আন্তর্জাতিক ডেস্ক : খাবারের অপচয় বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু করেছে চীন। দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং খাবার অপচয়কে জঘন্য এবং বিরক্তিকর আখ্যা দেয়ার পরই পদক্ষেপ নেয়া শুরু হয়।
করোনা মহামারির মধ্যে খাবার অপচয়কে অশনি সংকেত বলেও সতর্ক করেন শি জিনপিং। খাদ্য নিরাপত্তা সংকটের বিষয়ে চীনাদের বিবেক খাটানোর আহ্বান জানান শি।
চলতি বর্ষা মৌসুমে সৃষ্ট বন্যা, ভূমিধসে চীনের বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। বন্যায় ভেসে গেছে খাদ্যের বহু গুদাম। মজুদ রাখা খাদ্যপণ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চীন খাদ্য সংকটে পড়তে যাচ্ছে। খাবারের সংকট করোনা মহামারি থেকে ভয়াবহ হতে পারে বলেও গণমাধ্যমে সতর্ক করা হয়েছে।
তবে চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা গ্লোবাল টাইমস এ সতর্কতাকে গণমাধ্যমের ছড়ানো ভীতি বলে উড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া, হরেক রকমের খাবার সাজিয়ে খাওয়া অবস্থায় যারা সামাজিক মাধ্যমে ছবি-ভিডিও প্রচার করছে তাদের সমালোচনা করে গ্লোবাইল টাইমস।
চীনা প্রেসিডেন্টর সতর্ক বার্তার পর, উহান ক্যাটারিং ইন্ড্রাস্টি অ্যাসোসিয়েশন শহরের হোটেলগুলোকে রাতের খাবারে প্লেটের সংখ্যা কমিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এ বিষয়ে ‘এন-ওয়ান’ নামে নতুন একটি নিয়ম চালু করতে যাচ্ছে সংগঠনটি। নতুন নিয়মের ১০ জনের একটি গ্রুপ রাতের খাবারে ৯ প্লেট খাবার অর্ডার করতে পারবে।
খাবারের নতুন নিয়মের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে চীনাদের কিছুটা লাগতে পারে। কারণ প্রয়োজনের তুলনায় অধিক পরিমাণ খাবার অর্ডারে অভ্যস্ত চীনারা।
অতিথিরা পেট পুরে খাওয়ার পর যদি তাদের প্লেটের খাবার শেষ হয়ে যায় তাহলে তাকে খারাপ আতিথেয়তা বলে বিশ্বাস করে অনেক চীনা বাসিন্দা। পেট পুরে খাওয়ার পরও প্লেটে খাবার থাকতে হবে-এটাই তাদের ঐতিহ্য। অতিথি খাবার খেয়ে শেষ করতে পেরেছে মানে অপ্যায়নকারী কম খাবারের অর্ডার দিয়েছে বা প্রস্তুত করেছে।
এন-ওয়ান নীতির সমালোচনা করছেন অনেকেই। এ নিয়মকে কঠোর বলে আখ্যা দিয়েছেন তারা।
চীনা মাইক্রোব্লগিং সাইট উইবোতে এক ব্যবহারকারী লিখেন, যদি একজন ব্যক্তি রেস্তোরাঁয় যান তাহলে তিনি কিভাবে খাবারের অর্ডার করবেন? কয় প্লেট খাবার তিনি অর্ডার তিনি দিতে পারবেন? নীতিমালায় পুরো বিষয়টি স্পষ্ট করার আহ্বান জানান তিনি।
অনেকে বলেছেন, অধিকাংশ রেস্তারাঁয় সাধারণত খুব বেশি খাবার অপচয় হয় না। কর্তৃপক্ষ এটাকে বাড়িয়ে বলছে। সরকারি কর্মকর্তারা ভোজনের নামে খাবার অপচয় করে বলেও অভিযোগ তাদের।
অনেক খাবার সাজিয়ে যারা সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে তা প্রচার করে তাদের সতর্ক করেছে চীনা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সিসিটিভি।
স্থানীয় ভাষায় অনেক পদের খাবার সাজিয়ে প্রচারকে মুকবাং বলে। চীনসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এ সংস্কৃতির জনপ্রিয়তা রয়েছে।
সিসিটিভি জানিয়েছে, অনেককে দেখা গেছে যারা অধিক পরিমাণে খেয়েছেন। পরে হজম করতে পারেননি। উগলে দিয়েছেন।
খাবার অপচরবিরোধী প্রচারণা চীনে এটাই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে ‘অপারেশন এম্পটি প্লেট ক্যাম্পেইন’ শুরু করেছিল দেশটি। এর লক্ষ্য ছিল অতিরিক্ত ভোজ এবং কর্মকর্তাদের অর্ভ্যথনার নামে খাবারের অপচয়রোধ করা। অপারেশন এম্পটি প্লেট ক্যাম্পেনের মাধ্যমে সে সময় সাধারণ মানুষের ওপর চাপ তৈরি করা হয়নি।
বেসরকারি সংস্থা ডব্লিউডব্লিউিএফ জানিয়েছে, ২০১৫ সালে চীনের ১ কোটি ১৮ লাখ টন খাবার অপচয় হয়েছে।
১শ’ ৪০ কোটি জনসংখ্যার দেশ চীনে খাবারের অপচয় বন্ধে বহুদিন ধরে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে চীন। ‘ক্লিন ওয়েস্ট ক্যাম্পেইন’ করোনা মহামারিতে সৃষ্ট খাদ্য সংকট মোকাবিলায় বিশ্ববাসীকে সহায়তা করতে পারবে বলেও মনে করেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
চীনারা যে পরিমাণ খাবার অপচয় করে তা দিয়ে প্রতিবছর ৩ থেকে ৫ কোটি মানুষের খাদ্যের চাহিদা মেটানো সম্ভব। তাই কঠোরভাবে চীনাদের খাবার অপচয়ের অভ্যাস বদলানোর আহ্বান জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
২০১৯ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং ঘনবসতিপূর্ণ সাংহাই শহরে খাবার অপচয়রোধে কঠোর নিয়মনীতি বাস্তবায়ন করা হয়। ওই নিয়মে অপচয় করা খাবার পুনর্ব্যবহারে বক্তি, প্রতিষ্ঠানকে বাধ্য করা হয়। জরিমানার সাথে সামাজিক অনুশাসন সূচকে খাবার অপচয়কারীদের রেটিং কমিয়ে দেয়ার শাস্তি ঘোষণা করা হয়। বিতর্কিত এ নিয়ম আর্থিক ও সামাজিক সমৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল বলে জানিয়েছে গণমাধ্যম।
পরে সাংহাই মডেল চীনের আর কোনো শহরে বাস্তবায়ন করা হয়নি।
চীনে স্থুলতা একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে স্থুল মানুষের সংখ্যায় শীর্ষ উঠে আসে চীন। যার কারণে সংকুচিত হচ্ছে চীনের শ্রমবাজার। চীনের এক সন্তাননীতিও এর জন্য দায়ী। এছাড়া, শিশুদের দীর্ঘ সময় পড়াশোনা, বাজে খাবার অভ্যসের কারণে প্রতিদিন চীনে স্থুলতা জনিত সমস্যা বাড়ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।