আন্তর্জাতিক ডেস্ক : “প্রতিটি সফল পুরুষের পেছনে একজন মহিলার অবদান থাকে”, এই উক্তিটি আমাদের সমাজে অত্যন্ত প্ৰচলিত। তবে, এই উক্তিটির সত্যতাই আরও একবার প্রমাণ করে দেখালেন এক দম্পতি। যাঁদের সফলতার কাহিনি হার মানাবে সিনেমার চিত্রনাট্যকেও। মূলত, বিহারের জামুই জেলার বাসিন্দা জিতেন্দ্র শার্দুল এবং তাঁর স্ত্রী সঞ্জনা কুমারী তাঁদের কর্মকান্ডের মাধ্যমে সমাজে এক বিরল নজির তৈরি করেছেন।
জানা গিয়েছে, দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা জিতেন্দ্রকে তাঁর স্ত্রী সঞ্জনা কুমারী বাপেরবাড়ি থেকে পাওয়া গয়না এবং বাসনপত্র বিক্রি করে পড়াশোনায় সাহায্য করেন। এখন জিতেন্দ্র সরকারি স্কুলের শিক্ষক। অন্যদিকে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এখন সরকারি চাকরি করছেন সঞ্জনাও। আর এই দম্পতির সংগ্রামের কাহিনিই এখন উঠে এসেছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
জানা গিয়েছে, ২০০২ সালে সঞ্জনা ম্যাট্রিক পাশ করা জিতেন্দ্রকে বিবাহ করেন। তখন জিতেন্দ্র ছিলেন অত্যন্ত গরিব এবং কর্মহীন। এদিকে, সঞ্জনার বাবা মুঙ্গেরে ইলেকট্রিসিটি ডিপার্টমেন্টে লাইন ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁর কোনো ছেলে ছিল না। তিনি জিতেন্দ্র শার্দুলকে তাঁর ঘর জামাই হয়ে থাকতে বলেছিলেন। কিন্তু জিতেন্দ্র তাঁর শ্বশুরমশাইয়ের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে নিজে থেকে কিছু করে দেখাতে চেয়েছিলেন।।
এই প্রসঙ্গে জিতেন্দ্র জানান “আমি যখন হাইস্কুলে পড়ি, তখন আমার বাবা দুর্ঘটনায় মারা যান। এরপর আমাদের পরিবার আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যেতে থাকে। তখন আমি আমার পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে সংসারের জন্য শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করি। কিন্তু পড়াশোনা করতে না পারার আক্ষেপ মনের মধ্যেই থেকে যায়। সঞ্জনাকে বিয়ে করার পর সে আমাকে অনেক শক্তি দিয়েছে।”
উল্লেখ্য যে, বিয়ের সময় সঞ্জনা সবে হাইস্কুল পাশ করেছিলেন। এদিকে, বিয়ের পর জিতেন্দ্রর পরিবারের সদস্যরা জিতেন্দ্রকে শ্রমিকের কাজ করতে বলতেন। কিন্তু জিতেন্দ্র চাইতেন পড়াশোনা করতে। এমতাবস্থায় স্বামীকে পড়াতে নিজের সমস্ত গয়না বিক্রি করে দেন সঞ্জনা। এমনকি বাপেরবাড়ি থেকে পাওয়া কিছু তামা-পিতলের বাসনও বিক্রি করেদেন তিনি। জিতেন্দ্রও কঠোর পরিশ্রম করে পড়াশোনা চালিয়ে যান।
প্রথমে জিতেন্দ্র শিক্ষক হন, তারপর সঞ্জনাও চাকরি পান: কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে শেষে সফল হন জিতেন্দ্র। ২০০৭ সালে, তিনি সরকারি স্কুলের শিক্ষক হন। বর্তমানে জামুই ব্লকের কল্যাণপুর মিডল স্কুলে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন তিনি। অন্যদিকে, সঞ্জনাও তাঁর পড়াশোনা চালিয়ে যান এবং কঠোর পরিশ্রমের ভিত্তিতে ২০১৪ সালে একটি সরকারি চাকরি পেতে সক্ষম হন।
উল্লেখ্য যে, জিতেন্দ্র এবং সঞ্জনা ইনস্টাগ্রামে রিল তৈরি করে তাঁদের এই লড়াইয়ের কথা ভাগ করে নেন। অন্যদিকে, সরকারি স্কুলে শিশুদের পাঠদানের অভিনব স্টাইলের কারণে জিতেন্দ্রও উঠে এসেছেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তাঁদের লড়াইয়ের দিনগুলির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে দম্পতি জানান, “অনেক সময় বাড়িতে রান্নার জ্বালানি থাকত না। রাস্তার ওপর ফেলে দেওয়া চপ্পল ও প্লাস্টিকের সাহায্যে উনুন জ্বালিয়ে মা খাবার রান্না করতেন। তখনই আমরা খাবার পেতাম।” পাশাপাশি, জিতেন্দ্র জানান যে, “এমন একটি সময় এসেছিল যখন বাড়িতে খাওয়ার মতো পর্যাপ্ত খাবার ছিল না। সঞ্জনা আমাকে খাবার দিয়ে নিজে কিছু না খেয়ে ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমোতে যেত। অনেক কঠিন সময় পার করে আমরা এখানে পৌঁছেছি।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।