জুমবাংলা ডেস্ক : পিক্সার মুভির অ্যানিমেশন মুভি ‘ফাইন্ডিং নিমো’ ছাড়াও কমলা রঙের ওপর উজ্জ্বল সাদা ডোরার জন্য বেশ বিখ্যাত ক্লাউন ফিশ। তবে কমলা সাদা এই বিন্যাস শুধু আমরাই খেয়াল করি তা নয়। নতুন এক গবেষণা বলছে, ক্লাউন ফিশ নিজেরাও তাদের এই বিন্যাস চিনতে পারে। এমনকি এই মাছ ডোরার সংখ্যা গুণে সমগোত্রীয় মাছও চিনতে পারে।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের জ্ঞানীয় স্নায়ুবিদ ব্রায়ান বাটারওর্থ বলেন, প্রাণিজগতে গণনার দক্ষতা ব্যবহার করে বড় আকারের খাবার সংগ্রহ করে বা কোনো দলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। তবে ক্লাউন ফিশ গণনার দক্ষতাকে স্বজাতি চিহ্নিত করার কাজেও লাগায়।
নতুন এ গবেষণা প্রতিবেদনটি গত ১ ফেব্রুয়ারি এক্সপেরিমেন্টাল বায়োলজি সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে, ক্লাউন ফিশ অন্য মাছের গায়ে তিনটি ডোরা পর্যন্ত গুনতে পারে। এর মাধ্যমে তারা কোন মাছটি তাদের পরিবারের জন্য ক্ষতিকর তা চিহ্নিত করতে পারেন।
দেখতে সুন্দর হলেও ক্লাউন ফিশ বেশ আগ্রাসী। যখন এরা স্বপ্রজাতির মাছকে বাইরে থেকে এসে নিজের আবাসে আস্তানা গড়তে দেখে তখন হামলা করে, কামড় দেয় বা তাড়িয়ে দেয়।
ক্লাউন ফিশ যে শুধু অন্য মাছের ওপরই হামলা চালায় এমনটি নয়। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় অ্যাট আর্বানা–শ্যাম্পেইনের সামুদ্রিক স্নায়ুবিদ জাস্টিন রোডস বলেন, সমুদ্রে ডাইভিং করার সময় একবার এক ক্লাউন ফিশ তাঁকে এত জোরে কামড়ে ধরেছিল যে রক্ত বের হয়ে গিয়েছিল। এগুলো আক্ষরিক অর্থেই আমাদের গ্রহের সবচেয়ে আক্রমণাত্মক প্রাণীগুলোর মধ্যে একটি!
রোডস বলেন, কিন্তু এ মাছগুলো নবাগত মাছের প্রতিই এমন আগ্রাসন দেখায়। এগুলো চায় না, নতুন কেউ এসে এদের জায়গা দখল করুক।
ক্লাউন ফিশের মোট ২৮টি ভিন্ন প্রজাতি আছে। তাহলে এ প্রাণীটি বন্ধু ও শত্রুর মধ্যে তফাৎ করে কীভাবে?
জাপানের ওকিনাওয়া ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির সামুদ্রিক বাস্তুবিদ কিনা হায়াশি ক্লাউন ফিশের এই ডোরাগুলো নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে গবেষণা করেছেন। প্রজাতি ভেদে ক্লাউন ফিশের শূন্য থেকে তিনটি ডোরা থাকতে পারে। উদরে, মেরুদণ্ডে বা নাক থেকে লেজ পর্যন্ত ডোরা থাকতে পারে।
ক্লাউন ফিশ নিয়ে আগের এক গবেষণায় দেখা গেছে, এ মাছ ডোরার বিন্যাস বেশ গভীরভাবে লক্ষ্য করে। ২০২২ সালের গবেষণা প্রতিবেদনে হায়াশি বলেন, ক্লাউন ফিশ এদের মতো একই দিকে যাওয়া একই সংখ্যক ডোরা বিশিষ্ট কাঠের কৃত্রিম মাছকে কামড় দেয় এবং তাড়া করে বেশি।
তখন তিনি ভাবতে থাকেন আসলে কি এই মাছ ডোরা গুনতে পারে? হায়াশি ও সহকর্মীরা ৫০টি ছোট ক্লাউন ফিশ (অ্যাম্ফিপ্রায়ন ওসেলারিস) ভিন্ন ভিন্ন অ্যাকোরিয়ামে রাখেন। এ মাছগুলো দেখতে নিমোর মতোই কমলা ও তিনটি সাদা ডোরাযুক্ত। এরপর গবেষকেরা ধাপে ধাপে আরও তিন প্রজাতির ক্লাউন ফিশ অ্যাকোরিয়ামে যোগ করেন। এগুলো গন্ধ–নিরোধক ও স্বচ্ছ।
মাছগুলোর গায়ে কালো ও কমলার বিভিন্ন বিন্যাস থাকায় কোনো ধরনের আক্রমণাত্মক আচরণ দেখা যায়নি। তারপরও একইরকম ডোরাকাটা শনাক্ত করতে পারলে এরা একে অপরের দিকে তেড়ে যেত এবং আক্রমণাত্মক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত।
এরপর গবেষকেরা অ্যাকোরিয়ামে রেজিনের তৈরি বিভিন্ন কমলা–সাদা বিন্যাসের কৃত্রিম ক্লাউন ফিশ যোগ করেন। ছিপ ব্যবহার করে তাঁরা এই কৃত্রিম মাছকে ঝুলিয়ে রাখেন।
হায়াশি বলেন, মাছের গায়ে ডোরার উপস্থিতি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ক্লাউন ফিশগুলো একটি অনুভূমিক ডোরা বিশিষ্ট কৃত্রিম মাছের তুলনায় তিন–ডোরা বিশিষ্ট কৃত্রিম মাছগুলোকে ১০ গুণ বেশি আক্রমণাত্মকভাবে তাড়া করে এবং কামড় দেয়। আবার একটি ডোরাকাটা কৃত্রিম মাছের তুলনায় তিনটি ডোরা কাটা কৃত্রিম মাছের ওপর দ্বিগুণ বেশি হামলা হয়। আর দুটি ডোরাকাটা কৃত্রিম মাছের তুলনায় হামলা বেশি হয় ১ দশমিক ৩ গুণ।
গবেষণা অনুসারে, ক্লাউন ফিশ শুধু যে ডোরাকাটা গুনতে পারে তাই নয়, তারা এ দক্ষতাকে স্বজাতি থেকে নিজের আবাসস্থল রক্ষা করার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করে।
তবে, প্রাণীগুলো আসলে ডোরার সংখ্যা গুনছে নাকি আক্রমণকারী মাছের গায়ে সাদা রঙের পরিমাণ খেয়াল করছে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।