জুমবাংলা ডেস্ক: খাদ্যগুদামের বাহিরে তালা লাগিয়ে চাল বস্তায় ভর্তি করে বাহিরে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে বরিশাল বাবুগঞ্জের খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) মোসা. ফরিদা খাতুনের বিরুদ্ধে।
এছাড়া বাবুগঞ্জ উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরিদা খাতুন স্বামীর মাধ্যমে সরকারি চাল পাচার চক্র গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় প্রায় দুই বছর ধরে এমন অভিযোগ পেয়ে আসছে। পরে তাকে ৮০০ বস্তা চালসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার বাবুগঞ্জ উপজেলা খাদ্যগুদামের ভেতরে সরকারি চালের বস্তা ভেঙে প্লাস্টিকের বস্তায় ভরার সময় গ্রেপ্তার হন উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) ফরিদা খাতুন (৩২)। এ সময় তার অপকর্মের সহযোগী মোফাজ্জেল খানকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কালোবাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে বস্তা পরিবর্তনের কাজ চলছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
তাদের কাছ থেকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিলযুক্ত আরও ৫০৭টি খালি বস্তা এবং জোড়া কবুতর ও ডলফিন মার্কার মিনিকেট চালের এক হাজার খালি বস্তা জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় গতকাল শুক্রবার উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রুবিনা পারভীন বাবুগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন। এ মামলায় ওসিএলএসডি ফরিদা খাতুন, মোফাজ্জেল খান এবং স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রসুল জমাদ্দারসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, ইউএনও এবং ওসির নেতৃত্বে একটি দল উপজেলা খাদ্যগুদামে অভিযান চালায়। সরকারি চালের বস্তা বদলের সময় হাতেনাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ওসিএলএসডি ফরিদা খাতুনের বাড়ি ভোলা পৌর এলাকার দরগা রোডে ও মোফাজ্জেল খান বাবুগঞ্জ উপজেলার রাজগুরু গ্রামের বাসিন্দা। তারা খাদ্যগুদামের সরকারি চাল পাচার চক্রের সদস্য বলে দাবি পুলিশের।
প্রত্যক্ষদর্শী ও খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, খাদ্য অধিদপ্তরের উপপরিদর্শক ফরিদা খাতুন। পরে তিনি বাবুগঞ্জ উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) হিসেবে যোগ দেন। এক পর্যায়ে তার স্বামী কবির হোসেনকে ভোলা থেকে বাবুগঞ্জে নিয়ে আসেন। স্বামীর মাধ্যমে প্রায় দুই বছর ধরে তিনি খাদ্যগুদামের চাল রাতের আঁধারে বস্তা বদল করে কালোবাজারে বিক্রি করছেন।
অভিযোগ রয়েছে, ভিজিডি, টিআর, কাবিখাসহ বিভিন্ন প্রকল্পের চালের ডিও চেয়ারম্যান-মেম্বার এবং প্রকল্প সভাপতিদের কাছ থেকে কিনতেন ফরিদা খাতুন। এসব চাল সরকারি ৩ নম্বর খাদ্যগুদামে রাখতেন। পরে সরকারি সিলযুক্ত পাটের বস্তার চাল রাতের আঁধারে বিভিন্ন কোম্পানির প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে পাচার করতেন। এ ছাড়া সরকারি ধান ক্রয় কর্মসূচিতে তিনি বাবুগঞ্জের কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করতেন না। স্বামীর মাধ্যমে উত্তরাঞ্চল থেকে কম দামে নিম্নমানের ধান সংগ্রহ করে সরকারি অর্থ লোপাট করতেন। নির্বিঘ্নে এসব অপকর্ম চালাতেন তিনি। স্থানীয় ৮-১০ জনকে সঙ্গে নিয়ে একটি চক্র গড়ে তোলেন। তার এসব অপকর্মের অভিযোগ পড়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে। পরে তাকে হাতেনাতে ধরার সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক।
বরিশাল জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তাজুল ইসলাম বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাতে জানতে পারি, বাবুগঞ্জ খাদ্যগুদামে চাল পাচারের চেষ্টা চলছে। পরে বাবুগঞ্জের ইউএনও এবং থানার ওসিকে নিয়ে উপজেলা খাদ্যগুদামে অভিযান চালাই। দেখি, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিলযুক্ত ৫০ কেজির চালের বস্তা বদল করে জোড়া কবুতর ও ডলফিন মার্কা নামে দুটি কোম্পানির মিনিকেট চালের ২৫ কেজির প্লাস্টিকের বস্তায় ভরা হচ্ছে। এ সময় ওসিএলএসডি ফরিদা খাতুন ও তার সহযোগী মোফাজ্জেল খানকে হাতেনাতে আটক করা হয়।
বাবুগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমীনুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে উপজেলা খাদ্যগুদামে উপস্থিত হয়ে ৩ নম্বর গুদামে পাচারের উদ্দেশ্যে সাজিয়ে রাখা ৮০০ বস্তায় প্রায় ২০ টন সরকারি চাল উদ্ধার করা হয়েছে। পাচারের সুবিধার্থে সরকারি সিলযুক্ত বস্তা বদল করে সাজিয়ে রাখা হয়েছিল। গুদামটি সিলগালা করা হয়েছে।
বাবুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, খাদ্যগুদাম থেকে হাতনাতে ওসিএলএসডি ফরিদা খাতুন ও সহযোগী মোফাজ্জেল খানকে আটক করা হয়। ৮০০ বস্তা চালসহ অপরাধের বিভিন্ন আলামত জব্দ করা হয়েছে। খাদ্য অধিদপ্তরের পক্ষে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রুবিনা পারভীন পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। গ্রেপ্তার দুই আসামিকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হবে।
মামলার অভিযুক্ত আসামি উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রসুল জমাদ্দার এবং সাধারণ সম্পাদক সেন্টু খান মোবাইল ফোনে জানান, খাদ্যগুদামের ওসিএলএসডি ফরিদা খাতুনের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন তারা এবং সে ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনসহ খাদ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের গোপন তথ্য দিয়েছিলেন। প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে এই মামলায় উল্টো তাদেরই ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরিদা খাতুনের কাছে থানা হাজতে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
সূত্র: সমকাল
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু রাখা নিয়ে যা জানালেন শিক্ষামন্ত্রী, সিদ্ধান্ত আসছে যখন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।