জুমবাংলা ডেস্ক : শীতের সকালের মিষ্টি খেজুরের রস। খেজুর রস সংগ্রহের সেই ঐতিহ্যবাহী দৃশ্যের দেখা মিলছে নাটোরে। এখানকার গাছিরা দুপুরের পর থেকে গাছ চেঁছে মাটির শূন্য হাঁড়ি ঝুলিয়ে দিচ্ছেন। পরদিন ভোর থেকেই খেজুর রস সংগ্রহ এবং গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এই অঞ্চলের খেজুরের রস থেকে তৈরি গুড়ও বেশ প্রসিদ্ধ, যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
নলডাঙ্গার গাছি, রায়হান হোসেন,আরশেদ আলী বলেন, যদিও আগের মতো শত শত খেজুর গাছের সারি আর দেখা যায় না। এরপরও যে গাছ আছে শীতের শুরুতে গাছিরা সেই গাছগুলো প্রস্তুত করতে শুরু করেছেন।
গাছিরা হাতে দা নিয়ে ও কোমরে দড়ি বেঁধে খেজুর গাছে উঠে নিপুণ হাতে গাছের ছাল তোলা ও নলি বসানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এখন থেকে শুরু হবে রস সংগ্রহের প্রতিযোগিতা। অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ এই তিন মাস খেজুর গাছ থেকে রস আহরণ আর গুড় তৈরিতে ব্যস্ত থাকতে হয় গাছিদের। গাছগুলো থেকে আহরণকৃত রস নিজ বাড়িতে আগুনে জাল দিয়ে সে গুড় বা লালি তৈরি করে পরে তা বাজরে বিক্রয় করা হয়।
স্থানীয়রা বলেন, অনভিজ্ঞ গাছিরা গাছ কাটার সময় ভুল করাই অনেক গাছ মরেও যাচ্ছে। তাই এখন আর আগের মতো খেজুর গাছ দেখা যায় না। ফলে এক সময় খেঁজুর রসের যে সমারহ ছিল তা অধিকাংশ কমে গেছে। শীতের সকালে ছোট বড় সকলেই রসের জন্য ভিড় জমাত।
শীতের আগমনের সাথে খেজুরের রসের নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। দুপুরের পর থেকেই গাছিরা খেজুর গাছ চেঁছে ঝুলিয়ে দেন শূন্য মাটির হাঁড়ি। সারারাত ফোঁটায় ফোঁটায় ভরে উঠে সেই হাড়ি। পরদিন ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই গাছিরা সংগ্রহ করেন প্রকৃতির এই অন্যন্য উপাদান। পরে রসভর্তি পাত্র নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন তারা।
সংগ্রহ করা রস চুলার উত্তপ্ত আগুনে ফুটিয়ে টানা কয়েক ঘণ্টার পরিশ্রমে তৈরি করা হয় গুড়। এ ছাড়াও খেজুর রসের ক্ষীর, পায়েস, পিঠাপুলিসহ নানান ধরনের খাবারে আত্মীয়স্বজনকে আপ্যায়ন করা গ্রামবাংলার চিরাচরিত রেওয়াজ। এখানের খেজুর রস থেকে তৈরি ভেজালমুক্ত গুড় মানসম্মত ও সুস্বাদু হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। প্রতি কেজি গুড় বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকা দরে। তবে খেজুর গুড়ে ভেজালের অভিযোগ পুরোনো। তাই গুণগতমান ঠিক রাখতে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি রাখার দাবি গাছিদের।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ জানান, উত্তরের জেলা নাটোরে প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে আছে ৬ লক্ষাধিক খেজুর গাছ। শীত মৌসুমে ৭৫ দিনে এসব গাছ থেকে উৎপাদন হবে প্রায় ১০ হাজার টনের বেশি খেজুর গুড়। যার বাজারমূল্য প্রায় শতকোটি টাকা।
নাটোরের জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞা বলেন, নাটোরের খেজুর রস থেকে তৈরি গুড়ের ঐহিত্য রক্ষায় নজরদারি ও তৎপরতা অব্যাহত আছে। গুনে ও মানে অনন্য হওয়ায় এখানে উৎপাদিত খেজুর গুড়ের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে বলেও জানান তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।