আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহতে অন্তত ৫০ দস্যুর অবস্থান করার কথা জেনেছে জাহাজে থাকা এক নাবিকের পরিবার।
গতকাল শুক্রবার বিকালে জাহাজের চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান ফোনালাপে তার পরিবারকে এ তথ্য দেন।
আতিকের ভাই আসিফ খান জানান, জাহাজে থাকা জলদস্যুরা বিকালে আতিককে পরিবারের সঙ্গে এক মিনিট কথা বলার সুযোগ দিয়েছিল। জাহাজের স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে এই আলাপ হয়।
আসিফ বলেন, “ভাইয়া জানিয়েছেন, তাদের জাহাজে অন্তত ৫০ জনের মতো জলদস্যু অবস্থান করছে এখন। তবে তারা কারও সঙ্গে কোনো খারাপ আচরণ করেনি। জাহাজে থাকা খাবারগুলো একসঙ্গে তারাও খাচ্ছে। যার কারণে কিছুদিন পর খাবারের সংকট সৃষ্টি হতে পারে তারা আশঙ্কা করছেন।”
এদিকে সোমালিয়ায় যে স্থানে জাহাজটি নোঙর করেছিল, সেখান থেকে তার অবস্থান পরিবর্তন হয়েছে বলে জানিয়েছেন এমভি আবদুল্লাহর মালিক প্রতিষ্ঠান কবির গ্রুপ।
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানটির মিডিয়া ফোকাল পার্সন মিজানুল ইসলাম জানান, জাহাজের নাবিকদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়েছে। সোমালিয়ায় জাহাজটি যে স্থানে নোঙর করা হয়েছিল, সেখান থেকে সরে গেছে।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি শাখাওয়াত হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে যে স্থানে জাহাজটিকে নোঙর করা হয়েছিল, সেখান থেকে উত্তর অভিমুখে ৪৫-৫০ মাইল দূরে জাহাজটি আছে এখন। ওই স্থানটি গদবজিরান উপকূল থেকে ৪ মাইল দূরে।
মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে আরব আমিরাত যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ। জলদস্যুরা জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২৩ নাবিকের সবাইকে জিম্মি করে।
জিম্মি হওয়ার আগেই জাহাজের নাবিকরা জাহাজের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে মালিকপক্ষকে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বার্তা এবং ভয়েস মেইল পাঠান। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও তারা যোগাযোগ করেন।
কেমন আছেন নাবিকরা?
এমভি আবদুল্লাহর জিম্মি নাবিকদের ফোনে কথা বলার সুযোগ দিয়েছে জলদস্যুরা। বিভিন্ন দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজে ক্যাপ্টেন হিসেবে কাজ করা আতিক ইউ খান এমভি আবদুল্লাহতে থাকা নাবিকদের বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছেন।
ক্যাপ্টেন আতিক ইউ এ খান বলেন, “দস্যুরা জিম্মি নাবিকদের ফোনে দেশে কথা বলার অনুমতি দিয়েছেন। তবে তা দিনের বেলায়। একজন একজন করে। জাহাজে থাকা জিম্মি নাবিকদের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে।
“বেশ কিছুক্ষণ (৩৫মিনিট) কথা হয়েছে। স্যাটেলাইট ফোনে নাবিকরা দেশে ফোন করছেন। সর্বশেষ শুক্রবার দুপুরে কথা হয়েছে।”
এক ফেসবুকে পোস্টও এ বিষয়ে বিস্তারিত লিখেছেন ক্যাপ্টেন আতিক ইউএ খান।
তিনি লিখেছেন, “সোমালিয়ার স্থানীয় সরকারের নির্দেশক্রমে এমভি আবদুল্লাহ শুক্রবার বেলা ১১টায় নোঙর তুলে স্থান পরিবর্তন করেছে। বিকাল ৪টার দিকে জানা গেছে, আগের অবস্থান হতে ৪০ মাইল দূরে এসে নোঙর করার প্ল্যান ছিল।”
আতিক ইউএ খান বলেছেন, “আপাতত জলদস্যুদের সঙ্গে কথা বলার (নাবিকদের) একমাত্র মাধ্যম ওদের ইন্টারপ্রেটার (দোভাষী)। তিনি মোটামুটি ভালো ইংরেজি বলেন। অন্যদের (জলদস্যুদের) সঙ্গে শুধু ইশারা ইঙ্গিতের মাধ্যমে কুশল বিনিময় হয় নাবিকদের।’
“জলদস্যুরা এখন পর্যন্ত নাবিকদের বাসস্থান বা অ্যাকোমোডেশন নিয়ে হস্তক্ষেপ করেনি। তবে তাদের নেতাগোছের ২-৩ জন পাইলট কেবিনে অবস্থান করছে। বাকিরা রাতে থাকছে ব্রিজ উইংয়ে বা ব্রিজের দুইপাশের খোলা ডেকে। এজন্য নাবিকরা ওদের স্টোর রুম হতে চাদর, বালিশ ইত্যাদি সরবরাহ করেছে।”
জাহাজের বিভিন্ন অবস্থানে মেশিনগান, একে ৪৭সহ নিরাপত্তা প্রহরী জলদস্যুরা বসিয়েছে বলে নাবিকদের কাছ থেকে জেনেছেন আতিক ইউএ খান।
তিনি বলেন, “দিনের বেলা জলদস্যুরা সব নাবিককে ব্রিজে থাকা স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে পরিবারের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি দিয়েছে। সন্ধ্যার পর অবশ্য সেই অনুমতি নেই। আজ হতে নাবিকদের জাহাজের সাধারণ রুটিন মেনে চলার জন্য অনুমতিও দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ রুটিন মেইনটেন্যান্স বা রক্ষণাবেক্ষণের কাজ।’
“ইঞ্জিনিয়াররা তাই ইঞ্জিন রুমে স্বাভাবিক কাজ করার অনুমতি পেয়েছেন। ইঞ্জিনরুমে ওরা কোনো পাহারা বসায়নি। ডেক অফিসাররাও তাই কার্গো হোল্ডের ৫৫ হাজার টন কয়লার তাপমাত্রা নিয়ে কাজ করার সুযোগ পাবেন। কয়লার তাপমাত্রা আর হোল্ডের অক্সিজেন পারসেন্টেজ নিয়ন্ত্রণ করলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা কমে আসবে।”
এমভি আবদুল্লাহর জিম্মি নাবিকদের বরাতে আতিক ইউএ খান জানান, শুক্রবারই আরো ১০-১২ জন জলদস্যু জাহাজে যুক্ত হওয়ার কথা। মোটামুটি ২৫-৩০ জন সবসময় জাহাজে অবস্থান করছে।
“১০-১২ দিনের খাবার মজুদ আছে। এরপর সোমালিয়ানরা প্রতিদিন সম্ভবত খাসি জাতীয় প্রাণী জবাই করে ভাতের সঙ্গে খাওয়াবে। তবে পানি ফুরিয়ে এলে কী হবে, সেই বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়নি।”
সূত্র : বিডিনিউজ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।