বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : খুব সাধারণ একটি ভাইরাস দিয়ে ক্যানসার চিকিৎসার নতুন এক গবেষণায় বড় ধরনের সাফল্য পাওয়া গেছে। যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ভাইরাস শরীরের ক্ষতিকর কোষকে আক্রমণ করে তাকে ধ্বংস করে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে- এই চিকিৎসায় একজন ক্যানসার থেকে পুরোপুরি সেরে উঠেছে এবং অন্যদের টিউমার সঙ্কুচিত বা ছোট হয়ে গেছে। গবেষণায় যে ভাইরাসটি ক্যানসারের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে তার নাম হারপেস সিমেপ্লক্স। তবে ভাইরাসটি শরীরে প্রয়োগ করার আগে তাতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের ইনস্টিটিউট অব ক্যানসার রিসার্চ এবং রয়্যাল মার্সডেন এনএইচএস ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট গবেষণাটি পরিচালনা করেছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, গবেষণার প্রাথমিক ফল বেশ আশাব্যঞ্জক। তবে এ বিষয়ে আরও বড় পরিসরে এবং দীর্ঘসময় ধরে গবেষণার প্রয়োজন। তারা আশা করছেন, এই চিকিৎসার মাধ্যমে যাদের দেহে ইতোমধ্যে
ক্যানসার ছড়িয়ে পড়েছে অথবা যারা জটিল ক্যানসারে আক্রান্ত, রোগ নিরাময়ের মাধ্যমে তাদের জীবন রক্ষা করা সম্ভব। ব্রিটেনের ক্যানসার চিকিৎসক এবং সাউথেন্ড ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের কন্সালটেন্ট ক্লিনিক্যাল অনকোলজিস্ট ডা. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ভাইরাস দিয়ে যেমন ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়, তেমনি এটি দিয়ে ক্যানসারেরও চিকিৎসা করা হচ্ছে। ভাইরাস যখন শরীরে প্রবেশ করানো হয় তখন তা খুব দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে যে ক্যানসারের চিকিৎসা করা হবে তার অ্যান্টিজেন দিয়ে ভাইরাসটিতে কিছুটা পরিবর্তন ঘটিয়ে সেটি শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া হলে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে, যা শরীরের রোগপ্রতিরোধী ক্ষমতাকে চাঙ্গা করবে।
লন্ডনে ৩৯ বছর বয়সী এক রোগীর এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হয়েছে। ২০১৭ সালে ধরা পড়ে যে তার মুখের কাছে লালাগ্রন্থিতে ক্যানসার হয়েছে। অপারেশন করেও তার কোনো লাভ হয়নি। অন্যান্য চিকিৎসাও দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু দেখা গেল তার শরীরে ক্যানসার আরও বেশি করে ছড়িয়ে পড়ছে। ওই রোগী বলেন, আমাকে বলা হলো আর কিছু করার নেই। সব চিকিৎসাই করা হয়ে গেছে। আমি তখন মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছি। খুবই মারাত্মক এক সময় পার করছি। তখনই আমি এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাই। গবেষণার অংশ হিসেবে আমার দেহে ভাইরাল থেরাপি প্রয়োগ করা হলো। ঠা-া সর্দি কাশির জন্য দায়ী আরপিটু নামে এক ভাইরাস হারপেসে কিছু পরিবর্তন ঘটিয়ে ইনজেকশনের মাধ্যমে সেটি ঢুকিয়ে দেওয়া হয় আমার শরীরে। পাঁচ সপ্তাহ ধরে আমাকে ইনজেকশন দেওয়া হলো। দেখা গেল এটি আমার দেহের ক্যানসার ধ্বংস করে দিয়েছে। প্রায় দুই বছর হলো আমি ক্যানসার থেকে মুক্ত।
এই গবেষণার ফল সম্প্রতি ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে চিকিৎসাসংক্রান্ত এক সম্মেলনে তুলে ধরা হয়। গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন অধ্যাপক কেভিন হ্যারিংটন। তিনি বলেন, চিকিৎসায় যে ফল পাওয়া গেছে তা সত্যিই আশাব্যঞ্জক। অন্ননালি এবং চোখের ক্যানসারের মতো জটিল রোগের চিকিৎসায় এই থেরাপি বড় ধরনের সাফল্য পেয়েছে। সাধারণত গবেষণার প্রাথমিক পর্যায়ে এত ভালো ফল পাওয়া বিরল ঘটনা। খবর বিবিসির।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।