জুমবাংলা ডেস্ক: উপকূলীয় জেলা খুলনা ও সাতক্ষীরার ৬ উপজেলার প্রায় একশ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় উদ্বেগ ও উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন উপকূলের প্রায় ১০ লাখ মানুষ। বিশেষ করে চিংড়ি ও আমন চাষীদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এ বাঁধ।
চলতি বর্ষা মৌসুমে নতুন করে যেসব এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে সেগুলো হলো- খুলনা জেলার কয়রা, বটিয়াঘাটা, দাকোপ, পাইকগাছা সাতক্ষীরার আশাশুনি, শ্যামনগর উপজেলা। বাঁধ সংষ্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) প্রকল্প জমা দিলেও প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ হচ্ছে না। যে কারণে পূর্বের ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধে সংস্কার সময়মত শেষ করা যায়নি। এর মধ্যে নতুন ভাঙন দুঃশ্চিন্তায় ফেলেছে তাদের।
খুলনা জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় বলা হয়- খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার শিয়ালীডাঙ্গা এলাকায় ভাঙন কবলিত বাঁধে সংষ্কার কাজে স্থানীয় জনগন বাঁধা দিচ্ছে। তাদের দাবি নতুন করে বাঁধ নির্মান। এ সংকট দ্রুত সমাধান না হলে বিকল্প বাঁধ ও অবকাঠামো নির্মান করা সম্ভব হবে না। একই উপজেলায় কচুবুনিয়া, বরুইতলা ও বারোআড়িয়ায় বাঁধ ভেঙে যে কোন সময় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে। পাইকগাছা উপজেলার ২২ নম্বর পোল্ডারের কালিনগরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। কয়রা উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি ইউনিয়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ।
কয়রা সদর ও মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া বাঁধে বড় আকারে ভাঙন দেখা দিয়েছে। দাকোপ উপজেলার ২৭টি পয়েন্ট খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে আন্দারমানিক এলাকার মানুষ আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। এ উপজেলার ৩২ ও ৩৩ নম্বর পোল্ডারে বাঁধ সমূহের নির্মান কাজ ধীর গতিতে এগোচ্ছে। চালনা পৌরসভাকে নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষার জন্য জাইকার অর্থায়নে ‘ডিজাস্টার রিক্স ম্যানেজমেন্ট ইনহান্সমেন্ট’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে।
খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলিয়া এলাকা পরিদর্শনে গেলে সেখানকার ঋষি পরিবারের মানুষ ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি তোলেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনা-২ এর উপ সহকারি প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী জানান, বটিয়াঘাটা উপজেলার আমিরপুর ও বালিয়াডাঙ্গা এলাকায় ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পাইকগাছা উপজেলার ঋষি পরিবারকে রক্ষা করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলায় ৫৫ কিলোমিটার টেকসই বেড়ি বাঁধ নির্মানের জন্য জাতীয় সংসদে দাবি উত্থাপন করেছেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী সরকার এখানে টেকসই বেড়ি বাঁধ নির্মানে শীঘ্রই অর্থ বরাদ্দ দেবেন।
সূত্র অনুযায়ি, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১ ও ২ এর আওতাধীন আশাশুনি উপজেলার জেলেখালী, দয়ারঘাট, কেয়ারগাতি, চাকলা, বিছট, হরিষখালী, চাকলা, কুড়িকাহুনিয়া, কাকবাসিয়া, কোলা, হাজারাখালী, ঘোলা ত্রিমোহনী, হিজলিয়া, চন্ডিতলা ও বুধহাটার তেঁতুলতলা, দেবহাটা উপজেলার সুশীলগাতী, চরকোমরপুর, খারাট, টাউনশ্রীপুর, ভাতশালা এবং শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর, গাবুরা, কাশিমাড়ি, বুড়িগোয়ালিনী, মুন্সিগঞ্জ ও রমজাননগর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে পাউবো’র বেড়ি বাঁধে মারাত্মক ভাঙন দেখা দিয়েছে।
ওই সব এলাকার জনপ্রতিনিধিরা অভিযোগ করেছেন, শুষ্ক মৌসুমে ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়ায় বর্ষা মৌসুমে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। পাউবো বর্ষা মৌসুমে এসে কিছু এলাকায় জোড়াতালি দেওয়া চেষ্টা করছে। যা কোন কাজে আসছে না বলে জনপ্রতিনিধিদেও অভিযোগ। তাদের দাবী স্থায়িভাবে টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা না হলে এলাকা বসাবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের পিবিএ’কে জানান, ১০টি পয়েন্টে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বেড়ি বাঁধের পরিমাণ প্রায় আট কিলোমিটার এবং ঝুঁকিপূর্ণ ৩০ কিলোমিটারের মতো।
তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এসব বেড়ি বাঁধ মেরামতের জন্য সম্প্রতি ২ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ দ্রুত সংস্কারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান খান পিবিএ’কে জানান, তার বিভাগের আওতায় ৪২০ কিলোমিটার বেড়ি বাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৬০টি পয়েন্টে ১২ কিলোমিটার অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এবং প্রায় ২০০ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
তিনি বলেন, ভাঙনকবলিত ৩৪টি পয়েন্টে বাঁধ সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যে ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। যা দিয়ে পূর্বে ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধের সংস্কার কাজ সম্ভব নয়। এর মধ্যে নতুন করে বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়কে অবহিত করা হয়েছে। সূত্র: পিবিএ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।