রঞ্জু খন্দকার, গাইবান্ধা থেকে : ডুমুরজাতীয় পাতা। ডালপালা মেলে দাঁড়িয়ে আছে বেশ জায়গাজুড়ে। কত বছর ধরে, কে জানে! কেউ বলেন, দুই-আড়াইশ, কারও দাবি, শ পাঁচেক বছর তো হবেই! গাছের নামও জানেন না কেউ। তাই বলেন, অচিনগাছ।
এই ‘অচিনবৃক্ষ’ ঘিরে রয়েছে নানান রহস্য, যেটির অবস্থান গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার শালমারা গ্রামে। গাছটির নিচে সিমেন্টবাঁধানো বসার জায়গাও রয়েছে। ওপরে টিনের ছাউনি। এলাকার লোকজন জায়গাটির নাম দিয়েছে ‘অচিনতলা’। অন্য এলাকার লোকজনও ঘুরতে আসেন এখানে।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, তাঁদের দাদারাও এ গাছের বয়স কত, বলতে পারেননি। কবে, কে গাছটি রোপণ করেছে, তা-ও জানেন না তাঁরা। তবে তাঁরা শুনেছেন, চার-পাঁচ শ বছর আগে কোনো এক বন্যায় গাছটি এখানে ভেসে আসে। তারপর থেকে গাছটি একইরকম রয়েছে।
শালমারা গ্রামের সাইফুল ইসলাম গাছের নিচে মাছ ধরছিলেন। তিনি বলেন, গাছটিকে এলাকার লোকজন মান্য করে চলেন। অনেকে নানা মানত করেন। কাজ হয় কি না, সেটা মানতকারীরা বলতে পারবেন।
জনশ্রুতি আছে, এই গাছে অলৌকিক কিছু একটা আছে। প্রতিবছর বারুণীপূজার আগে গাছটির সব পাতা ঝরে যায়। এরপর আবার গজায়। গাছটির ডালপালা কেউ কাটেন না। কাটলে তাঁর অনিষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
একই গ্রামের জমিলা খাতুন গাছটির নিচে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, তাঁরা শুনেছেন, গাছটির ডাল কাটায় সেখান থেকে রক্তের ধারার মতো রস বের হয়েছিল। সেই ব্যক্তির পরিবারের লোকজনও অসুখে ভুগে মারা যায়। এরপর থেকে আর কেউ ডাল কাটার সাহস করেন না।
গোবিন্দগঞ্জের কোমরপুর এলাকা থেকে পূর্ব দিকে কয়েক কিলোমিটার এলে এই অচিনগাছের দেখা মিলবে। একই রাস্তা পলাশবাড়ীর হাসবাড়ী এলাকায় গিয়ে মিলেছে।
সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, অনেকখানি জায়গাজুড়ে দাঁড়িয়ে গাছটি। গাছের ডালে সবুজপাতা। একটু দূরে সেতু। তার নিচ দিয়ে বয়ে গেছে খাল। গাছের নিচে টিনের ছাউনির বসার জায়গা। অনেকে গাছের আশপাশে ছবি তুলছেন।
গাছের ছবি তুলছিলেন ফুলছড়ি উপজেলার কালীবাড়ি এলাকার বাসিন্দা ফারুক হোসেন। তিনি দিনাজপুরের রানীগঞ্জ এলাকায় থাকেন। এখানে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে এসেছেন। তিনি রংপুরের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তর।
ফারুক বলেন, এই অচিনবৃক্ষ ঘিরে যে লোকশ্রুতি তার সবকিছু বিশ্বাস্য নয়। এমন গাছ দেশে আরও কিছু আছে। হতে পারে গাছটি বিরল প্রজাতির। কিন্তু একেবারে ‘অচিন’ হওয়ার সুযোগ নেই। উদ্ভিদবিদেরা এটির নাম বলতে পারবেন।
একই দলে ঘুরতে এসেছিলেন পলাশবাড়ীর সুলতানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহওয়াজ কবির। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের স্নাতকোত্তর।
শাহওয়াজ গুগল ব্যবহার করে গাছটির নাম বের করার চেষ্টা করেন। সেখানে এটিকে ডুমুরজাতীয় গাছ বলে চিহ্নিত করা হয়। তবে ঠিক নামটি কী, তা জানতে পারেননি।
শিক্ষক শাহওয়াজ কবির বলেন, ডুমুরজাতীয় হওয়ায় এই গাছ থেকে রস বের হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু তা কোনোভাবে রক্তের মতো হওয়ার কথা নয়। মানুষ রহস্য পছন্দ করে। সেই রহস্যের টানে এখানে অনেকে ছুটে আসেন। গাছটি নিয়ে যে জনশ্রুতি তা, কতটা সত্য তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। বয়স কত, সেটাও বিবেচ্য নয়। এসব গাছ বাংলার ঐতিহ্য। এগুলো টিকিয়ে রাখা দরকার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।