আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে লোকসভা নির্বাচনের তোড়জোড় দিয়েই ২০১৯ সাল শুরু হয়। এ ভোটে নিরঙ্কুশ জয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
১১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া মাসব্যাপী এ নির্বাচন সামনে রেখে মোদিকে বেশ চাপেই রেখেছিলেন আপসহীন ও দাপুটে দুই নারী। একজন বাংলার দিদি মমতা ব্যানার্জি। অন্যজন নব্য যুগের ‘ইন্দিরা’ প্রিয়াংকা গান্ধী। ক্ষমতা আরও পাকাপোক্ত করেই বিভাজনের দিকেই ধাবিত হতে থাকে বিজেপি সরকার। বছরজুড়ে ধর্মনিরপেক্ষ ভারতকে বিভক্ত করতে মোদি সরকার আসামে বিতর্কিত জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি), কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল, নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ) করে। এসবের বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়ান দুই নেত্রী।
নেহেরু-গান্ধী বংশের প্রতিনিধিত্বকারী প্রিয়াংকা ২০১৯ সালের প্রথম মাসেই রাজনীতিতে অভিষিক্ত হন। নেহেরু-গান্ধী পরিবারের দল কংগ্রেস তার ওপরই আস্থা রেখে দলের ঘাঁটি উত্তর প্রদেশের দায়িত্ব তুলে দেন প্রিয়াংকার কাঁধে।
রাজনীতির মাঠে পা রাখতেই কেঁপে ওঠে রাজ্য। কর্মীদের সুসংগঠিত করতে তেমন বেগ পেতে হয়নি। এর কারণ, কিংবদন্তি কংগ্রেস নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে চেহারা ও অভিব্যক্তিতে অনেকে তার মিল খুঁজে পান। দ্বিতীয়ত, প্রিয়াংকা সুবক্তা। তৃতীয়ত, তিনি সেই বংশের প্রতিনিধি, যারা ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে সবচেয়ে বেশি সময় ভারত শাসন করেছে।
কিন্তু ভোটে মোদি-ঝড়ে কোনো পাত্তাই পাননি তিনি। তবে ভোটের মাঠ গরম এবং মোদির কপালে চিন্তার রেখা ফেলতে সক্ষম হয়েছিলেন। এনআরসি, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল, সিএএর বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন প্রিয়াংকা।
সরকারবিরোধী বিক্ষোভ সহিংসতায় নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এ জন্য পুলিশি হেনস্তার শিকারও হয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও রাজনীতির অগ্নিকন্যা বলে খ্যাত মমতা ব্যানার্জি। ১৯৯৭ সালে কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসে তিনি গড়ে তোলেন অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস (এআইটিসি)।
বর্তমানে দ্বিতীয় মেয়াদে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায়। জানুয়ারি মাসে কলকাতায় মোদিবিরোধী এক বিশাল সমাবেশ করে সারা দেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ভোটের মাঠে মোদিকে ঘায়েল করতে ‘এক্সপায়ারি বাবু, চৌকিদার, চাওয়ালা’ এমন কোনো ব্যঙ্গাত্মক শব্দ নেই যা ব্যবহার করেননি মমতা।
৬৪ বছর বয়সী এ নেত্রীই মোদির সবচেয়ে গোঁড়া সমালোচকদের একজন হয়ে ওঠেন। এনআরসি, সিএএবিরোধী বিক্ষোভে মাঠে নেমে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।
১২ ডিসেম্বর সিএএ পাস হওয়ার পর থেকে রাজপথে বিশাল সমাবেশ করেন মমতা। তোপ দাগেন মোদির বিরুদ্ধে। তার রাজ্যে এনআরসি হতে দেবেন না বলে বারবার হুংকার তুলেছেন।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসির বিরুদ্ধে এক সমাবেশে মমতা বলেন, ‘বিজেপির চেয়ে বড় কোনো জালিয়াত ছিল না, নেই। এ দলের উদ্দেশ্য নিয়ে জনগণের সচেতন হওয়া উচিত।
প্রধানমন্ত্রী বলছেন, এনআরসি সারা দেশে চালু হওয়া নিয়ে কোনো আলোচনা বা প্রস্তাব হয়নি। অথচ বিজেপি সভাপতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, এনআরসি দেশজুড়েই করা হবে।
উভয়ের বক্তব্যই পরস্পরবিরোধী। আমরা আশ্চর্য হচ্ছি এটি ভেবে যে, কে সত্যি কথা বলছেন। ওরা আসলে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন।’
তৃণমূল নেত্রী হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘বিজেপি ভারতকে ভাগ করার চেষ্টা করছে। দেশের মানুষ তা কিছুতেই হতে দেবে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।