মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অন্যতম ক্ষতিকারক রাসায়নিক উপাদান সিসা। সিসাদূষণের কারণে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ার পাশাপাশি মৃত্যুও হয়ে থাকে। নীরব ঘাতক সিসার প্রভাবে শুধু একবিংশ শতাব্দীর মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, রোমান সাম্রাজ্যজুড়ে মানুষের বুদ্ধিমত্তা কমে গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ডেজার্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা।
এক গবেষণায় আর্কটিক অঞ্চলের বরফে সংরক্ষিত রোমান সাম্রাজ্যের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণের তথ্য পর্যালোচনা করে সিসাদূষণের প্রমাণ পেয়েছেন তাঁরা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেসে এ গবেষণার তথ্যাদি প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণার জন্য খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০ থেকে ৬০০ খ্রিষ্টাব্দের আর্কটিকের সিসাদূষণের মাত্রা চিহ্নিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। সেই সময় রোমান সাম্রাজ্যের পতনের মধ্যে রোমান প্রজাতন্ত্রের উত্থান ঘটতে থাকে। সিসার আইসোটোপ বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা দূষণের সম্ভাব্য উৎস হিসেবে ইউরোপজুড়ে বিভিন্ন খনিকে চিহ্নিত করেন। উন্নত কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করে ইউরোপজুড়ে বায়ুমণ্ডলীয় সিসাদূষণের মানচিত্রও তৈরি করেছেন তাঁরা।
এসব তথ্য পর্যালোচনা করে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, সিসাদূষণের কারণে সে সময় ইউরোপে বসবাসকারীদের বুদ্ধিমত্তা কমপক্ষে ২ থেকে ৩ পয়েন্ট কমে গিয়েছিল। গবেষণার বিষয়ে বিজ্ঞানী জো ম্যাককনেল বলেন, ‘প্রথমবারের মতো বরফের মধ্য থেকে দূষণের রেকর্ড গ্রহণ করেছি আমরা। বায়ুমণ্ডলে দূষণের উপস্থিতি ও মানুষের ওপর প্রভাব মূল্যায়ন করেছি। দুই হাজার বছর আগের তথ্য বের করা বেশ অভিনব ও উত্তেজনাপূর্ণ।’
বর্তমানে আইস কোর ল্যাবরেটরিতে গ্রিনল্যান্ড ও অ্যান্টার্কটিকা থেকে বরফ এনে পরীক্ষা করা হচ্ছে। এরপর হাজার বছর ধরে তৈরি হওয়া বরফকে বিশ্লেষণ করছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, বরফের মধ্যে আটকে থাকা গ্যাসের বুদ্বুদ অতীতের বায়ুমণ্ডলের তথ্যাদি ধারণ করে। সেই বুদ্বুদ থেকে সিসাদূষণের তথ্য জানা সম্ভব। আর তাই বিশাল ড্রিল ব্যবহার করে বিভিন্ন এলাকার প্রায় ১১ হাজার ফুট নিচে থাকা বরফের কলাম সংগ্রহ করা হয়েছে।
প্রাচীনকালে সিসাদূষণের প্রধান কারণ ছিল বিভিন্ন রুপার খনি। তখন সিসাসমৃদ্ধ খনিজ ‘গ্যালেনা’ রুপা আহরণের সময় সংগ্রহ করা হতো। প্রতি আউন্স রুপার জন্য হাজার হাজার আউন্স সিসা সংগ্রহ করা হতো। পরে তা ফেলে দেওয়া হতো। এর ফলে উচ্চ মাত্রার সিসাদূষণের কারণে বন্ধ্যত্ব, রক্তশূন্যতা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, কার্ডিওভাসকুলার রোগ ও ক্যানসারের প্রকোপ বাড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, বায়ুমণ্ডলীয় সিসাদূষণ লৌহ যুগে শুরু হয়েছিল। রোমান প্রজাতন্ত্রের সময় খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকের শেষের দিকে সেই দূষণ শীর্ষে পৌঁছেছিল।
নতুন এ গবেষণার বিষয়ে ইতিহাসবিদ অ্যান্ড্রু উইলসন বলেন, গবেষণায় সিসাদূষণের রেকর্ড জানা গেছে। পর্যায়ক্রমে প্লেগ ও অন্যান্য মহামারির তথ্যাদি সুনির্দিষ্টভাবে জানার সুযোগ আসছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।