জুমবাংলা ডেস্ক: চিকিৎসা দেয়ার নামে প্রতারণা, জালিয়াতি, রোগী হয়রানি, অতিরিক্ত বিল, ভুয়া সার্টিফিকেট প্রদানসহ বিভিন্নভাবে ফেঁসে যাচ্ছে দেশের অনেক হাসপাতাল। প্রায় একই অবস্থা খুলনার বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকেও। খবর ইউএনবি’র।
জেলা প্রশাসনের আওতায় নিবন্ধনহীন ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর পরই জানা গেলো খুলনায় প্রায় ৭০ শতাংশই হাসপাতাল-ক্লিনিকের নিবন্ধন নেই।
হাসপাতাল মালিকদের দাবি, ২০১৮ সাল থেকে নিবন্ধন ও নবায়ন ফি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া নিবন্ধন নবায়নের ক্ষমতা বিভাগীয় পর্যায় থেকে সরিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে দেয়া হয়। সেখানে অনলাইনে আবেদনের পর তা দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার কারণে তারা নিবন্ধন নবায়ন করতে পারেননি।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রাশেদা সুলতানা জানান, খুলনা বিভাগের ১০টি জেলায় হাসপাতাল-ক্লিনিক রয়েছে ৬৮২টি। যার মধ্যে নিবন্ধন নবায়ন করা হয়েছে ৪৬৩টির এবং নবায়ন নেই ২১৯টির।
অপরদিকে, ৮৭০টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে নিবন্ধন নবায়ন করা হয়েছে ৫৩৬টির এবং নিবন্ধন নবায়ন করা হয়নি ৩৩৪টির।
ওই তালিকা অনুযায়ী, ২০১৮ সালের পর থেকে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর ও ঝিনাইদহে ১৬১টি ক্লিনিকের নিবন্ধন নবায়ন করা হয়নি। এইসব এলাকায় অনিবন্ধিত ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে (যাদের নিবন্ধন নবায়ন হয়নি) ১৯২টি। সরকারি কাগজ-কলমে এ চিত্র থাকলেও বাস্তব অবস্থা আরও ভয়াবহ।
এদিকে, দিনের পর দিন প্রশাসনের নাকের ডগায় ভয়াবহ এই অব্যবস্থাপনা থাকলেও এতদিনে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তবে দেশজুড়ে হাসপাতাল ক্লিনিকের অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন উঠলে খুলনায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন।
গত ১৬ জুলাই অনিবন্ধিত হাসপাতাল ক্লিনিকের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন অভিযান শুরু করার পর থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে। এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক নার্স না থাকা, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও কাগজপত্র না থাকায় নগরীর খানজাহান আলী রোডের মীম নার্সিং হোম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
খুলনা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সেটু কুমার বড়ুয়া জানান, ক্লিনিকটিতে সার্বক্ষণিক কোনো চিকিৎসক বা নার্স নেই। হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী (আয়া) নার্সের পোশাক পরে চিকিৎসা দেয়। চারপাশে স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ, অনেকটা গোডাউনের মতো।
‘মেডিকেল প্রাকটিস এবং বেসরকারি ক্লিনিক ও ল্যাবরেটরি (নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ, ১৯৮২’-এর বিধি অনুযায়ী ৫ দিনের মধ্যে এখানে চিকিৎসাধীন রোগীদের অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
জানা যায়, খুলনা জেলায় বর্তমানে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে ৫ শতাধিক। এর মধ্যে নিবন্ধিত হাসপাতাল ১১০টি।
বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) দপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. মঞ্জুরুল মুরশিদ বলেন, শুধু খুলনা নগরীতে ১৬০টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। যার মধ্যে মাত্র ২০টি প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নবায়ন করা রয়েছে।
নবায়নের ক্ষেত্রে নানা জটিলতায় বিভাগে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় এক হাজার হাসপাতাল-ক্লিনিকের মধ্যে ৩শ’টির মতো প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নবায়ন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের খুলনা বিভাগীয় সভাপতি ডা. গাজী মিজানুর রহমান জানান, ২০১৮ সাল থেকে নিবন্ধন ও নবায়ন ফি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি করা হয়েছে। বেসরকারি মেডিকেল কলেজে, ডায়াগনস্টিক প্যাথলজির নিবন্ধন ও নবায়ন ফি প্রায় ৪০ গুন বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এছাড়া নিবন্ধন নবায়নের ক্ষমতা বিভাগীয় পর্যায় থেকে সরিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানে অনলাইনে আবেদনের পর তা দীর্ঘদিন ঝুলে থাকে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সারাদেশের হাসপাতাল ক্লিনিকের চাপ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিতে পারে না উল্লেখ করে ডা. গাজী মিজানুর রহমান বলেন, ‘এ কারণে ২০১৮ সালের পর থেকে খুলনার ৭০ শতাংশ হাসপাতাল ক্লিনিকের নিবন্ধন নবায়ন করা যায়নি।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।