একসময়ের জমজমাট আখাউড়া স্থলবন্দর যেন হঠাৎ থমকে গিয়েছিল। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি যখন চারদিকে উত্তাল ‘জুলাই আন্দোলন’ ঠিক তখনই স্তব্ধ হয়ে যায় এ সীমান্ত বন্দরের প্রাণচাঞ্চল্য। ভারত-বাংলাদেশ সংযোগের গুরুত্বপূর্ণ এই প্রবেশপথ দিয়ে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আমদানি হয়নি কোনো পণ্য। কাঁটাতারের ওপারে বাজারে কড়াকড়ি আর এপারে ব্যবসায়ীদের মুখে চিন্তার রেখা। কিন্তু গল্পটা থেমে থাকেনি।
নতুন বছরের সূর্য যখন উঠেছে, বন্দরের পালে লেগেছে নতুন হাওয়া। আমদানির চাকায় আবার গতি আসে পরবর্তী ছয় মাসে। যদিও ‘জুলাই আন্দোলন’-এর ছায়া রপ্তানিতেও পড়েছিল—বিশেষ করে আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে।
পণ্য যাওয়া কমে যায় আশঙ্কাজনক হারে। তবে নভেম্বর থেকে মে—এই সাত মাসে বন্দরের রপ্তানিকাজ পুরোদমে চলেছে। যদিও জুনে গিয়ে কিছুটা ভাটা পড়ে সেই উৎসবে।
তবু শেষ হাসিটা যেন হেসেছে রপ্তানি বাণিজ্যই।
আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছে ৪৪ হাজার ৩২২.০৯ মেট্রিক টন পণ্য, যার বাজারমূল্য ৫১৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে। আর আগের বছর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৫৪ হাজার ৪৪২.২২ মেট্রিক টন, যার আর্থিক মূল্য ছিল ৪২৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। হিসাব বলছে, পরিমাণে কিছু কম হলেও মূল্যে ৮৭ কোটি টাকার বেশি রপ্তানি হয়েছে সর্বশেষ বছরটিতে। এর পেছনে বড় ভরসা বাংলাদেশি মাছ। দেশি মাছই বাজিমাত করেছে এপারের বাণিজ্যে।
সর্বশেষ অর্থবছরে আখাউড়া বন্দর দিয়ে রপ্তানি করা পণ্যের মধ্যে মাছই ছিল সেরা, যার বাজারমূল্য প্রায় ২৯৬ কোটি টাকা। মানে একা মাছই সামলেছে মোট রপ্তানির প্রায় ৫৮ শতাংশ দায়ভার। তবে ভ্রমণ খাতে এমন সাফল্যের গল্প নেই। ভারতীয় ভিসা জটিলতা ও সীমিত অনুমোদনের কারণে পারাপার হওয়া যাত্রীর সংখ্যা কমে গেছে মারাত্মকভাবে। যাত্রী কর দ্বিগুণ করলেও রাজস্বে তার প্রতিফলন পড়েনি তেমনভাবে।
এদিকে বন্দরের আমদানি চিত্র থেকে দেখায় যায়, সর্বশেষ অর্থবছরে ছয় মাস ও এর আগের অর্থবছরের দুই মাস কোনো ধরনের পণ্য আমদানি হয়নি। তবে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে ওই দুই বছরের তুলনামূলক চিত্র প্রায় কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি থেকে জুন নাগাদ মাত্র ১৫৮.৯১ মেট্রিক টন পণ্য রপ্তানি হয়, যার মূল্য সাত কোটি ৩১ লাখ ৮২ হাজার ৭৫৯ টাকা। পণ্য আমদানি থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে চার কোটি ১৬ লাখ ৮৪ হাজার ৬১৯ টাকা। এর আগের অর্থবছরে ৩৮ হাজার ৭৮৩.৫ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়। এর মূল্য ছিল সাত কোটি ৫২ হাজার ২০৩ টাকা, যার বিপরীতে রাজস্ব আয় হয়েছে চার কোটি ৬৮ লাখ ৮৩ হাজার ৫৪৬ টাকা। যাত্রী পারাপারে ভ্রমণ কর থেকে সর্বশেষ অর্থবছরে আয় হয়েছে ছয় কোটি এক লাখ ৭০ হাজার টাকা। মোট যাত্রী পারাপার হয়েছে এক লাখ ৯৬১ জন। এর আগের অর্থবছরে যাত্রী পারাপার হয় দুই লাখ পাঁচ হাজার ২১ জন। ভ্রমণ কর বাবদ আয় হয় ১৩ কোটি ৯১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।