রঞ্জু খন্দকার, গাইবান্ধা থেকে: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধায় বিভিন্ন প্রার্থীর প্রচারণায় ভোটের মাঠে জোরেশোরে নেমে কাজ করছেন নারী কর্মীরা। তাঁরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিশেষ করে নারী ভোটারদের দলে টানার চেষ্টা করছেন।
এই নারী কর্মীদের ভাষ্য, ঘর ঠিক থাকলে বর ঠিক, সঙ্গে সবই ঠিক থাকবে। তাই তাঁদের প্রধান টার্গেট নারী ভোটাররা। নারীদের ভোট পেতে তাঁরা ঘরে ঘরে ঢুঁ মারা থেকে শুরু করে উঠান বৈঠক, পোস্টার, প্রচারপত্র বিতরণ থেকে শুরু করে মিছিল, স্লোগানও দিচ্ছেন।
গাইবান্ধা সদর উপজেলা দেশের ৩০ নম্বর সংসদীয় আসন। এটি গাইবান্ধা-২ নামে পরিচিত। এখানে মোট ভোট ৩ লাখ ৮১ হাজার ৯৭৯টি। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৮৭ হাজার ২১৪ জন, নারী ১ লাখ ৯৪ হাজার ৭৫৯ জন। অর্থাৎ এ আসনে পুরুষের চেয়ে নারীদের ভোট বেশি ৭ হাজার ৫৪৫টি।
ভোটের মাঠের নারী কর্মীরা বলছেন, এবার এ আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। ফলে নির্বাচনের ফলে প্রতিটি ভোটেরই ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে। আর এ আসনে নারীদের ভোট অনেক বেশি। ফলে প্রার্থীরা এই ভোটারদের মন পেতে মরিয়া হয়ে কাজ করছেন।
গাইবান্ধা-২ আসনে এবার আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নেই। এখানে দলটির নেতৃত্বাধীন মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্য ও তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রশীদ সরকারকে লাঙ্গল প্রতীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। জাপার সঙ্গে সারা দেশে আওয়ামী লীগের ২৬টি আসনে সমঝোতার অংশ হিসেবে এ আসনে গত তিনবারের টানা সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ মাহাবুব আরা বেগম গিনি শেষ দিনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। তবে এখানে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সদ্য পদত্যাগী চেয়ারম্যান শাহ সারোয়ার কবির স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে ট্রাক প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। একই আসনে সারোয়ারের স্ত্রী মাসুমা আক্তারসহ ৫ জন ভোট করছেন। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা আব্দুর রশিদ ও সরোয়ারের মধ্যে হবে বলে মনে করছেন নারী কর্মীরা।
দুপক্ষের কর্মীদেরই ধারণা, এ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক না থাকলেও দলটির স্বতন্ত্রপ্রার্থী লড়াইয়ে আছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয়ভাবে মহাজোটের প্রার্থীকে সমর্থন দিচ্ছে। ফলে এ আসনে ভোটের সত্যিকার লড়াই-ই হবে।
আব্দুর রশিদের কর্মীরা বলছেন, এ আসনটি মহাজোট থেকে তাঁদের প্রার্থীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে হুইপ মাহাবুব আরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। গিনির কর্মী-সমর্থকেরাও মহাজোটের প্রার্থীদের পক্ষে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। তাঁরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। বিশেষ করে নারী ভোটারদের বোঝাচ্ছেন। আব্দুর রশিদ এ আসনে তিনবার সংসদ সদস্য ছিলেন। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও ছিলেন। তিনি পরীক্ষিত। তাঁদের আশা, নারী ভোটাররা আব্দুর রশীদকেই বেছে নেবেন।
সারোয়ারের পক্ষের কর্মীরা বলছেন, তাঁদের প্রার্থী এই মুহূর্তে গাইবান্ধার জনপ্রিয় নেতাদের একজন৷ তিনি উদীয়মান। তাঁর নেতৃত্বে গাইবান্ধা অনেক দূর এগিয়ে যাবে। তাই ভোটাররা সারোয়ারকেই বেছে নেবেন। তাঁরা আরও বলেন, ভোটে লড়াইয়ের কৌশল হিসেবে সারোয়ারের স্ত্রী মাসুমাও ‘ডামি’ প্রার্থী হয়েছেন। এতে ভোটের মাঠ থেকে শুরু করে নির্বাচনকেন্দ্রেও তাঁদের ‘ডাবল’ কর্মী কাজ করার সুযোগ পাবেন। ফলে তাঁরা ভোটে এগিয়ে থাকবেন।
সম্প্রতি উপজেলা সদরের আদর্শপাড়া, থানাপাড়া, স্টেডিয়াম সড়ক, পশু হাসপাতাল, মুন্সিপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় নারী কর্মীদের দল বেঁধে প্রচার-প্রচারণা চালাতে দেখা যায়। এ সময় তাঁরা নারী ভোটারদের সঙ্গে কথা বলা থেকে শুরু করে পোস্টার-প্রচারপত্র বিতরণ করেন।
আদর্শপাড়ায় প্রচারণা চালাচ্ছিলেন সারোয়ারের কর্মীরা। তাঁদের একজন খাদিজা আক্তার।
খাদিজা বলেন, তাঁদের প্রার্থীর দীর্ঘ পারিবারিক রাজনৈতিক ঐতিহ্য রয়েছে। তাঁদের প্রার্থী জাতীয় সংসদের প্রথম স্পিকার শাহ আব্দুল হামিদের নাতি। এ দেশ তথা গাইবান্ধাবাসীকে তাঁদের অনেক দেওয়ার আছে। তাঁদের প্রার্থী নির্বাচিত হলে এ জেলাবাসী অনেক এগিয়ে যাবেন।
স্টেডিয়াম সড়কে প্রচারণা চালাতে দেখা যায় আব্দুর রশিদের কর্মীদের। তাঁদের একজন আকিদা আক্তার।
আকিদা বলেন, তাঁদের প্রার্থী জাপার গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তাঁর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। গাইবান্ধাবাসীর জন্য তিনি অনেক করেছেন। এবার মহাজোট থেকে তিনি আবার সুযোগ পেয়েছেন। নির্বাচিত হলে তিনি এই সুযোগ জনগণের স্বার্থে ব্যবহার করতে চান।
দুই প্রার্থীরই নারী কর্মীদের ভাষ্য, পুরুষ ভোটাররা দিনের বেলা সাধারণত বাড়িতে থাকেন না। কর্মস্থলে থাকেন। বেশির ভাগ নারী ভোটার বাড়িতেই থাকেন। তাই তাঁরা নারী ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। তাঁদের বুঝিয়ে নিজেদের পক্ষে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
নারী কর্মীদের দাবি, এই আসনে নারী ভোটারের সংখ্যা অনেক বেশি। আর ঘর ঠিক করলে বরও ঠিক অর্থাৎ সবই ঠিক থাকবে। তাই দৃশ্যত নারী ভোটারদের টার্গেট করলেও বৃহত্তর পরিসরে তাঁদের লক্ষ্য আসলে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব ভোটারই। এই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছেন তাঁরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।