রঞ্জু খন্দকার, গাইবান্ধা থেকে : গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কুমারগাড়ী গ্রামের বিউটি বেগম এবার ৯ শতক জমিতে খিরার আবাদ করেন। রোজায় প্রতি মণ খিরা এবার তিনি ৮ শ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। এভাবে প্রায় দেড় মাস ধরে অন্তত ৩০ মণ খিরা বিক্রি করেন তিনি।
জমি বর্গা দিয়ে ৯ শতক জমি থেকে বিউটি অর্ধেক হিস্যা পেয়ে ১০ হাজার টাকা আয় করেছেন। এই টাকা আয় করতে বিউটির ব্যয় ছিল মাত্র শ পাঁচেক টাকা।
কুমারগাড়ীর পাশেই গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ডুমুরগাছা গ্রাম। এখানকার নুরুল আমিন ৫ শতক জমিতে বাঙ্গির আবাদ করেছেন। প্রতিটি বাঙ্গি বিক্রি করছেন ৩০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ৫ হাজারের মতো টাকার বাঙ্গি বিক্রি করেছেন তিনি। খেতে আরও বাঙ্গি আছে।
এই বাঙ্গিখেতে নুরুল মাত্র ২০ টাকার বীজ ছিঁটিয়েছিলেন। আর চাষবাস করেছেন গতর খেটে। জমির মালিককে অর্ধেক দিয়ে ২০ টাকা বিনিয়োগ করে নুরুল আয় করেছেন প্রায় আড়াই হাজার টাকা।
খিরা ও বাঙ্গি বিক্রি করে এভাবে লাভের মুখ দেখেছেন গাইবান্ধার আরও অনেকে। এতে এসব খেতের চাষির মুখে দেখা দিয়েছে তৃপ্তির হাসি।
বিউটি ও নুরুল বলেন, অল্প জমিতে আবাদ করেও তাঁরা টাকার মুখ ভালোই দেখলেন। ফাল্গুন, চৈত্রের কড়াক্রান্তির সময়েও পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে পারলেন।
কয়েকজন কৃষক জানান, গাইবান্ধার এই অঞ্চলে মাঠের পর মাঠ শুধু ধানচাষ হয়। সবজিসহ ফলের চাষ খুব কম। এবার কয়েকজন কৃষক অল্প করে জমিতে খিরা, বাঙ্গি চাষ করেন। তাঁদের প্রত্যেকেই ভালো লাভ করেছেন।
কুমারগাড়ীর শাহারুল ইসলাম বলেন, তিনি বর্গা নেওয়া জমিতে খিরা চাষ করেছিলেন। রোজার শুরুতেই খিরাও ওঠা শুরু করেছে। ইফতারে খিরার চাহিদা ছিল বেশ। ফলে এবার খিরার দাম ভালো পাওয়া গেছে।
কুমারগাড়ীর ছাতিয়ানতলা বাজারে ডুমুরগাছাসহ আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষের আনাগোনা। তাঁদের কয়েকজন বলেন, খিরার পর এখন বাজারে বাঙ্গিও উঠছে খুব। বিক্রিও হচ্ছে দেদার। মানুষ মৌসুমী ফল কিনে খাচ্ছে।
পলাশবাড়ীর বালাবামুনিয়া গ্রামের স্বপন সরকার ছাতিয়ানতলা বাজারে বলেন, এখন বাঙ্গির সিজন। এটা পুষ্টিকর ফল। তিনি প্রায়ই পরিবারের জন্য বাঙ্গি কিনছেন।
এই এলাকায় সবচেয়ে বড় ব্যবসাকেন্দ্র গোবিন্দগঞ্জের নাকাইহাট। এখানকার আড়তে আশপাশের দুই উপজেলার কয়েক গ্রামের মানুষ পাইকারি বিক্রি করেন। সেখান থেকে বিভিন্ন বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন দোকানিরা।
নাকাইহাটে নিয়মিত খিরা বিক্রি করেছেন পাটোয়া গ্রামের হায়দার আলী। তিনি বলেন, এবার পাইকারিভাবে খিরা বিক্রি করেও তিনি অনেক লাভ করেছেন। খিরা তুলে সে জমিতে এখন তিনি কচুর আবাদ করেছেন।
বাঙ্গি চাষ করে লাভের মুখ দেখা শ্যামল সরকার বলেন, গত ১৫ দিনে যত বাঙ্গি বিক্রি করেছেন, তাতেই খরচ উঠে লাভের মুখও দেখেছেন। খেতে আরও যত বাঙ্গি আছে তা মাসখানেক বিক্রি করা যাবে।
গাইবান্ধার আহমদ উদ্দিন শাহ শিশু নিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক আহসান হাবীব মণ্ডল বলেন, মাঘের শেষ ও ফাল্গুনের শুরুতে বোরো ধান রোপনের পর এই এলাকায় মাঠে তেমন কোনো অর্থকড়ি ফসল থাকে না। ফলে গ্রামীন অর্থনীতি এক ধরনের থমকে দাঁড়ায়। কিন্তু খিরা, বাঙ্গির মতো কিছু অর্থকড়ি ফলের চাষ সেই স্থবিরতা জমতে দেয় না। অর্থনীতি সচল রাখে। এটা পুরো দেশের জন্যই ইতিবাচক। তা ছাড়া এসব মৌসুমী ফল খেলে শরীরে পুষ্টির চাহিদাও পূরণ হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।