বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে সাম্প্রতিক অস্থিরতা যেন এক নতুন মোড় নিয়েছে, যেখানে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ এবং অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। এই পরিস্থিতির কেন্দ্রে রয়েছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করছেন যে তিনি কারো পরামর্শ বা মতামত শুনতে চান না। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে অনেকেই তাঁর পদত্যাগ দাবি করছেন।
খন্দকার রাশেদ মাকসুদ: শেয়ারবাজারের আলোচিত চরিত্র
খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বর্তমানে বিএসইসি’র চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক দরপতনের ফলে বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভ দানা বাঁধে এবং এক পর্যায়ে তাঁকে ঘাড় ত্যাড়া বলে আখ্যা দেওয়া হয়। এই আখ্যাটি বিনিয়োগকারীদের একাংশের হতাশা ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
Table of Contents
রোববার লেনদেন শেষে বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ভবনের সামনে সড়ক অবরোধ ও কফিন মিছিলের আয়োজন করেন। এতে তাঁরা খন্দকার রাশেদ মাকসুদ ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদের পদত্যাগ দাবি করেন।
পদত্যাগের গুজব এবং সরকারি প্রতিক্রিয়া
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে রাশেদ মাকসুদ পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন এবং সেই লক্ষ্যে তিনি অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। এই গুজবের জেরে শেয়ারবাজারে চরম অস্থিরতা লক্ষ্য করা যায়। সূচক কখনো উপরে উঠছে, আবার কখনো হঠাৎ করে নিচে নামছে।
এই গুজবের প্রেক্ষিতে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ পরিষ্কার করে বলেন, রাশেদ মাকসুদ এখনও দায়িত্ব পালন করছেন এবং তাঁর কাজের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো পদত্যাগের প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, “রাশেদ মাকসুদ ভালোভাবে কাজ করছেন। তাঁর পদত্যাগ চাওয়ার মানে কী? কেউ কি আবার শিবলী রুবাইয়াতকে চায়?”
আস্থার সংকট ও গুজবের প্রভাব
রাশেদ মাকসুদ নিজেই বলেন, “প্রতিদিন আমার পদত্যাগের গল্প ছড়ানো হয়।” তিনি জানান, তিনি প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া পাঁচটি নির্দেশনার বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েছিলেন, কিন্তু সেটিকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়। তাঁর মতে, এই গুজব বাজারের আস্থায় আঘাত করছে এবং স্থিতিশীলতার অভাব তৈরি করছে।
তিনি আরও বলেন, “এভাবে প্রতিদিন ভিত্তিহীন গুজব ছড়ালে কাজ করবে কে? বাজারের জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো আস্থা ও স্থিতিশীলতা।” তাঁর কথাগুলো বাজার সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যে একটি বার্তা—ভিত্তিহীন গুজব ছড়ানো বন্ধ না হলে বাজার কখনোই সুস্থ হতে পারবে না।
আসন্ন বাজেট ও শেয়ারবাজারের প্রণোদনা
বিএসইসি চেয়ারম্যান আরও জানান যে আসন্ন বাজেটকে সামনে রেখে শেয়ারবাজারে কিছু প্রণোদনা সংক্রান্ত প্রস্তাব তারা সরকারের কাছে পাঠিয়েছেন। এই প্রণোদনার মধ্যে কর ছাড়, লেনদেনের শুল্ক হ্রাস এবং মধ্যমেয়াদি বিনিয়োগ পরিকল্পনার জন্য বিশেষ সুবিধা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এগুলো বাস্তবায়িত হলে বিনিয়োগকারীদের জন্য বাজার আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে এবং বাজারে আস্থা ফিরতে পারে। কিন্তু সেটি নির্ভর করছে বাজেট প্রস্তুতকারকদের ওপর, তাঁরা এই প্রস্তাবগুলোকে কতটা গুরুত্ব দেন তা সময়ই বলে দেবে।
রাশেদ মাকসুদের কার্যকলাপ ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা
বর্তমান পরিস্থিতিতে রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্ব এবং তার কার্যকলাপকে ঘিরে নানা মতপার্থক্য রয়েছে। কেউ তাঁকে দৃঢ় নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ বলছেন তাঁর একগুঁয়ে মনোভাবই বাজারের জন্য ক্ষতিকর। তবে একথা সত্যি যে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ব্যক্তির বিরুদ্ধে বারবার গুজব ছড়ানো হলে, পুরো সিস্টেমে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
এই মুহূর্তে বাজারে সবচেয়ে প্রয়োজন একটি সুসংহত নেতৃত্ব ও বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত। তাই রাশেদ মাকসুদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা।
বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রত্যাশা
বিনিয়োগকারীরা চাইছেন স্থিতিশীল একটি বাজার এবং প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা। তাঁরা আশা করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান তাঁদের বক্তব্য গুরুত্ব সহকারে শুনবেন এবং প্রণোদনামূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। সেই সঙ্গে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার দিকেও নজর দেওয়া জরুরি।
তবে এটি মাথায় রাখতে হবে যে, বাজার শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল নয়। এখানে সকল স্টেকহোল্ডারদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। তবেই সম্ভব একটি সুস্থ ও সমৃদ্ধ পুঁজিবাজার গড়ে তোলা।
স্টারলিংকের যাত্রা শুরু: বাংলাদেশের ডিজিটাল কানেক্টিভিটিতে নতুন যুগের সূচনা
FAQs
- খন্দকার রাশেদ মাকসুদ কে?
তিনি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বর্তমান চেয়ারম্যান। - কেন বিনিয়োগকারীরা তার পদত্যাগ চাইছে?
ধারাবাহিক শেয়ারবাজার পতনের কারণে বিনিয়োগকারীরা তার কার্যক্রমে অখুশি এবং তাঁকে ‘ঘাড় ত্যাড়া’ বলেও সম্বোধন করেছেন। - তিনি কি পদত্যাগ করেছেন?
না, তিনি পদত্যাগ করেননি। গুজবের জবাবে তিনি পরিষ্কারভাবে বলেছেন যে তিনি দায়িত্বে আছেন। - গুজব বাজারে কী প্রভাব ফেলেছে?
এসব গুজব বাজারে চরম অস্থিরতা তৈরি করেছে। সূচক ওঠানামা করছে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমছে। - বাজেটে কি শেয়ারবাজারের জন্য প্রণোদনা আসছে?
বিএসইসি কিছু প্রস্তাব দিয়েছে, যা সরকারের বাজেটে বিবেচনার বিষয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।