কোরবানির মাংস দিয়ে সুস্বাদু অনেক খাবার তৈরি করা হয়। সেসব খাবার থেকে লোভ সামলে রাখা মুশকিল। অনেকে ক্ষতিকর মনে করে গরুর মাংস খেতে ভয় পান। আসলেই কি গরুর মাংস ক্ষতিকর? গরুর মাংসে আছে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় নয়টি পুষ্টি উপাদান। সেগুলো হলো প্রোটিন, জিঙ্ক, ভিটামিন বি১২, সেলেনিয়াম, আয়রন, রিবোফ্লেভিন, ফসফরাস, নায়াসিন এবং ভিটামিন বি৬। এসব উপাদান নেতিয়ে পড়া বা দুর্বল শরীরকে চাঙা করে। স্বাস্থ্যসম্মতভাবে গরুর মাংস রান্না করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানিয়েছেন ডায়েট কনসালট্যান্ট তাসনিম আশিক।
তিনি বলেন, গরুর মাংস বা খাসির মাংস যেটাই আমরা রান্না করি না কেন, অনেকেই চিন্তা করেন কতটুকু ভাল দিক রয়েছে আর কতটুকু খারাপ দিক রয়েছে।প্রতিটা খাবারেই কিন্তু কিছু ভালো দিক এবং খারাপ দিক রয়েছে। কিংবা কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে।
তাসনিম আশিক বলেন, ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে ২৬ গ্রামের মতো প্রোটিন ও ২ গ্রামের মতো ফ্যাট থাকে। ভিটামিনের একটি ভালো উৎস গরুর মাংস।ভিটামিনের পাশাপাশি প্রচুর খনিজ উপাদান, মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার গরুর মাংস।
গরুর মাংস কিংবা খাসির মাংস, আমরা যেটাই বলি, কিছুটা ফ্যাট রয়েছে।এজন্য চর্বি কেটে ফেলে দিয়ে, সলিড মাংসটা রান্না করে খাব।চর্বির অংশটা কেটে ফেলে দিয়ে খেলে, স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকাংশে কমে আসবে।এছাড়াও বেশকিছু প্রয়োজনীয় পুষ্টি আমরা গরুর মাংসে পাচ্ছি।
আয়রন আমরা গরুর মাংস থেকে পাচ্ছি।এর জন্য আমরা ফ্যাট যুক্ত, চর্বিযুক্ত মাংস কেটে ফেলে দিয়ে, সলিড মাংস রান্না করব। আবার অনেকের ক্ষেত্রে ডাক্তারের নির্দেশনা রয়েছে। সেজন্য যতটুকু প্রোটিন তিনি নিতে পারেন, ততটুকুই তিনি নিবেন।
গরুর মাংস খাওয়ার উপকারিতা
শিশুর বৃদ্ধিতে সহায়ক
গরুর মাংস খেলে তা আমাদের বুদ্ধি-বৃত্তিক গঠন, শারীরিক বর্ধন ও রক্ত বর্ধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ৮৫ গ্রাম গরুর মাংসে ৯-১৩ বছর বয়সী শিশুর দৈনিক চাহিদার ১২৫ শতাংশ ভিটামিন বি১২, ৯০ শতাংশ প্রোটিন, ৩২ শতাংশ আয়রন, ২৯ শতাংশ নায়াসিন, ৭৪ শতাংশ জিঙ্ক, ৪২ শতাংশ সেলেনিয়াম, ৩২ শতাংশ ভিটামিন বি৬, ২৩ শতাংশ রিবোফ্লেভিন এবং ১৬ শতাংশ ফসফরাস থাকে।
খনিজের অভাব দূর করে
শরীরে খনিজের অভাবে সৃষ্ট অসুখ-বিসুখ দূর করতে কাজ করে গরুর মাংস। কারণ এটি খনিজ লবণের দুর্দান্ত উৎস। গরুর মাংসে থাকে জিংক, ফসফরাস, সেলেনিয়াম এবং প্রচুর লৌহ। এই মাংস ভিটামিনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। গরুর মাংস ভিটামিন বি-৩, বি-৬, বি-১২ ইত্যাদি ভিটামিনের জোগান দেয়।
প্রোটিনের ভালো উৎস
গরুর মাংস প্রোটিনের ভালো উৎস। মাংস ছাড়াও হাড়, কলিজা, মগজ ইত্যাদি থেকে মেলে প্রোটিন। এই প্রোটিন থেকে পাওয়া অ্যামাইনো এসিড কাজে লাগে হাড় ও মাংসপেশি ভালো রাখতে। প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে পাওয়া যায় ২২.৬ গ্রাম প্রোটিন।
জিংকের ঘাটতি দূর করে
আমাদের সুস্থতার জন্য জিংক একটি জরুরি উপাদান। এটি আমাদের শরীরের কোষ ভালো রাখে এবং বাড়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। ৮৫ গ্রাম গরুর মাংস খেলে তা দৈনিক জিংকের ৩৯ শতাংশ পূরণ করে।
গরুর মাংস খাওয়ার অপকারিতা
কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি বাড়ায়
অনেকে অতিরিক্ত গরুর মাংস খেয়ে ফেলেন। এতে বাড়ে কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে পরবর্তীতে আরও বড় অসুখ দেখা দিতে পারে। তাই অতিরিক্ত গরুর মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। গরুর মাংসের সঙ্গে নানা ধরনের সবজি মিলিয়ে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া যাবে।
কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি
অতিরিক্ত গরুর মাংস খাওয়া মোটেও উপকারী নয়। তাই খেতে যতই ভালো লাগুক, গরুর মাংস খেতে হবে পরিমিত। চিকিৎসকদের মতে, সপ্তাহে পাঁচ বেলা গরু, খাসি কিংবা ভেড়ার মাংস খেলে বাড়ে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি। সেইসঙ্গে প্রক্রিয়াজাত লাল মাংস খেলে তা মৃত্যু ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়।
হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি
আপনি হয়তো জেনে থাকবেন, গরুর মাংস খেলে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। কারণ এতে থাকা অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ রক্তচাপ সৃষ্টিতে বা বাড়াতে কাজ করে সোডিয়াম। তাই গরুর মাংস খেলে হতে পারে উচ্চ রক্তচাপ। সেখান থেকে দেখা দেয় হৃদরোগ ও স্ট্রোকের মতো সমস্যা।
কতটুকু গরুর মাংস খেতে পারবেন?
দৈনিক গরুর মাংস খেতে পারবেন ৮৫ গ্রাম। ৮৫ গ্রাম চর্বি ছাড়া গরুর মাংস খেলে তা আপনার দৈনিক ক্যালোরির চাহিদার ১০ শতাংশ পূরণ করবে। রান্না করা ৩ টুকরা মাংসে ৮৫ গ্রাম হয়, তাই চেষ্টা করুন দিনে ৩ টুকরার বেশি মাংস না খেতে। যদি একবারে আরও বেশি মাংস খেয়ে ফেলার ভয় থাকে তবে সপ্তাহে দুইদিনের বেশি গরুর মাংস না খাওয়াই ভালো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।