আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি বিধিবদ্ধ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার্স অ্যান্ড বার কাউন্সিল অর্ডারের মাধ্যমে গঠিত হয় বার কাউন্সিল। ১৫ জন সদস্য বার কাউন্সিল পরিচালনা করে থাকেন। ১৯৭৩ সালে বার কাউন্সিলের নামে হাইকোর্ট সংলগ্ন ৪৪ শতাংশ জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেখানেই বর্তমান ভবনটি অবস্থিত। বর্তমানে বার কাউন্সিলে তালিকাভুক্ত আইনজীবীর সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। প্রতি বছর নতুন নতুন আইনজীবী এ তালিকায় যোগ হচ্ছেন। তাই ৪৫ বছর আগের ভবনে স্থান সংকুলান না হওয়ায় নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।
সূত্র/ সমকাল
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।