জুমবাংলা ডেস্ক: পঞ্চগড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে প্রতিদিনই ছুটে আসছেন পর্যটকরা। তবে আবাসিক হোটেল সংকটে পর্যটকদের অনেকেই গাছতলা, আবার তাঁবু টাঙিয়ে রাত্রি যাপন করছেন বলে জানা গেছে।
শনিবারের মতো রোববার ভোরেও দেখা মিলেছে কাঞ্চনজঙ্ঘার। পর্যটকরা ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন স্থানে দাঁড়িয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা উপভোগ করছেন। কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার পর তারা বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান দেখছেন। এর মধ্যে সমতলের চা বাগান, বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট, স্থলবন্দর-ইমিগ্রেশন, মহানন্দা নদীতে দল বেঁধে শ্রমিকদের পাথর উত্তোলন, পড়ন্ত বিকেলে সূর্যাস্ত উপভোগ করতে পারছেন। কিন্তু সন্ধ্যার পর আবাসিকে রুম না পাওয়ায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে তাদের।
তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়নের ব্রহ্মতোল গ্রামের স্থানীয় মকসেদুল ইসলামের আম-লিচু বাগানে বেশ কয়েকজন পর্যটক তাঁবু টাঙিয়ে রাত-যাপন করছেন। তারা জানান, কাঞ্চনজঙ্ঘাসহ এ অঞ্চলের দর্শনীয় স্থানসমূহ আমাদের খুব মুগ্ধ করেছে। তবে দুঃখের বিষয় এখানে আবাসিকে কোনো রুম না থাকায় গ্রামে গিয়ে তাঁবু টাঙিয়ে রাতযাপন করে ভোরে কাঞ্চনজঙ্ঘা উপভোগ করেছি।
জানা যায়, তেঁতুলিয়ায় বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে ইএসডিওর মহানন্দা কটেজ, দোয়েল আবাসিক, কাজী ব্রাদার্স, কাঞ্চনজঙ্ঘা, হোটেল সীমান্তের পাড়, স্বপ্ন গেস্ট হাউস উল্লেখযোগ্য। এছাড়া জেলা পরিষদ ডাকবাংলোর বেরং কমপ্লেক্স, আরডিআরএস, জনস্বাস্থ্য ও অফিসার্স ক্লাবে পর্যটকদের আবাসন ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। তবে পর্যটনের এই সময়ে এসব আবাসন অপ্রতুল। আবাসিক হোটেলে রুম না পেয়ে আশপাশের বাসা বাড়িতে রাত্রিযাপন করতে হচ্ছে ভ্রমণ-পিপাসুদের।
আবাসিক হোটেল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি অক্টোবর থেকেই হোটেলে পর্যটকদের বুকিং পাচ্ছি। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে আসার খবর দিয়ে ট্যুরিস্টরা হোটেল বুকিং দিয়ে রাখছেন। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে প্রচুর সমাগম হয়ে থাকে। যার কারণে কেউ কেউ বুকিং দিতে পারছেন না। তাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যারা হোটেল বুকিং ছাড়া আসছেন, তাদের রাত্রি যাপনে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে।
চাঁদপুর থেকে আসা বিসিএস শিক্ষা কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন সাগর, ব্যাংককর্মী সুমন বিশ্বাস, সহকারী শিক্ষক কাদের খান বলেন, বাংলাদেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় এমন খবরে আমরা গতকাল ছুটে এসেছি। এসে আবাসিক হোটেলগুলোতে কোনো রুম পাইনি। তবে দেশের উত্তরে এমন সুন্দর জেলা থাকতে পারে তা না আসলে হয়তো বুঝতেই পারতাম না। এখানে টি পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট চা বাগান মালিকরা যদি এখানে চা বাগানেই পর্যটকদের থাকার পরিবেশ তৈরি করতে পারেন, তাহলে এ অঞ্চল পর্যটনে আরও সমৃদ্ধ হবে।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক সেলিনা পারভীন, নারগিস জাহান, ইমরুল কাওসারসহ কয়েকজন বলেন, কাছ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় শুনে তেঁতুলিয়ায় ছুটে এসেছি। এসে ভালো লাগছে। আনন্দ পেয়েছি। কিন্তু এখানে আবাসনের খুবই সংকট। রুমের রেটও খুব বেশি। আরও আবাসিক হোটেল বাড়ালে ভালো হতো।
পঞ্চগড় ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের অফিসার ইনচার্জ সিরাজুল ইসলাম জানান, এখন পঞ্চগড়ে পর্যটনের সময়। হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটছে। আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রয়েছি। পর্যটন স্পটগুলোতে আমাদের টহল জোরদার করেছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, হেমন্ত ঋতুতে কাছ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোম্গ্ধুকর রূপ উপভোগ করতে পর্যটকের আগমনে মুখর হয়ে উঠেছে তেঁতুলিয়া। পর্যটকদের কথা চিন্তা করে আমরা ডাকবাংলোয় থাকার ব্যবস্থা করেছি। ওয়াচ টাওয়ার, ওয়াকওয়েসহ বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা নির্মাণ করেছি। আবাসন সংকট আছে সত্যি, তবে দিন দিন আবাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠছে। ইতোমধ্যে জেলা পরিষদ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃক নতুন দুটি রেস্টহাউস নির্মাণ করা হয়েছে। বেসরকারি উদ্যোগেও নতুন হোটেল ও রেস্ট হাউস নির্মাণের কাজ চলমান আছে। আমরা পর্যটন শিল্প নিয়ে কাজ করছি। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশাসন তৎপর রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।